ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আমাদের মায়েরা...

প্রকাশিত: ০৭:২৮, ১ জুন ২০১৮

আমাদের মায়েরা...

মায়া-মমতা বা স্নেহ-ভালবাসা- আমরা জানি, এই জাতীয় শব্দগুলো আপেক্ষিক। বহুল ব্যবহৃত এই শব্দগুলোর বাহ্যিক কোন রূপ নেই। যদিও আমরা প্রয়াশই শব্দগুলোর মর্মার্থ উপভোগ করি, উপলব্ধি করি। অবশেষে একটি মাত্র শব্দ এই জাতীয় সকল শব্দের পূর্ণতা বহন করে। ‘মা’ কথাটি নিশ্চয়ই মানব জীবনে প্রিয় শব্দের অন্যতম। কেবল যে শুধু মানব জীবনে এই শব্দটি মধুময়, তা কিন্তু নয়! পৃথিবীর সকল প্রাণীর তরে ভালবাসার, স্নেহের, নির্ভরতার এবং সর্বময় মঙ্গলের প্রতীক এই শব্দ! মাকে নিয়ে যখনই আলাদা করে কোন কিছু বলেতে বা লিখতে শুরু করি প্রথমেই আমরা অমোঘ আবেগ এবং সীমাহীন ভালবাসার সম্মুখীন হই, এরপর অন্য বিষয় উপলব্ধিতে আসে। আশা করি এমন বোধ বেশিরভাগ মানুষের জীবনে বর্তমান। পৃথিবীতে বহুদেশ, হাজার কোটি মানুষ এবং অসংখ্য ভাষা! কিন্তু, মাতৃত্বের ভাষা এবং এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সব প্রান্তেই এক। বস্তুত এই শব্দের মাধুর্য এবং মর্মার্থ সত্যই আশ্চর্যজনক! সেটা বাংলায় ‘মা’ হোক কিংবা ইরেজীতে ‘মম’! এই ‘ম’ বা ইংরেজী আলফাবেট ‘এম’-এর কদর বলতে গেলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বের শুরু থেকেই! এই যেমন- গেল মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে চলে গেল আন্তর্জাতিক মা দিবস। বিশ্বব্যাপী মায়েদের সম্মানে গত এক শ’ বছরের অধিক সময় ধরে ভালবাসা এবং শ্রোদ্ধার সঙ্গে যেভাবে এই দিবস পালিত হয়ে আসছে, ঠিক সেভাবেই গত ১৩ মে এই দিবসকে উপলক্ষ করে বর্ণিল আয়োজনে মাকে শ্রোদ্ধা এবং ভালবাসা জানিয়েছি। এই অরূপ সুন্দর জীবনে তাঁর অবদানকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেছি। আসলে প্রত্যেকেই আমরা ‘মা’-কে ভীষণ ভালবাসি। মায়েরাও আমাদের জীবনের থেকে অধিক ভালবাসেন! এমনকি সন্তানের জন্য জীবন উৎসর্গ করে মাতৃত্বের শ্রেষ্ঠ পরীক্ষা দেন। সুতরাং সন্তানের জন্য মা এবং মায়ের জন্য সন্তান, পৃথিবীতে সব থেকে শক্ত পরিপূরক। আমাদের মায়েরা... যুগ যুগ ধরে নির্মোহ ভালবাসার যে আকৃতি বা অবয়ব আমাদের কল্পনায় এবং বাস্তবতায় তার মূর্তিমান ছায়ারূপ হলো, আমাদের ‘মা’! ভীষণ শোভা বাঙালী মায়ের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যে। এই বাংলার শান্ত সুন্দর অবুঝ প্রকৃতির মতোই! কেন কেন ক্ষেত্রে একটু অবুঝও বটে! অবশ্য, সন্তানের সর্বময় মঙ্গলার্থে মায়েদের ক্ষাণিক অজ্ঞানতা কোন ত্রুটিতে বিবেচনা করব তা আমি জানি না। তাঁদের নিয়ে নেতিবাচক কিছু বলার দুঃসাহসও আমার নেই! কিন্তু, কিছু কিছু বাস্তবতা এমন যে মায়েদের অপরিপক্ব মানসিকাতা বা অজ্ঞানতার প্রভাবে সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যত ম্লান করে ফেলে। অনেক ক্ষেত্রে সন্তানের যথাযথ শারীরিক ও মানসিক বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। মাপ করবেন! এই সত্য প্রতিষ্ঠায়- আমি আমাদের মায়েদের ভূমিকা মোটেও খাটো করতে চাইছি না। কিন্তু সত্য যে বড় কঠিন! প্রসঙ্গে একটি অনু গল্প- গ্রামের মেঠো পথ। আঁকাবাঁকা চলে গেছে স্কুল হয়ে বাজারের দিকে। পথের মাঝে ছোট-বড় একাধিক খাল। খালের উপর সাঁকো। স্কুলে যাওয়ার পথ বাচ্চাদের জন্য দুর্গম হওয়াতে গ্রামের বেশিরভাগ মা নিজেরাই সন্তাদের স্কুলে দিয়ে আসেন এবং শেষে নিয়ে আসেন। একদিন এক মা কোন কারণে স্কুলে যেতে পারেনি। স্কুল শেষে মা, না আসাতে বাচ্চাটি তার পাশের বাড়ির সহপাঠির মায়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিল। সকাল থেকে আকাশের অবস্থা ছিল বেশ খারপ। একেবারে অন্ধকারময় পরিস্থিতি! এক মা তার নিজের সন্তান এবং পাশের বাড়ির পড়শীর সন্তান সঙ্গে করে স্কুল বাড়ির মাঝ পথে, এর মধ্যে শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি! সঙ্গে বজ্রপাত! গাছের নিচে ক্ষাণিক দাঁড়িয়ে, বৃষ্টি কমলে তারা ফের বাড়ির দিকে রওনা হয়। কিছু পথ আসার পর বড় খালের সাঁকো পার হতে গিয়ে দেখে, মাঝখানের অংশ ভাঙ্গা! পার হওয়া সম্ভব নয়! এই খারাপ আবহাওয়ায় বাচ্চা দুটো নিয়ে কি করবে মা ভেবে কূল পাচ্ছে না। এর মধ্যে আবার কালো মেঘ! সঙ্গে বিদ্যুতের ঝলকানি! ভয়ে চঞ্চল হয়ে ওঠে মায়ের মন। অবশ্য খাল পেরোলে, সামনেই বাড়ি। সব দিক বিবেচনা করে মা সিদ্ধান্ত নেয়, বাচ্চা দুটোকে শরীরের সঙ্গে বেঁধে সাঁতরে খাল পারি দেবে। তা না হলে অনিশ্চিত দীর্ঘ সময় বজ্রপাত এবং বৃষ্টির মধ্যে অপেক্ষা করতে হবে! শেষে, নিজের সন্তানকে বুকে আর পড়শীর সন্তানকে পিঠে শক্ত করে বেঁধে নেমে পড়ল- সাঁতরে খাল পারি দিতে। এর মধ্যে শুরু হয় আকাশ ভেঙ্গে ফের বৃষ্টি! সঙ্গে জোয়ারের স্রোত! ভীষণ কষ্ট করে এক রকম মৃত্যুর দুয়ার থেকে বাচ্চা দুটো নিয়ে খালের ওপাড়ে পৌঁছায়! যখন, মায়ের পায়ের নিচে শক্তমাটি চলে আসে, এর মধ্যে ঘটে যায় তার জীবনে সব থেকে হৃদয় বিদারক ঘটনা। নিজের নারি ছেঁড়া ধন বুকে বেঁধে সাঁতরে পার হওয়ার সময় পানির ¯্রােতে নিশ্বাস বন্ধ হয়ে প্রাণ হারায়Ñ মায়ের অমূল্য মানিক! অন্যের বাচ্চাটি পিঠের ওপরে থাকায় প্রাণ রক্ষা পায়। মা যখন বুঝতে পারে নিজের সন্তানকে অধিক সুরক্ষা দিতে গিয়ে জীবনের অপূরণীয় ক্ষতি করে ফেলেছে। তখন আর কিছুই করার নেই। ইতমধ্যে সব শেষ। মা বাকরুদ্ধ। জনাকয়েক লোক কয়েকটা বাঁশ নিয়ে এসেছে, সাঁকো মেরামতের জন্য। বৃষ্টি থেমেছে। এটি একটি নিছক গল্প এর বেশি কিছু নয়। এখানে মায়েদের অন্ধ প্রেম এবং আবেগী সিদ্ধান্তের ফলে সন্তানের জীবন প্রদীপ কিভাবে নিভে যেতে পারে, তার একটি রূপক ব্যাখ্যা। অধিক মাতৃস্নেহ কিংবা গর্বিত মা হওয়ার প্রত্যাশায় অনেক মা-ই না বুঝে তার সন্তানের অপূরণীর ক্ষতি করে ফেলে। বিশেষ করে, সন্তানকে শিক্ষা দান এবং