ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসী কর্মীর জন্য বীমা

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ৪ জুন ২০১৮

প্রবাসী কর্মীর জন্য বীমা

বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশী শ্রমিক ও কর্মীদের জন্য অবশেষে বীমা করার পথ প্রশস্ত হচ্ছে। ২০১১ সাল থেকে জাতিসংঘ প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের অধিকার সংরক্ষণে জীবন বীমা (ইন্স্যুরেন্স) করার জন্য তাগিদ দিয়ে আসছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে। সম্প্রতি প্রবাসী কলাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী জেনেভায় এতদসম্পর্কিত জাতিসংঘ কনভেনশনে অনুসমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশের পক্ষে। ফলে প্রবাসী কর্মীদের নিরাপত্তায় বিভিন্ন ধরনের বীমা করার পথ সুগম হয়েছে। আরও যা আশার কথা তা হলো, এর জন্য আপাতত নতুন করে অর্থ বরাদ্দের আবশ্যকতা নেই। প্রবাসী কল্যাণ তহবিলে বিদেশে কর্মরতদেরই প্রায় ১১শ’ কোটি টাকা পড়ে আছে। বিদেশে কোন কর্মী মৃত্যুবরণ করলে আপাতত এই তহবিল থেকে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করা হয়। যা হোক, প্রবাসীদের জন্য বীমা কোম্পানি চালু করা হলে প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দুঃখ-দুর্দশা লাঘবসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আবাসনসহ নানা ক্ষেত্রে সাহায্য-সহযোগিতা করা যাবে। মনে রাখতে হবে যে, প্রবাসী কর্মী ও শ্রমজীবীরা নানা দেশে নানারকম ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছে। তাদের প্রতিনিয়ত কষ্টার্জিত অর্থেই দিন দিন সচল ও সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের হিসাব মতে, বর্তমানে প্রায় ৯৬ লাখ বাংলাদেশী অভিবাসী হিসেবে বিশ্বের ১৬০টি দেশে কর্মরত আছেন। তবে এই সংখ্যা আরও বেশি, এক কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। কেননা অনেকে বিভিন্ন দেশের নাগরিকত্ব নিয়ে বসবাস ও আয়-উপার্জন করছেন। অনেকে নিবন্ধনের বাইরেও দালাল ও মানবপাচার চক্রের খপ্পরে পড়ে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে। এর বাইরেও বিদেশের বাজারে নিত্যনতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হওয়ায় প্রতিবছর চার-পাঁচ লাখ কর্মী যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশে। বিদেশে কর্মরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রেরিত অর্থে দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হচ্ছে দিন দিন। এক হিসাবে হোম রেমিটেন্সের পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। পোশাক রফতানির পরেই এর অবস্থান। তবে সত্যি বলতে কি, প্রবাসী অভিবাসী শ্রমিক-কর্মচারীদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানসহ সামাজিক সুরক্ষার জন্য তেমন নীতিমালা ও আইন নেই। বিশেষ করে প্রতারক এজেন্সি ও দালালচক্রের খপ্পরে প্রলোভিত হয়ে যেসব পুরুষ-নারী ও শিশু জীবনের সমূহ ঝুঁকি নিয়ে পা বাড়ান বিদেশের অজানা-অচেনা গন্তব্যে, তাদের দুঃখ-কষ্ট-মানবেতর জীবন এক কথায় অবর্ণনীয়, অসহনীয়। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে চাকরি নামক সোনার হরিণের সন্ধানে এ পর্যন্ত যে কতজন প্রাণ দিয়েছেন তার হিসাব নেই সংশ্লিষ্ট দফতর ও মন্ত্রণালয়ে। অতঃপর অভিবাসী শ্রমিকদের সার্বিক নিরাপত্তা বিধানসহ যথাযোগ্য মর্যাদা দেয়ার জন্য প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নিরাপদ অভিবাসন আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে। এতে বিদেশে যেতে ইচ্ছুক কর্মীদের সঙ্গে প্রতারণা করলে ৫ বছরের জেল-জরিমানাসহ মানবপাচারের ক্ষেত্রে মৃত্যুদ-ের বিধান রাখা হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের পর আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হলে প্রবাসীদের দুর্ভোগ কমার পাশাপাশি নিরাপত্তা অনেকটা নিশ্চিত হবে বলে আশা করা যায়। প্রতারক, দালালচক্রসহ ঘৃণ্য মানবপাচারের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তির জন্য এ রকম একটি আইনের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছিল দীর্ঘদিন থেকেই। এর পাশাপাশি প্রস্তাবিত জীবনবীমা তাদের দেবে বাড়তি নিরাপত্তা। সত্য বটে, মানুষ নিতান্তই বাধ্য হয়ে পেটের দায়ে বিদেশে পাড়ি জমায়। অনেকে শেষ সহায়-সম্বল ভিটেমাটি পর্যন্ত বিক্রি করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এদের কর্মসংস্থান হয় অতি নিম্নমানের ও মজুরির। প্রতারক দালালচক্র এর চেয়ে অনেক বেশি অর্থ হাতিয়ে নেয় ভুক্তভোগীর কাছ থেকে। এক্ষেত্রে নারী ও শিশুর অবস্থান হয় আরও শোচনীয়। আর গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মহিলারা ব্যবহৃত হয়ে থাকেন ‘যৌনদাসী’ হিসেবে। সে অবস্থায় অন্তত গৃহকর্মী হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যে কোন নারী শ্রমিক প্রেরণ না করাই বাঞ্ছনীয়। এর পাশাপাশি বীমা শিল্পের আওতায় সব প্রবাসী শ্রমিক ও কর্মীকে পর্যায়ক্রমে নিয়ে আসাও বাঞ্ছনীয়।
×