ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভেজালকারীর কঠিন শাস্তি

প্রকাশিত: ০৩:৪৭, ৪ জুন ২০১৮

ভেজালকারীর কঠিন শাস্তি

পবিত্র রমজান মাসে খাদ্যে ভেজালবিরোধী যেটুকু অভিযান চলছে, তাতেই বেরিয়ে আসছে ভয়াবহ সব চিত্র। নামী-দামী চেইনশপ ও হোটেল থেকে শুরু করে প্রসিদ্ধ বাজারÑ সর্বত্র ভেজালের ছড়াছড়ি। এমনকি বিক্রি হচ্ছে বাসি, পচা এবং মেয়াদোত্তীর্ণ খাবারও। সর্বোপরি কীটনাশক ও রাসায়নিকের ঝুঁকি তো আছেই। এই অবস্থা কি চলতে দেয়া যায়? মানুষের আস্থার জায়গা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ব্রান্ড নেম বলে একটা টার্ম আছে। কোন কোম্পানির সুনাম একদিনে হয় না। কিন্তু দুঃখের বিষয় একবার সুনাম অর্জন হয়ে গেলে অধিক মুনাফার আশায় নামী-দামী প্রতিষ্ঠানগুলোই খাদ্যে ভেজাল মেশায় কিংবা খাদ্যের গুণগত মান রক্ষায় আর সচেষ্ট থাকে না। উদাহরণস্বরূপ ফখরুদ্দিনের বিরিয়ানির ওপর মানুষের অনেক আস্থা। তাই দাম বেশি হলেও এই প্রতিষ্ঠানের বিরিয়ানি মানুষ কিনে থাকে। অথচ পচা ও ছত্রাকপড়া খাবার মেশানোর অপরাধে এই প্রতিষ্ঠানকেই সেদিন ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হলো। অপরদিকে নান্দোসের মতো অভিজাত রেস্তরাঁয় মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার পাওয়া গেছে। সেখানে মাছি ও তেলাপোকার কারখানা! তাদের জরিমানা হয়েছে মাত্র দুই লাখ টাকা! সংসদের প্রশ্নোত্তর থেকে জানা যায়, বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার ভোক্তা সাধারণের মাঝে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিএসটিআইকে শক্তিশালী করেছে। এর ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে অত্যাধুনিক ল্যাব স্থাপনের সঙ্গে সঙ্গে জেলা পর্যায়ে বিএসটিআইর কার্যক্রম সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিএসটিআইর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যে অত্যাধুনিক কেমিক্যাল মেট্রোলজি ল্যাব স্থাপন, ভারতীয় অর্থায়নে খাদ্যদ্রব্য, স্বর্ণ, সিমেন্ট ও ইট পরীক্ষার জন্য অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি স্থাপন ও যন্ত্রপাতি কেনা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য ও জননিরাপত্তা বিবেচনা করে বিভিন্ন সময়ে এসআরও জারির মাধ্যমে ১৫৪টি পণ্যে বিএসটিআই থেকে পরীক্ষাপূর্বক সিএম সনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকার নাগরিকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিতের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করছে, তার বাস্তবায়নও হচ্ছে। কিন্তু অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা মনে করি খাদ্যে ভেজাল মেশানো হলে কেবল অর্থদ- বা নামকাওয়াস্তে দু-চার মাসের জেল দিয়ে কোন লাভ হবে না। যদি তাই হতো তবে একবার ভ্রাম্যমাণ আদালতে ভেজালের দায়ে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান পরে আবার একই অপরাধ করত না। আমাদের আইনেই আছে এই অপরাধের শাস্তি সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা জরিমানা ও জেল। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই পরিমাণ অর্থদ- কাউকে দেয়া হয়নি। খাদ্যে ভেজাল মেশানো গুরুতর অপরাধ। এতে মানুষের কেবল স্বাস্থ্যঝুঁকিতেই পড়তে হয় না, অনেক সময় জীবনও বিপন্ন হয়ে পড়ে। তাই খাদ্যে যারা ভেজাল মেশায় তাদের প্রতি করুণা কেন? প্রচলিত আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি দিতে কর্তৃপক্ষের এত কার্পণ্য কেন? নাগরিক সমাজে বিভিন্ন সময়ে এমন প্রস্তাব উঠেছে যে, ভেজালকারীর শাস্তি মৃত্যুদ- দেয়া হোক। বিশ্বের বহু দেশেই খাবারে ভেজাল মেশানোর অপরাধে মৃত্যুদ- দেয়ার বিধান আছে। এসব গণশত্রুকে থামাতে হলে কঠিন শাস্তি প্রদানের কোন বিকল্প নেই। আর দেরি নয়, চলতি সপ্তাহ থেকেই খাবারে ভেজাল মেশানোর অপরাধে ধৃত ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তি প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি এ সংক্রান্ত নতুন আইন করার প্রক্রিয়াও শুরু করা চাই। ভেজাল খাদ্য ও ওষুধ মানুষকে সেøা পয়জনিংয়ের মাধ্যমে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। বলা চলে আমরা প্রতিদিনই বিষ খাচ্ছি। পরিকল্পিতভাবে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এর বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধও গড়ে তুলতে হবে। আর দেরি নয়।
×