ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কবিতা

প্রকাশিত: ০৭:৪৫, ১ জুন ২০১৮

কবিতা

হাড় হা-ভাতে জাফর ওয়াজেদ আমরা যে সব কষ্টে-সৃষ্টে দিন আনি আর দিন খাই গা-গতরে হয়ে গেছি তাই তালপাতার এক সেপাই আমাদের নেই নিয়মিত রোজগার, কাজকর্মের খাত কোনদিনও হয়নি সুযোগ পেড়ে খেতে দু’টো ভাত। আমরা দেখি নি পাঁচতারা হোটেল, বুফেতে খাবার আমাদের ডাকে কাঙালিভোজ এক লহমায় সাবাড় দুপুরের বেলা কি কি পদ রান্না হলে খুিশ হবে মন আমাদের জানা নেই খাদ্যের পুষ্টিমান ও গুণাগুণ। আমরা কি তবে রদ্দি খাই, রদ্দি পড়ি জানবে আর কে খবর রাখে না দেশ জাতি হায়, দায় দেব আর কাকে যা-ই দু’চার কড়ি যা পাই শ্লোগান তুলি জনসমাবেশে ভাষণের ধ্বনি ঢোকে না, হিসেবের খাতা অবশেষে। আমরা অংক-টংক জানি না কিছুই, খেতেই শুধু জানি খটখটে রোদে গরমে শীত বর্ষায় খিদে দেয় হাতছানি কুয়াশার মতো ব্যাপ্ত ধোঁয়ায় উনুনেরই পাশে বসে পাত পেতে দেয়নি কেউ খাবার, বলেনি থাক রসেবসে। আমরা যে হাড় হা-ভাতে বাপ খেদানো মায়ে তাড়ানো আমাদের নেই উচ্চাশা, আর নেই কিছু সম্বল হারানো। ** যে তুমি সুন্দর শিউল মনজুর যে তুমি সুন্দর হাত বাড়াও, নদীর বুকে ভাসাও পানসির পাল। স্বর্গপাতার ছায়ায় দাঁড়াও, স্বপ্নের গভীরে করো নোঙর। যেতে যেতে বাতাসের আবেগে খুলে দাও সবুজ প্রান্তরে জামদানি আঁচল। যে তুমি সুন্দর, হৃদয়ের দরজা খুলে হাসো অমলিন- মায়াবি শিশির পায়ে দুধভোরে ছুটে আসো ধান শালিকের জমিন, ডালিম গাছের বুলবুলির মতো নেচে নেচে উড়ে উড়ে নির্জন উপমায় ভালোবাসার অলংকারে প্রণয়ের স্বর্গসুখে হাত বাড়িয়ে ডাকো... যে তুমি সুন্দর প্রতিদিন...। ** কবিতারা কাছে আসে না তামান্না জেসমিন কবিতারা দেয় না ধরা অক্ষরগুলো জোনাকিদের মতন ওড়াউড়ি, জ্বলে নেভে চোখের তারায় যাবতীয় স্বপ্নেরা জোছনার জোয়ারে ভাসে ছোঁয়াছুঁয়ি খেলা আলো আঁধারি গাছগাছালির ফাঁকে ফাঁকে। কবিতারা কতকাল অবুঝের মতন দূরত্ব কেবল বাড়িয়ে চলে। ছুঁতে চাইলেই জোনাকি শব্দেরা ছুটে যায় নিজস্ব অবগাহনে আঁধারের হাত ধারাধরি করে সীমানা থেকে সীমান্তের ওপারে কবিতার মৃদু হাসাহাসি। জলে ছলে আগুন জ্বলে ছলাৎ ছলাৎ শব্দমাছেরা চোখের জলের মতন মাতম করে অনুকাব্য অনুক্ষণে, আনমনে তার অনুরাগের জল ছায়াতে জলে ভেজা শব্দরাজি ছিন্ন মালা নিশব্দে কাতর না-বলা কথা। রজনীগন্ধা গোপন গন্ধ গভীর রাতের আবেগ বিহীন ছন্দছাড়া। খুব কাছের কাব্যেরা বিরামহারা ছুটে চলেছে ক্লান্ত অজুহাতে আকীর্ণ বাণীরা দেয় না ধরা আত্মসমর্পণে উদার আকাশের মত কবিতারা কাছে আসে না। ** সবুজ-শিহরণ মাসুদ অর্ণব পরাজয়ে প্রস্ফুটিত গোলাপ বুকে নিয়ে কেউ কেউ বসতি গড়ে ঘরহীন ঘরে; জীবননদীর ভাঙনে পকেটে যৎসামান্য মনবলই তখন হাতের পাঁচ। ভালোবাসা ছাড়া মানুষকে কখনও যায় না জানা; অফুরন্ত পথই একজন জন্মান্ধ প্রেমিকের প্রকৃত ঠিকানা। ডানাভাঙা স্বপ্নপাখির পালক পথের ধূলায় উড়লে জাগে সবুজ-শিহরণ। আমার ডুবে যাওয়া সময়ের নাম পিনাকÑছয় আমার বুকের উপর বীরদর্পে দাঁড়িয়ে আছে অদ"শ্য পাহাড়; সেই পাহাড়ের শোভাবর্ধনে এগিয়ে আছে আমার অসংখ্য পরাজয়। আমার ডুবে যাওযা সময়ের নাম পিনাকÑছয়। তারপরও জীবনের বিষণœ রঙে আঁকা প্রজাপতি জাগিয়ে রাখে ভালোবাসার কাঠ-ফাটা তৃষ্ণা। ** সন্ধ্যা রীপা রায় সন্ধ্যায় ফিরে আসে তামাটে পাখিরা। তখনও। সুপ্তি দোল খায় চন্দ্রিমাজালে পোকারা হারায়। চাঁদের আলোয় ভেসেছিল বৃষ্টির জলমগ্ন দ্বীপ সূর্যের ঝংকারে নেমেছিল স্নিগ্ধ আলোর মেলা মুগ্ধ গোলাপে ভিজেছিল শিশির-দূর্বা আবিষ্ট নিয়রে হেসেছিল মুখরিত কোকিল। তখনও রোদ ছিল চোখ জুড়ে উচ্ছ্বাস ছিল। কুয়াশার ভেলায় বেজেছিল মৃদঙ্গ সুর মেতেছিল, এঁকেছিল অপোক্ত অসুর তৃঞ্চার পাপড়িরা ঝরেছিল নিভৃত বনে জ্বলেছিল, নিভেছিল সাবলীল সন্তর্পণে। তখনও ঝোপ বেয়ে ভাঙা চাঁদ নামে ঘুর পাক পাখিরা থিতিয়ে থামে সন্ধ্যায় ফিরে আসে তামাটে পাখিরা। ** ফাগুনিবাতানে লেখা পদ্য নবনিতা রুমু সিদ্দিকা বিড়লিমন ছুঁতে চায় তোমাকে-তোমার সান্নিধ্যের উষ্ণতা সপক্ষ তোমার পেলব শব্দগ্রস্ত কথায় গড়ে ওঠে আকাশ-মাটির সখ্য গাছের কাছে শেখা দৃঢ়তার বন্ধুত্বে সুখের পাতাল ছুঁই ছুঁই সুভীত কেঁপে ওঠে ফাগুনিবাতাসে লেখা কবিতা রিনিঝিনি বৈশাখী রীত আমার অনুগত নকশিকাঁথার রিপু মনে রঙধনু লুটোপুটি স্বপ্ন সৃষ্টি মেঘাছন্ন চোখের আলোয় নতুন প্রতিশ্রুতি জীবনের যুগল রোদবৃষ্টি ** জাগো তরুণ রাসেল মহান পহেলা মে শেকল ছেঁড়ার দিন শ্রমিকের ঘাম ঝরা শ্রম দিতে হবে দাম, দিতে হবে দাম দুনিয়ার যত মজুর যুবার রোদে পোড়া দেহ পেটানো শরীর সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত দক্ষ বাহুর ব্যস্ত সময় শোষক পিশাচ, মহাজনী গ্রাস ভাঙতেই হবে বিষদাঁত আজ লোভী অসুরের এসো হে কামার জাগো, জাগো জেগে ওঠো সব।
×