ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সৈয়দা আঁখি হক

নিভৃতচারী শিল্পী

প্রকাশিত: ০৭:৪১, ১ জুন ২০১৮

নিভৃতচারী শিল্পী

ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে অনেক বড় বড় দার্শনিক-কবি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষ ভাগ থেকে ষোড়শ শতাব্দীর মধ্য ভাগ পর্যন্ত অসংখ্য রাজা রাজত্ব করেছেন, বহু বীর পৃথিবীর অনেক জায়গা জয় করেছেন। কিন্তু সে সব রাজা, কবি ও বীরের নাম কালের করাল প্রবাহে ধরাপৃষ্ঠ থেকে মুছে গেছে বললে অত্যুক্তি হবে না। এর পরের ইতিহাস জানান দেয়, বেশিরভাগ গুণিজন জীবদ্দশায় কর্মের যথাযোগ্য মর্যাদা লাভ করেননি। যাপিত জীবন কেটেছে তাদের অবহেলায়-অনাদরে। প্রতিটি জাতির পরিচয় বহন করে সে জাতির লোকসংস্কৃতি-লোকসাহিত্য। আমাদের লোকজ সাহিত্যে অসংখ্য স্বশিক্ষিত-স্বল্পশিক্ষিত মরমি কবি, বাউল, সুফি ও দার্শনিকদের প্রভাব বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছে। তাদের দর্শন চিন্তা বা পা-িত্য গ্রামের পথ পেরিয়ে নাগরিক জীবনেও এখন দারুণ প্রভাব ফেলেছে। প্রযুক্তির যুগে এসেও ইট পাথরের শহর ছেড়ে একটু প্রশান্তি খুঁজে পেতে মানুষ ছুটে যায় মাটির টানে, শেকড়ের সন্ধানে। নিজেকে ভাসিয়ে দেয় সহজ-সরল ভাষায় বাউলের উদাসী সুরের ভেলায়। আমার বাড়ি আয় রে বন্ধু, আমার বাড়ি আয় ভুবন মোহন রূপ তোমারই দেখলে প্রাণ জুড়ায় ॥ যুগ যুগ ধরে লোকের মুখে মুখে যে সাহিত্য বয়ে বেড়ায় তা-ই লোকসাহিত্য। আমাদের জাতীয় সম্পদ লোকসাহিত্যের ভা-ার অত্যন্ত বিশাল, যা সম্প্রসারিত হয়েছে বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায়। এর অন্যতম একটি শাখা হলো লোকগান। বিরহ থেকে ভাবের সৃষ্টি, ভাব থেকে হয় ভাষা। ভাষা থেকে ছন্দের সৃষ্টি, ছন্দ থেকে হয় কাব্য। এই কাব্যই শিল্পীর মধুভরা কণ্ঠে গান হয়ে পৌঁছে যায় শ্রোতার কর্ণমূলে। গান কেবল মানুষের দুঃখই দূর করে না, সুখেও রসসঞ্চার করে। গান মানুষকে পথভ্রষ্ট করে না। ধর্ম-দর্শন ও জাগতিক জীবনে বাস্তব অভিজ্ঞতামিশ্রিত গানগুলো মানুষ হওয়ার শিক্ষা দেয়, অন্তর্দৃষ্টি উন্মোচন করে। তাই সামাজিক বোধ এবং শেকড় খুঁজে পেতে হলে আমাদের প্রয়োজন লৌকিক গানের একেবার অতলে ডুব দেয়া। লোকসংস্কৃতি ও লোকগীতি সমৃদ্ধ বাংলাদেশের একটি জেলা সিলেট। প্রাচীন সভ্যতা, সংস্কৃতির লীলাভূমি তথা কৃষ্টি ও ঐতিহ্যের দিক থেকে বলতে হয় সিলেট একটি স্বতন্ত্র জনগোষ্ঠী। সিলেটের সাহিত্য শিশুকালেই আমায় আকৃষ্ট করেছিল। তাইতো বার বার ছুটে গিয়ে জানতে পারি বৃহত্তর সিলেটে জন্মেছেন অসংখ্য