ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

পাঁচ বছরেও নেই অগ্রগতি

মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ঠাকুরগাঁও চিনিকলের আধুনিকায়ন কার্যক্রম

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ৩ জুন ২০১৮

মুখ থুবড়ে পড়ে আছে ঠাকুরগাঁও চিনিকলের আধুনিকায়ন কার্যক্রম

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ১ জুন ॥ ঠাকুরগাঁও চিনিকল আধুনিকায়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও ঠিকাদারই নিয়োগ হয়নি। এর ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে কোন অগ্রগতি হয়নি। ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বেঁধে দেয়া হলেও কাজের কোন অগ্রগতি না থাকায় প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়িয়ে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছিল। কিন্তু নির্ধারিত ওই সময় পার হতে চললেও ঠিকাদার নিয়োগ জটিলতা নিরসন করতে পারেনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন (বিএসএফআইসি)। অবশেষে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক দফা বাড়ানো হয়েছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের একেবারে শুরুর দিকে একনেক সভায় অনুমোদন দেয়া হয় ঠাকুরগাঁও চিনিকলের আধুনিকায়ন প্রকল্পের কাজ। প্রথম দফায় প্রকল্পের ব্যয় ১০১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ধরা হয়। পরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১১ কোটি ১০ লাখ টাকায়। এ হিসাবে প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। বিএসএফআইসি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রথমে প্রকল্পের কাজের যে পরিধি ছিল পরে নতুন কম্পোনেন্ট যোগ হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে। কিন্তু সময় ও ব্যয় বাড়ানো হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এখনো শুরুই হয়নি। তবে ঠিকাদার নিয়োগে চলতি বছরের ১৯ এপ্রিল তৃতীয় দফায় দুটি দরপত্র আহ্বান করে বিএসএফআইসি। ২১ ও ২২ মে দরপত্র খোলার দিন নির্ধারণ করাছিল। প্রকল্পের কারিগরি মূল্যায়ন কমিটির (টিইসি) সভায় দরপত্রে অংশগ্রহণকারীদের দেয়া প্রস্তাব পর্যালোচনা করা হবে। ওই পর্যালোচনা শেষে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। এ দফায়ও উপযুক্ত ঠিকাদার পাওয়া না গেলে প্রকল্পের স্টিয়ারিং কমিটি (পিএসসি) এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণ করবে। এ ব্যাপারে প্রকল্প পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার এসএম আবদুর রশিদ জানান, ঠিকাদার নিয়োগের পর প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে। আমরা আশা করছি, শীঘ্রই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করতে পারব। প্রকল্পের মেয়াদ ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে বলেও জানান তিনি। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়োগে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম দফায় এবং নবেম্বরে দ্বিতীয় দফায় আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করেছিল বিএসএফআইসি। কিন্তু উপযুক্ত ঠিকাদার না পাওয়ায় কার্যাদেশ দেয়া হয়নি। মূলত চীন ও ভারতের পরিবর্তে ইউরোপের প্রযুক্তি ও মেশিনারিজের মাধ্যমে চিনিকলটির আধুনিকায়নসহ প্রকল্পের অন্যান্য কার্যক্রম সম্পন্ন করতে চায় বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানটি। কিন্তু দরপত্রে সেভাবে সাড়া মিলছে না। প্রকল্পের উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে, উৎপাদন বহুমুখীকরণের মাধ্যমে চিনির পাশাপাশি রিফাইন্ড সুগার, বিট সুগার, রেকটিফাইড স্পিরিট, বায়োগ্যাস ও বায়ো-কম্পোস্ট উৎপাদনের মাধ্যমে মিলটিকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুত উৎপাদন। উৎপাদিত বিদ্যুতে মিলের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা। চিনিকলের প্রেসমাড ও ইথানলের বর্জ্য থেকে জৈব সার হিসাবে বায়ো-কম্পোস্ট উৎপাদন, জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে বায়োগ্যাস ও আখের ছোবড়া ব্যবহার করে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের মাধ্যমে জ্বালানি ব্যয় সাশ্রয় ও কার্বন নিঃসরণ কমানো। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে যে সব সুফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, মিলের আয় বৃদ্ধি হবে। আমদানিকৃত ‘র’ সুগার হতে রিফাইন্ড সুগার উৎপাদন করে চিনির চাহিদা আংশিক পূরণ ও চিনির উৎপাদন ব্যয় কমবে। এছাড়া সারা বছর মিলটি উৎপাদনমুখী থাকবে এতে উৎপাদনশীলতা বাড়বে। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে এবং প্রকল্প এলাকার আর্থিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। ঠাকুরগাঁও চিনিকল সূত্রে জানা যায়, ১৯৫৮ সালে ঠাকুরগাঁও সদরে ঠাকুরগাঁও চিনিকলটি স্থাপিত হয়। প্রথমে মিলটির আখ মাড়াই ক্ষমতা ছিল ১ হাজার টন। ১৯৬৬ সালে সম্প্রসারণের মাধ্যমে মাড়াই ক্ষমতা ১ হাজার ৫২৪ টনে উন্নীত করা হয়। পরে ১৯৮৩ থেকে ৯২ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে কিছু নতুন যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়। কিন্তু ব্যাপক হারে আধুনিকায়ন না করার কারণে বর্তমানে চিনিকলটির অধিকাংশ যন্ত্রপাতি জরাজীর্ণ ও ক্ষয়প্রাপ্ত অবস্থায় রয়েছে।
×