ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পোশাক খাতে নারীর ক্ষমতায়ন

অর্থনীতিতে সম্ভাবনা আরও বাড়াবে

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১ জুন ২০১৮

অর্থনীতিতে সম্ভাবনা আরও বাড়াবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ দেশের যেসব কারখানায় নারীদের পদোন্নতি দেয়া হয়েছিল সেসব কারখানার প্রবৃদ্ধিতে নারী সুপারভাইজাররা ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে। এজন্য দেশের পোশাক খাতে নারীদের ক্যারিয়ারের অগ্রগতি নিয়ে প্রচলিত যে অস্বচ্ছ ধারণা রয়েছে তা বদলে যাবার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। পোশাক খাতে নারীর ক্ষমতায়ন অর্থনীতিতে সম্ভাবনা আরও বাড়াবে। গত বুধবার বিশ্বব্যাংকের সহযোগী সংস্থা ও ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপের সদস্য আইএফসির উদ্যোগে ‘কাটিং থ্রু দ্য ক্লোথ সিলিং’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে এসব কথা বলা হয়। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির প্রশিক্ষণ কর্মসূচীর এ মূল্যায়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী নারী সুইং অপারেটরদের প্রশিক্ষণ দেশের তৈরি পোশাক শিল্প খাতে পণ্যের উৎপাদন তত্ত্বাবধানের ক্ষেত্রে নারীদের ভূমিকা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। এ খাত নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি, কর্মক্ষেত্রে কর্মীদের অনুপস্থিতি কমিয়ে আনার মাধ্যমে এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচী কারখানার সুইং লাইনের উৎপাদনশীলতাও বাড়াবে। গড়ে দেশের ২০টি সুইং লাইনের মধ্যে ১৯টিতে সুপারভাইজার হিসেবে পুরুষ কাজ করছে অথচ এক্ষেত্রে প্রোডাকশন লাইনে কর্মীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই নারী। আইএফসির কাজের উন্নতি ও উৎপাদনশীলতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ সুইং লাইনে লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে অত্যন্ত সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী ১৪৪ জন নারী এ কর্মসূচীতে অংশ নিয়েছিলেন; যাদের মধ্যে ৯২ জনকেই এ কর্মসূচী শেষ হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পদোন্নতির সুযোগ দেয়া হয়, যেখানে তাদের মজুরিও বৃদ্ধি পায়। যার মধ্যে ৬০ শতাংশ নারীই এ সুযোগ গ্রহণ করেছেন। প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারী কারখানাগুলোতে নারী সুপারভাইজারের সংখ্যা ৫ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, যেসব কারখানায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারী সুপারভাইজার রয়েছে সেসব কারখানায় গড় উৎপাদনশীলতা পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং প্রোডাকশন লাইনে অনুপস্থিতির সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। আইএফসির এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ করেন পপি আক্তার। এ প্রশিক্ষণের পর তিনি অপারেটর পদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে সুইং লাইন সুপারভাইজার হন। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ নিয়ে পপি আক্তার বলেন, ‘এ প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আমি শিখেছি কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষদের সঙ্গে কিভাবে কথা বলতে হয়, পেশাদারিত্বের সঙ্গে কিভাবে আচরণ করতে হয়, কিভাবে কাজের ধরনের হিসেব রাখতে হয়। পাশাপাশি কিভাবে উৎপাদন ও দক্ষতার সঠিক ব্যবস্থাপনা করে সুবিন্যস্তভাবে কাজ করতে হয় যা আমার ক্যারিয়ারে বিশেষ মাত্রা যোগ করেছে।’ এ নিয়ে আইএফসি বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালের কান্ট্রি ম্যানেজার ওয়েন্ডি ওয়ার্নার বলেন, ‘গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী নারীদের এ প্রশিক্ষণ, প্রডাকশন লাইনের কর্মদক্ষতা বাড়িয়ে তুলেছে।’ বাংলাদেশের পোশাক খাত ৪০ লাখেরও বেশি স্বল্প-দক্ষ মানুষের জন্য আনুষ্ঠানিক চাকরির সুযোগ করে দিয়েছে; যাদের মধ্যে ৬০ শতাংশই নারী। জাপানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ও বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশের সহযোগিতায় আইএফসি ২৮টি পোশাক কারখানার কর্মীদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে। এ প্রশিক্ষণ কর্মসূচীতে অতিরিক্ত অর্থায়ন সহযোগিতা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক চালিত লেটস ওয়ার্ক মাল্টি-ডোনার ট্রাস্ট ফান্ড।
×