সুফি-দরবেশ-বাউল-বৈষ্ণব-সাধক-ফকির। এদের অনেকেই বিস্মৃতির অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছেন। কেউ কেউ বিদায় বেলার প্রহর গুণছেন। এমনই কয়েকজনের জীবনদর্শন ও সৃষ্টি সম্পর্কে জানার কৌতূহল অনুভব করি নিজের তাড়না থেকেই। যাদের গান অনন্তকাল মানুষকে সৎ উপদেশ দেয়, সুপথ দেখায়, ধর্মের মর্মকথা বলে তারাই সাধক। এ ছাড়া সুফি-মরমি-বাউল-ফকির বা দেহবাদী সাধকের গানে বস্তু জীবনের ছবি রূপকে-প্রতীকে এমনভাবে ওঠে আসে যা গ্রামবাসীর কাছে স্পষ্ট এবং প্রত্যক্ষ হলেও অনেক সময় শহরবাসীর কাছে তা দুর্বোধ্য মনে হয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো তাদের উচ্চশিক্ষা বা পুঁথিগত বিদ্যা না থাকলেও কল্পনাশক্তির প্রভাবে জীবনের অনিত্যতা, দেহের নশ্বরতা, জন্ম-মৃত্যুর রহস্যানুসন্ধানে গান রচনা করেন নানা রূপকে-উপমায়। এমনই এক নিভৃতচারী সংগীতশিল্পী ও গীতিকার খোয়াজ মিয়া দুর্বিন শাহের শিষ্য। যিনি ছিয়াত্তর বছর বয়সে এসেও দিনে-রাতে কথার সাগরে নিমজ্জিত হয়ে তুলে নেন একেকটি গানের মুক্তো। নিরলস সংগীত সাধনায় নিবিষ্টচিত্ত গীতিকার খোয়াজ মিয়ার জীবন ও কর্ম সাধনার সঙ্গে সম্যক পরিচয়ের প্রয়োজনে ছুটে যাই তার বাড়ি। কিছুদিন আগে ইউটিউবে একটি গান বার বার শুনছিলাম। কণ্ঠশিল্পী ডলি সায়ন্তনী অসাধারণ গেয়েছেন তার ‘জাদু জানে বন্ধু’ এ্যালবামে। লাগাইয়া পিরিতের ডুরি আলগা থাইকা টানে গো আমার বন্ধু মহা জাদু জানে। নিজের অজান্তেই হারিয়ে যাই গানটির রচয়িতা নিভৃতচারী শিল্পী ও গীতিকার খোয়াজ মিয়ার সঙ্গে দেখা হওয়ার সেই স্মৃতিময় মুহূর্তগুলোতে। ১২ মার্চ ১৯৪২ সালে সিলেটের সন্নিকটে বিশ্বনাথ থানার দৌলতপুর গ্রামে মৌলভী আজিজুর রহমান ও আস্তরা বিবির কোলে জন্ম নেন খোয়াজ মিয়া। ইতোমধ্যে ১. ‘প্রেম স্বর্গীয় প্রথম খ-’ ১৯৬৭, ২. ‘প্রেম স্বর্গীয় দ্বিতীয় খ-’ ১৯৭১, ৩. ‘গীতিবিচিত্রা’ ১৯৯০, এবং ৪. ‘পঞ্চরস’ ২০১৪, নামে প্রকাশিত হয়েছে ৪টি গীতিগ্রন্থ। বিখ্যাত শিল্পী দিলরুবা খানের কন্যা শিমুল খান তার এ্যালবামে গেয়েছেন ‘আমার বন্ধু মহাজাদু জানে’ এবং ‘তুই বন্ধু আসিবার লাগি’ এই দুটি গান। শিল্পী আশিক প্রায় সবকটি টিভি চ্যানেলে গেয়েছেন এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের বাংলা স্টুডিও, চ্যানেল ২৪ ও এশিয়ান টিভিতে তার গান গেয়েছেন সিলেটের খ্যাতিমান শিল্পীরা। এ ছাড়া সাজ্জাদ নূর, শামীম আহমেদ, পার্থ প্রদীপ মল্লিকসহ সিলেটের অসংখ্য শিল্পী প্রায় প্রতিটি অনুষ্ঠানেই খোয়াজ মিয়ার গান গেয়ে দর্শক হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। স্বভাবে