ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঠাকুরগাঁওয়ে বেইলি ব্রিজ সংস্কার না হওয়ায় দুর্ভোগ

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ৩ জুন ২০১৮

ঠাকুরগাঁওয়ে বেইলি ব্রিজ সংস্কার না হওয়ায় দুর্ভোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ২ জুন ॥ অতিরিক্ত কয়লাবোঝাই ট্রাক পারাপারের সময় ঠাকুরগাঁও জেলা শহর সংলগ্ন সেনুয়া বেইলি ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ার পর ছয় মাস অতিবাহিত হয়েছে। দীর্ঘদিনেও ব্রিজটি মেরামত কিংবা পুনঃনির্মাণ করা হয়নি। এর ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ব্রিজের উত্তরপাশের চল্লিশ গ্রামের শতশত বাসিন্দা। শহরের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এলাকার কৃষকরা। তাদের কৃষিপণ্য নিয়ে ২০ কিলোমিটার রাস্তা ঘুরে শহরে ঢুকতে হচ্ছে। স্থায়ী সেতু নির্মিত না হওয়ায় আসন্ন বর্ষায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন অভিভাবকরা। ঠাকুরগাঁও-ফাঁড়াবাড়ি সড়কের সেনুয়া নদীর ওপর অবস্থিত সেনুয়া বেইলি ব্রিজটি গত বছরের ৮ ডিসেম্বর ভেঙ্গে পড়ে। ছয় মাস অতিবাহিত হলেও ব্রিজটি সংস্কার না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ছয় ইউনিয়নের লাখো মানুষ। ঠাকুরগাঁও শহর হতে উত্তরের সালন্দর, আকচা, রাজাগাঁও, ঢোলারহাট, বড়গাঁও, দেবীপুর ইউনিয়নে যাতায়াতের একমাত্র সড়ক ঠাকুরগাঁও-ফাঁড়াবাড়ি সড়ক। এ সড়কের বরুনাগাঁও এলাকায় সেনুয়া নদীর ওপর অবস্থিত বেইলি ব্রিজটি অতিরিক্ত মাল পরিবহন করার সময় সেতুটি ভেঙ্গে পড়ে। এখনও স্টিলের এই ভেঙ্গে পড়া সেতুটি ঝুলে আছে। স্থানীয়রা জানান, একটি চক্র রাতের আঁধারে প্রায় প্রতিদিন ব্রিজের নাট-বল্টুসহ অন্যান্য লোহার যন্ত্রাংশ খুলে নিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া আইন অমান্য করে অতিরিক্ত মালপরিবহন করে যে ব্যক্তির কারণে ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়েছে তার বিরুদ্ধে কোন আইনী ব্যবস্থা নেয়া হলো না। ম্যানেজ হয়ে যাওয়ায় এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের যেন কোন মাথা ব্যথাই নেই। কর্তৃপক্ষের দাবি, সেতুর উভয় পাশে লাল অক্ষরে ‘সাবধান, ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, গাড়ি চলাচল নিষিদ্ধ’ লেখা সাইনবোর্ড সাঁটানোর পরও বিধিনিষেধ না মানায় এ ঘটনা ঘটেছে। ব্রিজটি দেখভালের জন্য সার্বক্ষণিক লোক নিয়োজিত রাখা সম্ভব না হওয়ায় কিছু দুষ্টুচক্র সুযোগ নিতেই পারে। তবে সেখানে নতুন ব্রিজ নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর তাৎক্ষণিকভাবে ভেঙ্গে পড়া বেইলি ব্রিজের পাশে বিকল্প রাস্তা ও একটি কাঠের সাঁকো নির্মাণ করে দিয়েছে। বর্তমানে ওই বিকল্প রাস্তা ও সাঁকো দিয়ে প্রত্যহ হাজার হাজার মানুষ, মোটরসাইকেল, সাইকেল, রিক্সা, ভ্যান, অটোচার্জার ও থ্রি হুইলারসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। তবে প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষজনসহ স্কুল-কলেজ ও অফিস আদালতে যাওয়ার সময় এখানে ভিড় লেগে যায়। কাঠের এই সাঁকো দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করতে না পারায় ওই ছয় ইউনিয়নের কৃষকরা উৎপাদিত পণ্য নিয়ে পড়েছেন মহাবিপাকে। এলাকার একমাত্র সড়কের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় কৃষকরা উৎপাদিত কৃষিপণ্য সহজে বাজারজাত করতে পারছে না। অন্যদিকে সড়ক দিয়ে ঘুরে শহরে আসতে অতিরিক্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা ঘুড়তে হচ্ছে। এতে সময়ের পাশাপাশি অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ও হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা রিয়াজুল, বাদশা, আজাদ জানান, আসন্ন বর্ষায় নদীর পানি বেড়ে গেলে কাঠের ব্রিজটি তলিয়ে যাবে। ওই সময় ব্রিজের উত্তর পাশের বাসিন্দাদের শহরে যাতায়াত করতে চরম ভোগান্তিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওইসব এলাকার দুই শতাধিক শিক্ষার্থী শহরের সিএম আইয়ুব বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী বালক উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারী কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করে। বর্ষার সময় শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগের কথা ভেবে অভিভাবকরা চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী কান্তেশ্বর বর্মন জানান, অতিরিক্ত মালবোঝাই ট্রাক পরিবহনের কারণে ব্রিজটি ভেঙ্গে পড়ে। এলজিইডি পথচারীদের দুর্ভোগ লাঘবে তাৎক্ষণিকভাবে একটি বিকল্প রাস্তাসহ কাঠের বেইলি ব্রিজ নির্মাণ করে দেয়। এছাড়াও সেখানে স্থায়ী একটি কংক্রিটের ব্রিজ নির্মাণের জন্য এলজিইডি সকল প্রকার কার্যক্রম শেষ করেছে। তিন কোটি টাকার প্রাক্কলিত ব্যয় ধরে টেন্ডার আহ্বান শেষে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়েছে। আগামী এক বছরের মধ্যে ব্রিজটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে যোগাযোগ সমস্যার সমাধান হবে।
×