ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মোঃ সাখাওয়াত হোসেন

বাংলাদেশ পুলিশে নারীর অগ্রযাত্রা

প্রকাশিত: ০৭:৩৩, ১ জুন ২০১৮

বাংলাদেশ পুলিশে নারীর অগ্রযাত্রা

১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ পুলিশে ১৪ জন নারী সদস্যের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে নারীদের পুলিশিং এ যাত্রা শুরু। পরবর্তীতে বিসিএসের মাধ্যমে ১৯৮৬ সালে প্রথম নারী পুলিশ অফিসার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগদান করেন ফাতেমা বেগম। তবে নারীদের পুলিশে অংশগ্রহণকে তৎকালীন সময়ে স্বাভাবিকভাবে দেখা হতো না। তবে কালের পরিক্রমায় নারীদের পুলিশি পেশায় মর্যাদাকর আসনে দেখা হয় এবং তুমুল প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নারীরা পুলিশে যোগদান করছে। বাংলাদেশ পুলিশে ক্যাডার অফিসারের শতাংশ হার ১০.২৬% যা অত্যন্ত ইতিবাচক। তথাপি নারীরা তাদের কর্মক্ষেত্রে পেশাদারিত্বের সর্বোচ্চ পরিমাপক দেখিয়ে চলেছে যার স্বীকৃতিস্বরূপ নানা রকম পুরস্কারে ভূষিত হচ্ছে নারীরা। বর্তমানে পুলিশে কনস্টেবল হতে ডিআইজি লেভেল পর্যন্ত ১১,৭৬৭ (আনুমানিক) জন নারী পুলিশ বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের মোট সদস্য সংখ্যা প্রায় ১,৯৩,৫৩০ জন যেখানে নারীদের হার শতকরা ৬.৬৬%। ভারতে নারী পুলিশের হার ৬.১১%, পাকিস্তানে নারী পুলিশের হার ১.৪৬%, অস্ট্রেলিয়াতে ৩২.৬%, যুক্তরাষ্ট্রে ২৬% এবং সিঙ্গাপুরে শতকরা ১৬%। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, প্রত্যেক দেশে সেবার বিকাশমান এবং ভিক্টিমদের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নারী পুলিশ সদস্যের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে বিধায় নারীদের পুলিশে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। বাংলাদেশে সেবার ক্ষেত্রে নারীদের যে অগ্রসারমানতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কালক্রমে পুলিশ বাহিনীতে নারীদের যথাযথ অংশগ্রহণ আরও বৃদ্ধি পাবে নিঃসেন্দেহে। নারী পুলিশদের সুরক্ষা ও সার্ভিস কিংবা পেশার গুণগত মান রক্ষার ক্ষেত্রে সরকারের গৃহীত ভূমিকা অত্যন্ত ইতিবাচক। ভবিষ্যতেও এ ধরনের আধুনিক ও যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে নারীদের পুলিশি পেশায় আরও বেশি পরিমাণে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। নারীদের ক্ষেত্রে চাকরিতে সম্পূর্ণরূপে মনোনিবেশের জন্য বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। যেমনÑ মাতৃত্বকালীন ছুটি চার মাস থেকে বর্ধিত করে ছয় মাস করা হয়েছে, শিশু সুরক্ষা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে সিটি কর্পোরেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় যেখানে চাকরিজীবী মায়ের অনুপস্থিতিতে শিশুর যতœ-আত্মি করা হয়, পোস্টিং কিংবা বদলির ক্ষেত্রে পারিবারিক ইস্যুকে গুরুত্ব দিয়ে বদলি করা হয়ে থাকে। এছাড়াও বাংলাদেশ পুলিশে নারীদের অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত করার জন্য ‘বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক’ নামে সংগঠনটি চাকরিতে নারীদের মটিভেশন ও স্পৃহা বৃদ্ধিকরণের ক্ষেত্রে কাজ করে যাচ্ছে নিরলসভাবে। ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় নারীদের অংশগ্রহণ বাংলাদেশে পুলিশিংয়ের ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা সংযোজন করেছে। ২০১৫ সালে ২৯ জন নারী সার্জেন্ট ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং তারা সিনিয়র নারী পুলিশ অফিসারদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়ে থাকে। তাদের দায়িত্ব পালনকালে কর্মপ্রচেষ্টায় সাধারণের মনে সার্জেন্ট এবং সামগ্রিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সম্বন্ধে ইতিবাচক ধারণার সৃষ্টি হয় এবং তারই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে আরও ৩২ জন নারী ট্রাফিক সার্জেন্ট নিয়োগ প্রদান করা হয়। তাদের কর্তব্যপরায়নতা এবং ইতিবাচক মানসিকতার অনুশীলন বাংলাদেশ পুলিশ সম্বন্ধে মানুষের নেতিবাচক ধারণাকে পরিবর্তন করে দিতে পারে নিমিষেই। ২০১১ সালে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন নামে নতুন একটি ফোর্স বাংলাদেশে পুলিশে সংযোজিত হয়। নবগঠিত ইউনিটটিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ ছাড়াও পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট ও সংস্থাতে নারীরা তাদের মেধা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই নারী পুলিশরা। স্কলারশিপ নিয়ে মাস্টার্স ডিগ্রীসহ পিএইচডি প্রোগ্রামে পুলিশের অনেক নারী অফিসাররা দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক মানের প্রসিদ্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা অর্জন করতে বিদেশ পাড়ি জমিয়েছেন। কারণ, আধুনিক ও চ্যালেঞ্জিং বিশ্বে অপরাধী এবং অপরাধের ধরন, কার্যকরণ অনুসন্ধান, অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণের জন্য উদ্ভাবনমুখী জ্ঞান অন্বেষণের জন্য উচ্চ শিক্ষার কোন বিকল্প নেই।
×