অন্তর্মুখী এই সাধক ব্যক্তিগত জীবনে সারল্যের মূর্ত প্রতীক। সংগীতচর্চার মধ্য দিয়ে ¯্রষ্টা-সৃষ্টি, প্রেম-বিরহ ও বাস্তবতার নির্যাস নিয়েই তার সৃষ্টিধর্মী প্রয়াস। মৌলভী পিতার সন্তান হয়েও গান যেন তার নিরন্তর ও নিরলস চর্চার বিষয়। বাবার ভয়ে বাড়িতে গাইতে পারতেন না, তাই নৌকা নিয়ে হাওড়ের মাঝখানে বসে গানের সাধনা চালিয়ে যেতেন। মুক্ত পরিবেশে প্রাণ খুলে বাঁশি বাজাতেন। কৈশোর ও যৌবনের সন্ধিকালে সর্বপ্রথম রচনা করেছিলেন যে গানটি- খোদাকে করলে না ভক্তি মন আমার ভক্তি ছাড়া মুক্তি নাই কোরানে কয় বার বার ॥ তার শতাধিক গান বর্তমানে বৃহত্তর সিলেটের শিল্পীদের মুখে মুখে ফিরছে। কিন্ত গানের ভণিতায় খোয়াজ মিয়া থাকলেও সিলেটের মানুষের কাছে গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী খোয়াজ মিয়ার সৃষ্টি এখনও আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেনি। অধিকাংশ লোক জানেই না খোয়াজ মিয়া দেখতে কেমন। আমাদের সামাজিক জীবনে নিবিষ্টচিত্ত নিরলস প্রথিকৃৎ এমন সাধকদের পরিচিতি কেবল সংশ্লিষ্ট মহলে সীমাবদ্ধ থাকার কারণে গুণিজনেরা থাকেন অনালোচিত, অপরিচিত। মিডিয়ার কলম কিংবা আলো সহজে খুঁজে পায় না এদের। সাদামাটা জীবন-যাপনে অভ্যস্ত খোয়াজ মিয়ার সহজ ভাষা ও সুরসমৃদ্ধ গানগুলো যেন তার যাপিত জীবনও সাধনারই প্রতিচ্ছবি। অতিশয় সৎ, সহজ-সরলও প্রচারবিমুখ এই মানুষটি গান রচনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। নিয়মিত নামাজ-রোজার পাশাপাশি ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে চলেন। মিলাদ-মাহফিলে যেতে পছন্দ করেন। কোরান-হাদিস, ইসলাম ধর্ম ছাড়াও রামায়ণ, মহাভারতসহ হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে রয়েছে তার অগাধ বিচরণ। বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাস্তবতা, সমাজ, শিক্ষা, ইত্যাদি ও ওঠে এসেছে গানে। যেন প্রকৃতির কাছে থেকেও জ্ঞান আহরন করেন প্রতিনিয়ত। গানের ভাষা অত্যন্ত সহজ ও প্রাঞ্জল। হামদ-নাত, মারফতি, মুর্শিদি, জারি, সারি, ভাটিয়ালি, বিরহ-বিচ্ছেদ, আত্মতত্ত্ব, প্রেমতত্ত্ব, কামতত্ত্ব, পারঘাটাতত্ত্ব, গুরুতত্ত্ব, শিষ্যতত্ত্ব, সৃষ্টিতত্ত্ব, রাধাকৃষ্ণ, দেশাত্মবোধক ও মুক্তিযুদ্ধের তৎকালীন ঘটনাবলি নিয়েও অসংখ্য গান রচনা করেন। শপথ নিলাম মাথায় নিয়ে মাগো তোমার চরণ ধূলি। মরব না হয় প্রমাণ দেব তোমার ছেলে বীর বাঙালী ॥ এ ছাড়া দেহতত্ত্ব গান রচনায় তার অবদান অসামান্য। প্রায় প্রতিটি গানের কথাই যেন হৃদয় ছুঁয়ে যায়, প্রাণ আকুল হয়। আর্থিক দৈন্যদশা থেকে কখনও মুক্তি পাননি, বেদনা ও সঙ্কটের মাঝে থেকেও সংগীত সাধনা থেকে বিচ্যুত হননি। ঘরে গান গাইতে পারেননি বাবার ভয়ে। মাঠে গিয়ে, নৌকায় বসে, দূরে গিয়ে, আড়ালে-আবডালে করে গেছেন সংগীত সাধনা। ধর্ম, কর্ম ও সংসারের দায়িত্ব পালন করলেও গান রচনা থেমে যায়নি। স্ত্রী-সন্তানের মায়ার জালে বন্দী হয়েছেন কিন্তু তার মন তো বহির্মুখী, গানই তার নিত্যসঙ্গী, একমাত্র প্রেম, ধ্যান। প্রচারবিমুখ এই সাধক সাধনা করছেন নীরবে-নিভৃতে। তার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি জনপ্রিয় গান-১. জাদু জানে, ২. তুই বন্ধু আসিবার লাগি, ৩. যাইও না যাইও না, ৪. আমার বাড়ি আয় রে বন্ধু, ৫. ভয় লাগিল মনে, ৬. তোমায় দেখিতে মনে চায় গো, ৭. রঙ্গিলা রে বন্ধু রঙ্গিলা রে, ৮. আমার নাও যেন ডুবে না’। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি এ্যালবামের নামকরণ করা হয়েছে তারই গানের কথায়। অথচ এমন অসংখ্য জনপ্রিয় গানের রচয়িতা রয়েছেন অন্তরালে। সিলেট বেতারে পা-ুলিপি জমা দেয়ার পরেও শিল্পী বা গীতিকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়নি তার নাম। কোন শিল্পী গীতিকারের খবর নেন না, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। অনেকটা আশাহত হলেন তিনি, এতটা বছর কেবল গান গাওয়া ও লেখার মধ্যেই নিজেকে নিয়োজিত রাখেননি, একজন মহৎ হৃদয়ের পরোপকারী ব্যক্তিও বটে। বৃহত্তর সিলেটে অসংখ্য জনপ্রিয় গানের ¯্রষ্টারা অবহেলায়, অনাদরে, অযতেœ চলে যাচ্ছেন ওপারে। যারা পার্থিব বিষয় সম্পত্তি কিংবা ভোগবিলাসের মোহে কখনই আচ্ছন্ন ছিলেন না, জীবিতাবস্থায় এই রতœখ-গুলোর জন্য কিছুই করতে পারি না। আমাদের টনক নড়েনি আজও, শুভদৃষ্টি পড়েনি তাদের সৃষ্টির ওপর। সেই সময় কই আমাদের! ভোগবাদী এই সমাজে আমারা কেবল নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত রয়েছি। এই অসময়ের কালগ্রাসে তারা থাকেন আলোচনার বাইরে, তালিকার বাইরে, দৃষ্টিসীমার বাইরে। দায়িত্বে থাকা হর্তাকর্তারা নিজেদের প্রচার করতেই যেন ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। এ ছাড়া স্বজনপ্রীতির জন্যই বেতার ও টেলিভিশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পর্যন্ত পৌঁছায় না তাদের নাম কিংবা ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাতে লেখা পা-ুলিপিগুলো। সেই সুযোগে অযোগ্যরা সব সুবিধা লুটেপুটে নিচ্ছে। সর্বত্র যেন অযোগ্যদের জোয়ার বইছে। এই লজ্জা তো আমার, আমাদের, পুরো জাতির। কারণ, বাংলা সাহিত্যের কর্ণধার তথা প্রচারবিমুখ এমন গুণিজনদের সন্ধানে