ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসবের অর্থনীতি

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ২ জুন ২০১৮

উৎসবের অর্থনীতি

ঈদকে ঘিরে ক্রমশ চাঙ্গা হয়ে উঠছে দেশের অর্থনীতি। জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও এর অবদান কম নয়। আরও যা আশার কথা, এর পরিমাণ বাড়ছে দিন দিন। অবশ্য বিষয়টি যে একেবারে নতুন তা নয়। হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে, বাঙালীর জীবনে দৈনন্দিন অর্থনীতির চাকা সচল হয়ে ওঠে প্রধানত যে কোন ধর্মীয় উৎসবকে ঘিরেই, তা সে হোক না কেন কোন ধর্মীয় অথবা সাংস্কৃতিক উৎসব। এই যেমন, ঈদ, পূজা, বাংলা নববর্ষ, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ইত্যাদি। তবে তা সবচেয়ে সচল, সবল, সরব ও স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে ওঠে প্রধানত ঈদ-উল ফিতর এবং ঈদ-উল আযজাকে ঘিরেই। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ ও পশিমবঙ্গে দুর্গাপূজা উপলক্ষে। তবে সবার ওপরে রয়েছে ঈদ-উল ফিতর, অন্তত বাংলাদেশে। এক সময়ে ঈদের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নতুন জামা, নতুন জুতো। বঙ্গ ললনার ক্ষেত্রে তা ছিল শাড়ি। তবে এখন যুগ ও সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের চাহিদা ও রুচির ধারণা বদলেছে। এসেছে ফ্যাশন দুরস্ত কাপড়-চোপড়, সালোয়ার কামিজ, বাহারি শাড়ি ও হেজাব, রকমারি জুতো, প্রসাধন সামগ্রী, গহনা ইত্যাদি। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও আজকাল সর্বদাই হাল ফ্যাশনের অনুষঙ্গ খোঁজে পোশাক-পরিচ্ছেদের ক্ষেত্রে, এমনকি শিশুরাও বাদ যায় না। আর এ তো শুধু পোশাক-পরিচ্ছদেই সীমাবদ্ধ নেই। একই সঙ্গে চাই ঘরের সাজসজ্জা, আসবাবপত্র, ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী, টিভি, ফ্রিজ, এসি, গহনাগাটি, এমনকি হাল মডেলের গাড়ি পর্যন্ত। মানুষ এখন রীতিমতো আধুনিক ও দুরস্ত হয়ে উঠেছে। প্রচলিত ইফতার পার্টি এখন ঠেকেছে সেহরি পার্টিতে। মধ্যরাতের পর পরিবার পরিজন বন্ধুবান্ধব নিয়ে রাতের বেলা বাইরে গিয়ে ফুর্তি করে খাওয়া-দাওয়া আর কী! আবহমানকাল থেকেই ঈদ কিংবা পূজা উপলক্ষে বাঙালীর নাড়ির টানে ঘরে ফেরার প্রবল আগ্রহ ছিলই। এখন সে ঈদের ছুটিতে বাড়ি না গিয়ে সপরিবারে বেড়াতেও যায়Ñ কক্সবাজার, কুয়াকাটা, কলকাতা, ব্যাংকক, হংকং, সিঙ্গাপুর এমনকি ইউরোপ-আমেরিকা পর্যন্ত। এবার তো লঞ্চ স্টিমার-ট্রেন-বাসের পাশাপাশি আকাশপথেও টিকেটের হাহাকার লক্ষ্য করা গেছে। অনেকেই দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া সত্ত্বেও বিমানের টিকেট পেতে ব্যর্থ হয়েছেন, এমন খবরও মিলেছে। বলতেই হয় অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও প্রবৃদ্ধির জন্য এসবই শুভ লক্ষণ। এত বিপুল ব্যয় ও অর্থ খরচের পেছনে মূল নিয়ামক হিসেবে যেটি কাজ করেছে তা হলো ইতোমধ্যে মানুষের আয়-উপার্জন বেড়েছে বহুগুণ। সরকারী, আধা সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা, উৎসবভাতা বেড়েছে। বেড়েছে প্রবাসী আয়, জাতীয় প্রবৃদ্ধির হারও যথেষ্ট আশাব্যঞ্জক সাত শতাংশের ওপরে। বেড়েছে মাথাপিছু আয়। দেশ এখন স্বল্প আয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্য আয়ের দেশে উন্নত হওয়ার পথে ধাবমান। ছোট-বড় ব্যবসা-বাণিজ্যও বেড়েছে বহুগুণ। মানুষের মধ্যে জেগেছে কর্মস্পৃহা। সে এখন আয়-উপার্জন বাড়াতে ইচ্ছুক। এসবই যুক্ত হচ্ছে উৎসবের অর্থনীতিতে। ফলে গ্রাম ও শহরের অর্থনীতির পাশাপাশি চাঙ্গা হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতিও।
×