ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সবার ওপরে আত্মমর্যাদা

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২ জুন ২০১৮

সবার ওপরে আত্মমর্যাদা

সদ্য বিদায়ী মে মাসে দুটি সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত প্রধানমন্ত্রীর সামগ্রিক বক্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বিবিধ কারণে। বিদেশ সফরের পর রীতি অনুযায়ী জনসাধারণকে স্পষ্ট ধারণা দেয়া, বলা যায় সম্যক অবহিত করানোর জননেত্রীসুলভ দায়বোধ থেকেই এমন সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন। মে মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব ও অস্ট্রেলিয়া- তিনটি রাষ্ট্র সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। প্রধানমন্ত্রীকে যথেষ্ট আশাবাদী ও আত্মবিশ্বাসী বলেই প্রতীয়মান হয়েছিল। আর মে-র একেবারে শেষ প্রান্তে এসে গত বুধবার ভারত সফর সমাপ্তির পর আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের সম্পর্কের বাস্তবতা, চলমান মাদকবিরোধী জোরালো অভিযান এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে জাতি সন্তুষ্ট ও আশাবাদী হওয়ার মতো অনেক উপাদান পাবে। এক্ষেত্রে স্বীকার করতেই হবে যে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে তাঁর আত্মমর্যাদাবোধ এবং আত্মপর্যালোচনার কাক্সিক্ষত দুটি ইতিবাচক দিক আরও একবার দেশের মানুষের কাছে স্বচ্ছ হলো। মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আত্মবিশ্বাস ও দূরদর্শী মানস মানুষের কাছে আরও একবার স্পষ্ট হয়ে উঠবে। তিনি মাদকের বিরুদ্ধে তাঁর সরকারের কঠোর ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, যে যত প্রভাবশালীই হোক না কেন, কে গফডাদার কিংবা ডন বা বাহিনীর লোক- জড়িত কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। কে কার ভাই, কার আত্মীয় সেটি দেখা হবে না। আমি যখন যা ধরি, ভাল করেই ধরি। আর এ অভিযানে নিরীহ কেউ হয়রানির শিকার হয়নি।’ মাদকবিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে নিরীহ মানুষ মারা পড়েছে, এমন অভিযোগের জবাবে তাঁর বক্তব্য দেশবাসীকে আশ্বস্ত করবে। একই সঙ্গে রাঘব বোয়াল অপরাধীদের ব্যাপারে সরকারের যে পৃথক কোনো নীতি নেই, তারাও যে ছাড় পাবে না, সেই বার্তাটি তিনি বেশ ভালভাবেই দিয়ে গেলেন তাঁর বক্তব্যে। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বাংলাদেশের মাটি ব্যবহারের সুযোগ রহিত করা এবং ট্রাক ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান আটকে দেয়াসহ বিপুলসংখ্যক গোলাবারুদ উদ্ধারের ফলে প্রতিবেশী দেশ ভারত যে উপকৃত হয়েছে সেটি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে পরোক্ষভাবে উঠে আসে। বিষয়টি নিয়ে ভারতের একটি জনপ্রিয় জাতীয় দৈনিক ‘এবার বাংলাদেশ প্রতিদান চায়’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ বিষয়ে সঙ্গত কারণেই প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। প্রত্যুত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কোন প্রতিদান চাই না। আর প্রতিদানের কী আছে? আর কারও কাছে চাওয়ার অভ্যাস আমার কম, দেয়ার অভ্যাসই বেশি।’ সংবাদ সম্মেলনের এক পর্যায়ে একজন বর্ষীয়ান সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর নোবেল প্রাপ্তি নিশ্চিতের জন্য অর্থ ব্যয় করে লবিস্ট নিয়োগের বিষয়টি প্রশ্নাকারে উত্থাপন করেন, যেটি গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যেই শুধু নয়, দেশের সচেতন নাগরিকদের কাছেও অনভিপ্রেত বলে মনে হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীও সেটির মোক্ষম জবাব দিতে গিয়ে জানিয়েছেন এমন পরিকল্পনা তাঁর নেই। সত্যি বলতে কি, কোনো আত্মমর্যাদাসচেতন ব্যক্তির পক্ষে পুরস্কার লাভের জন্য এমন অনৈতিক উপায় অবলম্বন অসম্ভব। সব মিলিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সরকারপ্রধানের যে মনোভাব উঠে এলো তা নিয়ে দেশবাসী গর্ববোধ করবে। নিজের অবস্থান বারবার পরিষ্কার করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ থেকে একজন রাষ্ট্রনেতার পরিকল্পনার দৃঢ়তা, নিজের প্রতি আস্থা এবং সামগ্রিক বিচারে দেশবাসীর জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ বিষয়ে তাঁর মনোভাবের পরিচয় মেলে। আত্মমর্যাদাবোধকে উর্ধে তুলে ধরে আত্মবিশ্বাসী স্পষ্ট বক্তব্যের জন্যে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।
×