জীবিতাবস্থায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে যায় না মিডিয়ার ক্যামেরা, টেলিভিশনের পর্দায় দেখা যায় না এই নক্ষত্রগুলোকে। অথচ মৃত্যুর পরেই শুরু হয় তাদের সৃষ্টি নিয়ে আমাদের রমরমা ব্যবসা। অর্থাৎ তাদের গানকে হাতিয়ার করেই চলে নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের পাঁয়তারা। উল্লাসে মেতে ওঠি আমরা লোকোৎসব বা স্মরণোৎবের নামে। নানা কথার ফাঁকে ফাঁকে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন খোয়াজ মিয়া। আল্লাহ রাসূলের গুণগান গেয়ে যেতে চান যতদিন দেহে প্রাণ থাকবে। তবে এই জাগতিক জীবনে কিছু প্রত্যাশা মানুষের থেকেই যায়। বেতারে-টেলিভিশনে তালিকাভুক্ত হওয়ার একটা বাসনা তার রয়েই গেল। জীবিতাবস্থায় সবগুলো গান একই মলাটে দেখতে চান এবং গানগুলো বিখ্যাত শিল্পী-কিরণ চন্দ্র রায়, চন্দনা মজুমদার, ইন্দ্রমোহন রাজবংশী, দিলরুবা খান, মনির খান, কুমার বিশ্বজিৎ এর কণ্ঠে যেন শুনতে পারেন। হয়তো একদিন তার মনোবাসনা পূর্ণ হবে। লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকা খোয়াজ মিয়ার গানের প্রসারতা বৃদ্ধি পাবে, গবেষকের গবেষণার খোরাক হবে, মানুষের পাঠের সুযোগ হবে, বাংলা একাডেমির চরিতাভিধানে স্থান পাবে তার নাম। আবিষ্কৃত হবে তাদের গানের মাহাত্ম্য, প্রচার হওয়ার সুযোগ পাবে তাদের গানের দর্শন। টেলিভিশনের পর্দায় বিখ্যাত শিল্পীর কণ্ঠে কোনদিন ভেসে উঠবে- দেহ গাড়ি রইল পড়ি চলে না রে ভাই নড়বড় বডি লইয়া মাশুকপুরে কেমনে যাই। গাড়ি যবে চলবে না আর ছেড়ে যাবে সব প্যাসেঞ্জার অবশেষে যাবে ড্রাইভার খোয়াজের শেষ হবে বড়াই ॥ জন্ম হলেই মৃত্যু অনিবার্য কারণ, নিত্য-অনিত্য সংসারের মাঝে জন্ম-মৃত্যু এক সত্যের সীমারেখা মাত্র। আবর্তন-পরিবর্তনের মধ্যে অনন্তকাল এ খেলা চলছে, চলবে। তবু এই আসা-যাওয়ার মাঝেই কিছু মানুষ নিজের কর্ম দ্বারা শিক্ষণীয় অসংখ্য বিষয় রেখে যান ভাবিকালের মানুষের জন্য। ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ায় মানুষের কল্যাণে অমলিন হয়ে থাকে তাদের বাণী। এমনই একজন খোয়াজ মিয়া পরকালের ভাবনায় বিভোর থাকেন গভীর রাতে, খাতা-কলমে গাঁথেন কথার মালা। পুকুরের পূর্ব পারে দাদা-বাবার পাশেই চিরনিবাস গড়তে চান তিনি। আমাদের বিদায় জানিয়ে সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়েছে, পাখিরা নীড়ে ফিরছে, আবছা আলোতে নিরালায় পুকুর পাড়ে ভাবনারত খোয়াজ মিয়ার কণ্ঠ হতে ভেসে আসছে- আমার ভয় লাগিল মনে গো কোনদিন ধরিয়া নিব জমে মানিবে না দোহাই দিলে আল্লাহ নবীর নামে গো...
×