খাবার খাওয়ানোর ব্যাপারে মাত্রাতিরিক্ত সচেতনতা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মঙ্গল থেকে অমঙ্গল ডেকে আনে! এমন সত্যতা আমাদের চারপাশে অহরহ! মায়েদের সঠিক শিক্ষার অভাব এবং তাদের অবচেতন মন বিভিন্ন সময় হৃদয় বিদারক ঘটনার জন্ম দেয়। অধিক পরিমানে খাওয়ানো মাতৃত্বকালীন সময় থেকে সন্তান প্রসবের আগ পর্যন্ত এখনকার মায়েরা খাবার গ্রহণ থেকে চলা ফেরায় অনেক বেশি সচেতন। এটা কেবল বড় শহরের ক্ষেত্রে নয় মফস্বল কিংবা প্রত্যন্ত গ্রামেও একই হাল। দশ মাস দশ দিন নিজের শরীরের ভেতর ধীরে ধীরে বড় করে মা যখন উপযুক্ত সন্তান প্রসব করে, তখন তার দায়িত্ব এবং কষ্ট আগের থেকে আরও বেড়ে যায়। সে প্রচ- সচেতন হয়ে ওঠে সন্তানের সব বিষয়ে। স্তন পান করানো থেকে শুরু করে মুখে খাবার খাওয়ানোÑ অন্য যে কোন দায়িত্ব থেকে মায়ের মনোযোগ থাকে সন্তানের প্রতি ভীষণভাবে এককেন্দ্রিক। মায়ের এক ধরণের মনঃস্তাত্বিক ধারণা তৈরি হয়, তার নেয়া যে কোন সিদ্ধান্তই সন্তানের জন্য মঙ্গলজনক! মায়েদের এই সারল্য বোধ বাস্তবে অনেক সন্তানকে বিপদের সম্মুখীন করে। এক্ষেত্রে দুটো বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিক উল্লেখযোগ্য। এক, না বুঝে সন্তানকে অধিক পরিমান খাবার খাওয়ানো। দুই, অতিমাত্রায় শিক্ষিত করা বা শিক্ষার সর্বচ্চ স্বীকৃতি লাভের চেষ্টা। আজকাল এই বিষয়গুলো অপরিণত মানব সন্তানের জন্য রীতিমতো প্রহসন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক লেখাপড়া জানা শিক্ষিত মায়েরাও এই প্রহসনে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে ঢাকা শহরের এক মায়েরই কথা বলি। শারমিন নীলা। বয়স ছাব্বিশ। স্বামী, ছেলে সন্তান শিশির এবং শাশুড়ি নিয়ে বাস করেন ঢাকার ওয়ারীতে। শিশিরের বয়স এখন ৪ বছর দুই মাস। সন্তান জন্মের পর থেকে শারমিনকে খুব একটা ডাক্তারের দুয়ারে কড়া নাড়তে হয়নি। কিন্তু যখন ছেলের বয়স সাড়ে তিন পর হয়, তখন থেকে প্রায়ই তাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হচ্ছে। কারণ, প্রায়ই শিশির বিভিন্ন অসুখে কষ্ট পায়। প্রথম যেদিন অসুস্থ্য ছেলে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যায়, প্রথমেই ডাক্তার বাচ্চার ওজন মাপে এবং কোন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই বিস্ময়ের সঙ্গে বলেন, ‘করেছেন কি, বাচ্চার তো স্বাভাবিকের থেকে ৫ কেজি ওজন বেশি! ওর যাবতীয় অসুখের প্রধান কারণ হলো, ওভার ওয়েট! ডাক্তার মায়ের কাছে জিজ্ঞেস করেণ, ছেলেকে কি খাওয়ান, কত বার খাওয়ান? মা, দিনে রাতে ৫ বার খাওয়াই। সকালে নরম খিচুড়ির সঙ্গে মাংস। ঘন্টা দু’য়েক পর দুধের সঙ্গে হরলিকস আর ডিম মিশিয়ে এক গ্লাস ককটেল খাওয়াই। দুপুরে বেশিরভাগ দিন নরম ভাত, সবজি ও মুরগির মাংস খাওয়াই। বিকেলে ঘুম থেকে উঠে প্রায় দিন পুডিং অথবা দুধের সঙ্গে চকোস খায়, রাতে