ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের এক যুগ

প্রকাশিত: ০৮:০৮, ৩ জুন ২০১৮

কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের এক যুগ

ময়নামতি সংলগ্ন লালমাই পাহাড়ের পাদদেশ ঘিরে অবস্থিত কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয় (কুবি)। দেশের ২৬তম পাবলিক বিশ^বিদ্যালয় হিসেবে ২০০৬ সালে এটি যাত্রা শুরু করে। ইতিহাস বলে, আজ থেকে প্রায় ১৩০০ বছর পূর্বে (৭ম-৮ম শতাব্দী) পৃথিবীতে জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার আঁতুড়ঘর ছিল কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ের পাদদেশের ময়নামতি শালবন বিহার। বিহার মানে বিশ^বিদ্যালয়। এখানে বিশ^মানের জ্ঞানচর্চা হতো বলেই একে বিহার নামে অভিহিত করা হয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে জ্ঞানপিপাসুরা ছুটে আসতেন তাদের জ্ঞানের ঝুলিকে সমৃদ্ধ করতে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অনতিদূরে কুমিল্লার কোটবাড়ি সংলগ্ন শালবন বৌদ্ধ বিহারের পাশে অবস্থিত এই বিদ্যাপীঠ। কুমিল্লা শহর থেকে যার অবস্থান প্রায় ১০ কি.মি. পশ্চিমে। মাত্র ৭টি বিভাগ, ১৭ জন শিক্ষক ও ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু করে। সময়ের পরিবর্তনে আজ বিশ^বিদ্যালয়ে ৬টি অনুষদে ১৯টি বিভাগে ২ শতাধিক শিক্ষক ও প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। এ্যাকাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি বিশ^বিদ্যালয়ে রয়েছে বেশকিছু প্রায়োগিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন। বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের উদ্যোগ ও বিশ^ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় আইকিউএসি (ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি এস্যুরেন্স সেল) নামক একটি প্রকল্প বিশ^বিদ্যালয়ে শিক্ষার গুণগতমান নিশ্চিত করে মানসম্মত গ্র্যাজুয়েট তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। প্রকল্প পরিচালক রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমানের পরিচালনায় বিভিন্ন সময় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের শিক্ষা মানসম্মতকরণে গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করা হয়। বিশ^বিদ্যালয়ে অন্যান্য শিক্ষামূলক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের মধ্যে রয়েছে সায়েন্স ক্লাব, আইটি সোসাইটি, থিয়েটার, প্রতিবর্তন, অনুপ্রাস, প্ল্যাটফর্ম, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট, বন্ধু, অনুস্বার ইত্যাদি। এসব সংগঠন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক ও মানসিক উন্নয়ন সাধনে ভূমিকা রাখে। এ বছর (২৮ মে) প্রতিষ্ঠার ১ যুগ (১২ বছর) পূর্ণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। নতুন হলেও এক যুগ সময় খুব কম নয়। বছর বছর বাড়ছে শিক্ষার্থীদের আগমন। তবে সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ^বিদ্যালয়ের কাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, নতুন বিশ^বিদ্যালয়ের দোহাই দিয়ে প্রশাসন আমাদেরকে অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করছেন। কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের সমবয়সী বিশ^বিদ্যালয়গুলো (জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, জাতীয় কবি কাজী নজরুল বিশ^বিদ্যালয়-ইত্যাদি) যেখানে আকাশচুম্বী ভবন ও যাবতীয় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে সেই তুলনায় আমরা ‘কিছুই’ পাচ্ছি না। প্রতিষ্ঠার এক যুগ পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কোন সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়নি বিশ^বিদ্যালয়ে। সকল বিভাগের জন্য পর্যাপ্ত ক্লাসরুম নেই। নেই কোন সেন্ট্রাল অডিটরিয়াম। সেন্ট্রাল মাঠের কাজ যেখানে অনেক আগেই শেষ হওয়ার কথা সেখানে এটি বিক্ষিপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে এখনও। বিশ^বিদ্যালয়ের পরিবহন দফতরের অবস্থাও নাজেহাল। শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ^বিদ্যালয়ের নিজস্ব বাস আছে মাত্র ৪টি। এছাড়া বিআরটিসির ভাড়া করা বাসগুলোরও ফিটিংস ঠিক নেই। ফলে মাঝে মাঝেই রাস্তাঘাটে হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেলে শিক্ষার্থীরা ভোগান্তিতে পড়েন। এরপরও শিক্ষার্থীরা এসব সমস্যা নিয়েই প্রতিদিন জমায়েত হচ্ছেন উচ্চশিক্ষার এই দ্বারে। নেপাল থেকে আসা বিদেশী শিক্ষার্থী মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ^বিদ্যালয়ের অপরূপ সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। তবে আশানুরূপ সুযোগ-সুবিধা তেমন কিছুই পাচ্ছি না। প্রশাসনের কাছে আমাদের চাওয়া থাকবে যাতে তারা ক্যাম্পাসের উন্নতির দিকে যাতে সুনজর দেয়।’ একই সুরে বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী উম্মে কুলসুম বলেন, ‘অন্যান্য বিশ^বিদ্যালয়ের তুলনায় আমরা অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আমরা চাই বিশ^বিদ্যালয়ের সব ধরনের অপ্রতুলতা পূরণ করে বিশ^বিদ্যালয়কে এগিয়ে নিতে প্রশাসন সচেষ্ট হবে।’ বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এমরান কবির চৌধুরী। নতুন উপাচার্যের কাছে তাই বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের অনেক প্রত্যাশা। উপাচার্যও আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে বিশ^বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নতি বিধানের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। আমি স্বপ্নবাজ মানুষ। এই বিশ^বিদ্যালয়কে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। সেসবের বাস্তব রূপ দিতে আমি সচেষ্ট হবো। তবে আমি একা তা পারব না। বিশ^বিদ্যালয়ের সকলের সহযোগিতায় আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে সার্থক হব বলে মনে করি।’ মাহফুজ কিশোর
×