ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাদারীপুরে ১০ টাকা কেজি চাল বিতরণে অনিয়ম

প্রকাশিত: ০৬:৪১, ১ জুন ২০১৮

মাদারীপুরে ১০ টাকা কেজি চাল বিতরণে অনিয়ম

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ৩১ মে ॥ রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নে সরকার থেকে বরাদ্দকৃত অতি দরিদ্র ও দরিদ্রদের মধ্যে জেলা খাদ্য অধিদফতরের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সুলভ মূল্য কার্ড বিতরণে ১০ টাকা কেজির চাল দেয়ার বিষয়ে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, জেলা খাদ্য অধিদফতরের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচীর অংশ হিসেবে সুলভ মূল্যে কার্ড বিতরণে ১০ টাকা কেজি চাল দেয়ার অংশ হিসেবে রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়নের ৯টি ওয়ার্ডে ৭৫০টি কার্ড বিতরণ করা হয়। কার্ডগুলো সরকারের নিয়ম অনুযায়ী অতি দরিদ্র ও দরিদ্র পরিবারের মধ্যে দেয়ার কথা। এর মধ্যে একজন ডিলার চাল বিতরণ করলেও অপর ডিলার বাজিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সিরাজুল ইসলাম হাওলাদারের শাশুড়ি ডেইজি আফরোজের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। এ ছাড়াও চেয়ারম্যানের আত্মীয়-স্বজনের নামে একাধিক কার্ড থাকলেও অনেক কার্ডধারী জানে না তাদের নামে ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড আছে। অনেকে একাধিকবার স্বাক্ষর দিয়ে চাল দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত ধনী ও নিজের সমর্থকদের নামে তালিকা প্রণয়ন করায় এই কর্মসূচীর সুফল পাচ্ছে না দরিদ্ররা। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। অভিযোগ আছে, চালের ডিলার চেয়ারম্যানের আত্মীয় হওয়ায় গরিবদের বাদ দিয়ে, আত্মীয় ও নিজের সমর্থকদের নামে তালিকা করেছেন। এ ছাড়াও এক ব্যক্তির নামে একাধিক কার্ড আছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। বাজিতপুর ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের লোকমান হাওলাদারসহ তার স্ত্রী, মেয়ের নামে রয়েছে কার্ড। কিন্তু তারা কেউ জানে না তাদের নামে ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড আছে। পরিমল চন্দ্র বৈদ্য, সেলিম হাওলাদার, হারুন হাওলাদার ও তার ছেলের নামে ১০ টাকা চালের কার্ড রয়েছে। অথচ এ পর্যন্ত ৭ বার ডিলার চাল বিতরণ করলেও তারা কেউ চাল পায়নি। অভিযোগ রয়েছে ইউনিয়নের বিত্তবান, বাড়িতে পাকা ঘর/টিনশেড বিল্ডিং, আধাপাকা ঘর, ঘরে টিভি ফ্রিজ এবং জমিজমা রয়েছে, এমন পরিবারকেও কার্ড দেয়া হয়েছে। বাজিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের ভাই ৬ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সেলিম হাওলাদার বলেন, আমার নামে কার্ড আছে আমি তো জানি না। আমি ছাড়া আরও শতাধিক কার্ডধারী জানেই না তাদের নামে কার্ড আছে। তারপর ৭ বার চাল দেয়া হয়ে গেছে সেই চালগুলো নিল কে? আমরা জানি না। সব ওই ডেইজি আফরোজ ডিলারের কাজ। ৬ নং ওয়ার্ডের শাহানাজ নামের এক নারী বলেন, ‘আমিসহ আমার পরিবারের ৩ জনের নামে কার্ড হয়েছে এবং এ পর্যন্ত জালিয়াতের মাধ্যমে ৭ বার চাল নেয়ার পর আমি জানতে পারি আমাদের নামে ১৬০ টাকা কেজি চালের কার্ড আছে। এই জালিয়াতির সঠিক বিচার চাই।’ নিপা নামের এক কলেজ ছাত্রী জানায়, ‘আমি ছাত্রী মানুষ, আমার নামে কেন কার্ড করা হয়েছে, আমি তা জানি না। আর কেন আমাকে না জানিয়ে এই কার্ড করেছে তাও জানি না। এই চাল কোন গরিব পরিবারকে দিলে সেই পরিবার ভাল থাকত। এই ৭ বারের চাল কোথায় গেল? আমি প্রশাসনের কাছে জানতে চাই?’ হারুন হাওলাদার নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার ও আমার ছেলের নামে কার্ড করা হয়েছে। আমার নামে বয়স্ক ভাতার কার্ড করা হয়েছে। আমি এর কিছুই জানি না।’ স্থানীয় পরিমল চন্দ্র বৈদ বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। তাই তাদের কাছে কার্ডের বিষয়ে গেলে আমাকে জানিয়ে দেয় আমার নামে কোন কার্ড হবে না। তবে কেন ৬ বার চাল দেয়া হলো? সপ্তমবারের সময় আমার বাড়িতে ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড গেল। ৬ বার আমি তো কোন চাল নেইনি। তাহলে ৬ বার কে টিপসই দিয়ে চাল নিল। আমরা গরিব বলে, অশিক্ষিত বলে আমাদের এইভাবে ঠকাল।’ এ বিষয়ে বাজিতপুর ইউনিয়নের ডিলার ডেইজি আফরোজ বলেন, ‘আমরা কোন প্রকার অনিয়ম করছি না। সকল প্রকার নিয়ম মেনেই চাল বিতরণ করা হচ্ছে।’ বাজিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘নিয়মে আছে সরকারী ভাবে এক কার্ডে নাম থাকলে অন্য আর একটি কার্ড পাবে না। তাই হয়তো অনেক দরিদ্র পরিবার বাদ পড়তে পারে। কিন্তু নিয়ম মতই সব হয়েছে।’ মাদারীপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ সেফাউর রহমান বলেন, কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব। শুধু তাই নয় অভিযোগ প্রমাণিত হলে ডিলারশিপ বাতিলসহ তার বিরুদ্ধে মামলাও হতে পারে।’ মাদারীপুর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ আজহারুল ইসলাম অনিয়মের অভিযোগের বিষয়টি তদন্তসহ ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলে দেব। যাতে সরকারের কোন প্রকার বদনাম না হয়।’
×