মাছ দিয়ে ভাত খায় তবে, মাছ দিয়ে খুব একটা খেতে চায় না। বাইরের খাবার বলতে চকোলেট এবং মাঝে মাঝে একটু-আধটু ফাস্টফুড এইতো। ডাক্তার, আপনারা ওকে প্রয়োজনের থেকে বেশি খাওয়াচ্ছেন। শারীরিক কোন পরিশ্রমও ওকে দিয়ে করাননি। আমার প্রথম পরার্মশ, ওর ওজন কমাতে হবে। ওকে প্রোটিন এবং ফ্যাট জাতীয় খাবার কয়েক মাস একেবারেই কম খাওয়াবেন। দ্বিতীয়ত ওকে সপ্তাহে তিন-চার দিন খোলা মাঠে নিয়ে যাবেন এবং শরীর চর্চায় অভ্যস্ত করবেন। মোটকথা ও যেন ঘাম ঝরিয়ে ক্লান্ত হয়ে যায় সেই ব্যবস্থা করবেন। আপাতত এগুলো মেনে চলুন সঙ্গে একটি ওষুধ লিখে দিলাম। ওয়ারীর বাসিন্দা শারমিনের এই গল্প এখন ঘরে ঘরে! না বুঝে কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ছোটদের অধিক পরিমাণ পুষ্টিকর খাবার খাওয়ানো যা সত্যিই বিপজ্জনক এবং ফলাফলও দুঃখজনক। প্রসঙ্গে কথাসাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরীর এই উক্তিটি বেশ উপযুক্ত মনে হচ্ছে। ‘আমাদের সমাজে এমন অনেক মা আছেন যাঁরা শিশু সন্তানকে ক্রমান্বয়ে গরুর দুধ গেলানোটাই শিশুর স্বাস্থ্য রক্ষার ও বল বৃদ্ধির সর্বপ্রধান উপায় মনে করেন। দুগ্ধ অবশ্য অতিশয় উপাদেয় পদার্থ, কিন্তু তার উপকারিতা যে ভোক্তার জীর্ণ করার শক্তির ওপর নির্ভর করে এ জ্ঞান ও শ্রেণীর মাতৃকুলের নেই। তাদের বিশ্বাস ও বস্তু পেটে গেলেই উপকার।’ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কি বলছেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ মোহাম্মদ এনামুল হক খান, (সদর হাসপাতাল সুনামগঞ্জ) এর সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলে, মতামত জানতে চাইলে তিনি বলেন, মায়েরা তাদের সন্তানের জন্য সব থেকে ভাল চিন্তা করবে এটা মায়েদের সহজাত প্রবৃত্তি। কিন্তু শিশুর খাদ্য সংক্রান্ত তাদের বেশিরভাগ চিন্তা যে যথোপযুক্ত নয় তা কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানে প্রমাণিত। সুতরাং খাবার খাওয়ানের ব্যাপারে বয়স , ওজন, উচ্চতা এসবের সঙ্গে ঠিকঠিক সামঞ্জস্য রেখে তারপর- খাবার এবং পরিমাণ বিবেচনা করতে হবে। এই যে আজকাল মায়েরা ফলাফল না বুঝে অধিক পরিমাণে খাওয়াচ্ছেন এর ভবিষ্যত কি? ডাক্তার, ‘প্রত্যেকটা বেবির নির্দিষ্ট বয়সে নির্দিষ্ট খাবারের প্রয়োজন। যেমন, শিশুর জন্মের ছয় মাস বা ১৮০ দিন পর্যন্ত কেবল বুকের দুধই আদর্শ খাবার। অর্থাৎ এই বয়স পর্যন্ত তার খাদ্য উপাদান যা যা দরকার সবই আসে মায়ের কাছ থেকে। এটা মেইনটেন করলে ভবিষ্যতে জীবনে শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে শুরু করে ব্রেন ডেভেলপমেন্টে, শারীরিক সক্ষমত সহ অন্যান্য বিষয়গুলো ঠিকঠাক থাকে। আর যে মায়েরা বুকের দুধের পাশাপাশি বাজারের গুঁড়াদুধ, সুজি, চালের গুঁড়া বা আরও কি কি সব খাওয়ান তাদের সন্তাদের বেলায় এই উন্নতিগুলো দেখা যায় না। এত গেল নবজাতকের ক্ষেত্রে, সাড়ে