ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রতিবন্ধী বালককে ধর্ষক সাজিয়ে দেড় লাখ টাকা নিয়ে বাড়িছাড়ার হুমকি

প্রকাশিত: ০৭:০৩, ৩ জুন ২০১৮

প্রতিবন্ধী বালককে ধর্ষক সাজিয়ে দেড় লাখ টাকা নিয়ে বাড়িছাড়ার হুমকি

সংবাদদাতা, বেলকুচি, সিরাজগঞ্জ, ২ জুন ॥ এনায়েতপুর থানার খুকনী যুগিবাড়ি গ্রামের সংখ্যলঘু অসহায় এক বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী বালককে ধর্ষক সাজিয়ে তার তাঁত শ্রমিক পিতার কাছ থেকে দেড়লাখ টাকা হাতিয়ে নেবার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় একটি চক্রের বিরুদ্ধে। মিথ্যা নাটক সাজিয়ে রাত দেড়টার সময় কয়েক প্রতারক তার পিতা শুকুমার চাকীকে ধরে বেদম মারধর করে টাকা আদায় করতে তাৎক্ষণাৎ বাড়ির গাভী পর্যন্ত সস্তায় বিক্রি করতে বাধ্য করিয়েছে। শুধু তাই নয়, ৩শ’ টাকার সাদা স্ট্যাম্পে টিপসই রেখে দিয়ে আগামী ১ মাসের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার হুমকি দিয়েছে তারা। বিষয়টি নিয়ে দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা তো দূরের কথা প্রতিনিয়ত নিরাপত্তা হীনতায় দিন কাটছে তাদের। ঘটনাটি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছে সাধারণ জনতা। নির্যাতিত পরিবার ও এলাকাবাসী জানান, গত বুধবার বেলা ১১টার দিকে এলাকার রাস্তায় দরিদ্র তাঁত শ্রমিক শুকুমার চাকীর ছোট ছেলে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী নিতাই চাকী (১২) আম খাচ্ছিল। তখন একটি কুকুরকে দেখে ঢিল ছুড়লে কুকুরটি তেড়ে আসে। তখন সে দৌড় দিলে এলাকার মনি হোসেনের স্কুল পড়ুয়া শিশু কন্যার সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তখন মেয়েটি কাঁদতে থাকলে তার স্বজনেরা ছেলেটিকে ধরে এনে বেদম মারধর করে। তখন তার মা ও বাবা ছেলের প্রাণ ভিক্ষা চাইলে তাদেরও লাঠি দিয়ে মারধর করে। পরে বিকেলে মুমূর্ষু অবস্থায় তার ছেলেকে এনায়েতপুর জনতা ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়া হয়। এরই প্রেক্ষিতে ঐদিন রাতে মেয়েটির চাচা সোনালী হোসেন, স্থানীয় মাতব্বর এলাকার হাসেম আলী, হিরা খা, খুকনী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদ সদস্য মোখলেছুর রহমান মোকবেল মিলে শুকুমার চাকীকে হাসপাতাল থেকে ছেলেটিকে বাড়ি আনতে হুমকি দেয়। রাত দেড়টার দিকে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি এলে শুকুমারকে পাশের একটি বাড়িতে আটকে রাখা হয়। তখন ঐ মাতব্বররা কৌশলে সহযোগী সুলতান, নাজিম, আনোয়ার, নায়েব আলী, আবুসামা মিলে আবারও মারধর করে। শুকুমার চাকী অভিযোগ করে জানান, সে সময় তারা বলে তোর ছেলে ধর্ষণ করেছে। মিথ্যা সাজানো বললে আরও মারধর করে পরিবারের সবাইকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে ৩ লাখ টাকা দাবি করে ১ লাখ টাকা নগদসহ প্রায় ৭০ হাজার টাকার দুটি গাভী মাত্র ৪৬ হাজার টাকায় বিক্রি করে রাতেই দেড়লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ৩শ’ টাকার সাদা স্ট্যাম্পে তার টিপসই করে নেয় এলাকার মাতব্বররূপী সন্ত্রাসীরা। অসহায় শুকুমার চাকী জানান, আমি বার বার তাদের হাত-পা ধরে বলেছি আমার ছেলে ১০/২০ টাকার নোট পর্যন্ত চেনে না, সে পাগল। সেকি এমন কাজ দিনেদুপুরে করতে পারে? মেয়েটিও নাবালক। মেয়ের বাবাকে মেয়েকে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে মেম্বর- চেয়ারম্যানদের দিয়ে শালিস করব। এভাবে না। তারা বলে আমরাই সব। আমাদের কথা না শুনলে তোর পরিবারের সবাইকে হত্যা করব বলে দেড়লাখ টাকা নিয়ে নেয়। আমরা এখন কি করব? আমাদের কি রক্ষা করার কেউ নেই? আমাকে তারা এও বলেছে আগামী এক মাসের মধ্যে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবার জন্য। এখন কি হবে। মামলা ও অভিযোগ করব তারা মেরে ফেলবে। হিন্দু বলে কি আমাদের বাড়ি, আমাদের দেশে থাকতে পারব না। এদিকে সরজমিনে শুকুমারের বাড়িতে গেলে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। তার আহত স্ত্রী আশা রাণী ও ছেলে নিতাইয়ের পুরো শরীর জুড়ে আঘাত। তারা দুজনেই যন্ত্রণায় কাতর। এ নিয়ে আশা রাণীরও আক্ষেপের শেষ নেই। আর ছেলেটি তো এখন বাকরুদ্ধ। তখন প্রতিবেশী শ্রীবাস মোদক, গোপাল হোসেন, শাহীন রেজাসহ কয়েক প্রবীণ ব্যক্তি জানান, ধর্ষণের এ ঘটনা সম্পূর্ণ সাজানো। আমরা সবাই জানি এলাকার একটি চক্র নিরীহ এই পরিবারকে ভিটেছাড়া করতে তার কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। শিশুটি ও তার বাবা এ রকম কোন অভিযোগ কারো কাছে করেনি। আমরা এর যথাযথ তদন্তপূর্বক বিচার চাই। শুকুমারের পরিবারকে নির্যাতনকারী হাসেম আলী, মোকবেল হোসেনের বাড়ি গেলে তাদের পাওয়া যায়নি। তবে হিরা খাঁ জানান, আমরা এলাকায় শান্তির লক্ষ্যে বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছি। এর বাইরে কোন কিছু হয়নি। মারধর ও টাকা হাতিয়ে নেবার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
×