ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কাতারকে ক্ষেপণাস্ত্র দেবে রাশিয়া

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ৪ জুন ২০১৮

কাতারকে ক্ষেপণাস্ত্র দেবে রাশিয়া

সৌদি আরবের আপত্তি সত্ত্বেও রাশিয়া কাতারের কাছে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিক্রির সিদ্ধান্ত বদলাবে না। একজন প্রভাবশালী রুশ এমপি এ মন্তব্য করেছেন। এর আগে কাতারে রুশ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করা হলে সৌদি আরবের বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ দেশটিতে হামলার হুমকি দেন। আলজাজিরা। রুশ পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষের সদস্য এবং প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা কমিটির ডেপুটি চেয়ারম্যান আলেক্সাই কান্দ্রাতিয়েভ বলেন, রাশিয়া নিজ স্বার্থেই কাতারের কাছে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিক্রির চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। সৌদি আরবের অবস্থান এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। তার বক্তব্য উদ্ধৃত করে রুশ বার্তাসংস্থা স্পুটনিক শনিবার এ খবর দিয়েছে। কান্দ্রাতিয়েভ বলেন, ‘এটি স্পষ্ট যে রিয়াদ ওই অঞ্চলে একটি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করতে চায়। অন্যদিকে কাতার রুশ এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপনের মাধ্যমে নিজেদের প্রতিরক্ষা শক্তি জোরদার করতে ইচ্ছুক। তাই সৌদি আরবের উদ্বেগের বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই বোধগম্য।’ তিনি আরও বলেন, এখানে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থও জড়িত। কারণ রাশিয়ার কারণে তাদের একটি লাভজনক ব্যবসার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে। কাতার রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা কিনলে দেশটির বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নেবে সৌদি আরব। সৌদি বাদশাহ সালমান এ বিষয়ে ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েলন ম্যাক্রোঁর কাছে চিঠি লিখেছেন বলে সেদেশের লা মঁদ পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশের একদিন পর রুশ এমপির ওই বক্তব্য প্রকাশিত হয়। ফ্রান্সের লা মঁদে পত্রিকা জানিয়েছে, ম্যাক্রোঁর কাছে লেখা চিঠিতে সালমান দোহা ও মস্কোর মধ্যে সমঝোতার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। চিঠিটি ‘সম্প্রতি’ পাঠানো হয়েছে বলে জানালেও ঠিক কবে পাঠানো হয়েছে তা নির্দিষ্ট করে বলেনি লা মঁদ। চিঠিতে কাতারের কাছে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি আটকে দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি বজায় রাখাতে সালমান ম্যাক্রোঁর সহায়তা চান। প্যারিস বা রিয়াদ চিঠির বিষয়বস্তু সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানায়নি। কাতার সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন দিচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে গত বছর দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব, মিসর, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। কাতার অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এরপর গত বছর কাতার ও রাশিয়া সামরিক ও কারিগরি সহযোগিতামূলক সমঝোতা চুক্তি করে। চলতি বছর জানুয়ারিতে রাশিয়ায় নিযুক্ত কাতারের রাষ্ট্রদূতকে উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, রাশিয়ার এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স মিসাইল সিস্টেম কেনার বিষয়ে দেশটির সঙ্গে কথা হচ্ছে তাদের। গত বছর ৫ জুন সৌদি আরবের নেতৃত্বে বাহরাইন, আরব আমিরাত ও মিসর কাতারের বিরুদ্ধে স্থল, নৌ ও আকাশ পথে অবরোধ আরোপ করে। ‘সন্ত্রাসবাদে’ সহযোগিতা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বিঘিœত করার চেষ্টার অভিযোগ এনে কাতারের বিরুদ্ধে অবরোধ আরোপ করে। কাতার অবশ্য এই অভিযোগ দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করেছে। সঙ্কট সমাধানে ১৩ দফা প্রস্তাব দেয়া হলেও কাতার এর সবকটি প্রত্যাখ্যান করে। বিভিন্ন দেশ থেকে কাতারের লোজনকে জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানো হয়। এক বছর পার হলেও কাতারের সঙ্গে প্রতিবেশী উপসাগরীয় দেশগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিক হয়নি। বরং অনলাইনে দু’পক্ষের দ্বন্দ্ব আরও তীব্র হয়েছে। উভয়পক্ষ একে অন্যের বিরুদ্ধে ভুয়া তথ্য, গুজব ছড়ানো ও হ্যাকিংয়ের মতো সাইবার আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমদিকে স্পষ্টভাবে সৌদি আরবকে সমর্থন করলেও পরবর্তী সময়ে তিনি কাতারের আমীর শেখ তামিম আসসানিকে একজন ‘ভদ্রলোক’ উল্লেখ করে বিবাদের শান্তিপূর্ণ সমাধানের ওপর জোর দেন।
×