তিন বা চার বছরের বাচ্চাদের বেলায়? হ্যাঁ এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ সময়। আমাদের মায়েরা বাচ্চাদের শারীরিক উন্নতির কথা চিন্তা করে, এই সময়ে ভুল করে থাকেন। অধিক পুষ্টির নামে বাজারের বেশিরভাগ জাঙ্ক ফুড বাচ্চাদের খাদ্য তালিকায় যোগ করেন এবং খাওয়াতে খাওয়াতে একপর্যায় বাচ্চাকে ভীষণ মুটিয়ে ফেলে। বাচ্চার স্বাস্থ্য ভাল রাখা মায়েদের এক ধরনের মনোস্তাত্ত্বি¡ক সন্তুষ্টি! যার ফলে এই সময়ের বাচ্চাদের ছোট থেকেই খুব খারাপ খারাপ রোগের সঙ্গে পরিচয় ঘটছে যেমন- হৃদরোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিকস, শ্বাসকষ্ট নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্যসহ পাকস্থলীর নানা অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে। কাজেই নির্দিষ্ট বয়স, ওজন এবং খাদ্যগুণ বিচার করে বাচ্চাকে খাওয়াতে হবে। সঙ্গে শারীরিক পরিশ্রম অর্থাৎ খোলা জায়গায় খেলাধুলা করার সুযোগ করে দিতে হবে তা হলে এই যে অহরহ অনাকাক্সিক্ষত বিপত্তিগুলো ঘটছে তার থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।’ ধন্যবাদ। সন্তানদের শিক্ষা প্রদানের নামে অসুস্থ কার্যক্রম শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে নতুন কোন শব্দ বা বাক্য আমার থলিতে নেই। এক্ষেত্রে যদি কোন নতুন কথা যোগ করতে হয় তা হলে আমি বলব, ‘এই দূষণের পৃথিবীতে একমাত্র সুশিক্ষাই হলো বিশুদ্ধ অক্সিজেন!’ বিশুদ্ধ অক্সিজেন ছাড়া যেমন প্রাণিকুল টিকে থাকবে না তেমনি, প্রকৃত শিক্ষা ছাড়া এই গ্রহের আয়ু বাড়ানোও সম্ভব হবে না। তাই সুশিক্ষার গুরুত্ব জীবন রক্ষার মতোই! কিন্তু সত্যিকার অর্থে, শিক্ষা গ্রহণ বা প্রদানের নামে যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা বিশ্বব্যাপী চলছে তার প্রকপ আমাদের দেশ এবং সমাজে ভয়ঙ্কর ব্যাধি রূপে ক্রমশ ধ্বংস নিশ্চিত করছে! আমাদের এখন শিক্ষা গ্রহণের নামে কেবল সর্বোচ্চ স্বীকৃতির ছাড়পত্র চাই। ভাবটা এমন যে শিক্ষার ‘খ’ও আমাদের দরকার নেই! দরকার কেবল অক্ষর চেনার জ্ঞান! দুখঃজনক হলেও সত্য আজকাল এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার প্রিতিনিধি হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের অবুঝ মায়েরা। সব মায়েরা চান তার সন্তানকে ক্লাসে প্রথম হবে! বিনিময়ে যে কোন ত্যাগ কিংবা অসৎকর্ম কোন বিষয়ই না! যে কারণে সংসারের অন্য সব কাজ উহ্য রেখে সকাল-বিকাল সন্তান নিয়ে ছুটছেন স্কুল, কোচিং এবং হাউজ টিউটরের পানে। এসব কারণে, এখনকার বাচ্চাদের জীবন মানে কেবল পড়া আর পড়া। এমনকি বাচ্চার পরীক্ষার আগের রাতে অবিভাবকরা নেমে পরেন প্রশ্ন উদ্ধারের অভিযানে। শিক্ষার নামে এই যে অমানবিক অত্যাচার, অপকর্ম এসবের পরিণতি আমার ইতোমধ্যে দেখতে শুরু করেছি। কিভাবে নিষ্পাপ সুন্দর জীবনগুলো ম্লান হয়ে যাচ্ছে, বিপদে চলে যাচ্ছে... বিশেষজ্ঞের মতামত সার্টিফিকেট অর্জনের রেসে এখনকার বেশিরভাগ মায়েরা চান তাদের সন্তানেরা যেন, পাগলা ঘোড়ার মতো ছুটে লেখাপড়ার দুনিয়া দ্রুত জয় করে ফিরে আসে! এ জন্য অবুঝ মানব শিশু পারুক বা না পারুক পেছনে তার ওপর চাবুক চলতেই থাকে! আসলে শিক্ষার আসল উদ্দেশ্য এখন আর আমাদের সমাজে এক্সিস্ট করে না! কেন এই প্রহসন? যানতে চাওয়া হয় মন চিকিৎসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান খান এর কাছে। দেখুন, আমাদের সমাজে শিক্ষিত করার নামে যে প্রহসন সেটা কিন্তু জিইয়ে রাখছে মায়েরা। তাদের সঠিক এবং স্বাভাবিক চিন্তার অনুপস্থিতির অভাবে আজকে এই অবস্থা। কোন কোন ক্ষেত্রে সন্তানের অতি ভাল করার চেষ্টা, এই প্রসঙ্গে আপনাকে আগেই একটা রূপক গল্প শুনিয়েছি। আসলে বাবা-মা সন্তানের সেরা ভালটাই চায় কিন্তু, সব সময়ে সেরাটাই যে সব বাচ্চদের জন্য ভাল হবে তা কিন্তু নয়। সমস্যা হচ্চে অনেক বাবা-মা সন্তানের মধ্যে নিজেদের পুশ করেন এবং নিজেদের অপূর্ণতাকে সন্তানের মাধ্যমে পূরণ করতে চান, এক্ষেত্রে সামাজিক কতগুলো বিষয়ও ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। জনে জনে সন্তানের অর্জনের কথা বলে গর্বিত হওয়ার মনোভাব আজকাল ফ্যাশন হয়ে দাঁড়িয়েছে! আমার সন্তান জিপিএ ফাইভ পেয়েছে, এই কথাটা আমাদের সমাজে এখন কিভাবে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে তার উদাহরণ বলে শেষ করা যাবে না। লেখাপড়া শেখা বিন্দুমাত্র হোক বা না হোক জিপিএ ফাইভ ঘরে ঘরে চাই-ই চাই। দুঃখজনক! এই ফাইভই এখন স্টাবলিস। বাচ্চাদের সৃজনশীল মানসিকতা, আলাদা আলাদা নিজস্বতা, মস্তিষ্কের গঠন এসবের কোন বাছবিচার নেই! সবাই কে দেখতে হবে এক দৃষ্টিতে। সত্যই একবার ভাবুন তো এই অসুস্থ প্রতিযোগিতার কারণে কোথায় গিয়ে দাঁড়াচ্ছে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম। কেন হতে হবে সবাইকে ফার্স্ট? কেন হতে হবে সবাইকে তথাকথিক নামধারী স্কুলের ছাত্র! বিশেষ করে আমাদের মায়েদের এসব অসুস্থ চিন্তা সন্তানের ভবিষ্যত জীবন অসুস্থ করে তুলছে। সন্তানকে বুঝতে হবে। তাকে, তার মতো করে শিখতে দিতে হবে। আর ফার্স্ট কিংবা স্বর্ণময় পিজিএ ফাইফ ধারীরাই যে দেশ ও সমাজের কর্ণধার বনে যাচ্ছে এমন উল্লেখযোগ্য উদারণ ও কি অহরহ? মায়েদের বুঝতে হবে, জীবনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এমন সব বিষয় নিয়েই আমাদের জীবন যে কোন একদিকে ফোকাস করলে বাকি বিষয়গুলো অন্ধকারে থেকে যাবে। কাজেই মানুষের জীবন হোক মানুষের মতোই সৃজনশীল, এমনটাই আমি আশা করি। আমাদের পিতামাতা দেরও এই ভাবনায় ভাবিত হতে অনুরোধ করব, জোয়ারে সব কিছু ভেসে যায় না, কিছু কিছু জিনিস ¯্রােতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে থাকে এবং দাঁড়িয়ে থাকা বস্তুই জোয়ার এবং ভাটা উপলব্ধি করে। মানব জীবনটাও অনুরূপ ভাবতে হবে। গা ভাসালে তো ভেসেই গেলাম...
×