ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এখনই ক্রেতায় ঠাসা ফ্যাশন হাউস, শপিংমল

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ১ জুন ২০১৮

এখনই ক্রেতায় ঠাসা ফ্যাশন হাউস, শপিংমল

রহিম শেখ ॥ পোশাক বিলাসীদের কাছে ফ্যাশন হাউসের চাহিদা বরাবরই বেশি। আর এ চাহিদা সামনে রেখে ফ্যাশন হাউসগুলোর কর্মী থেকে শুরু করে তাঁতী, ডিজাইনার, দর্জি, কারিগর, কারুশিল্পীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কারও দম ফেলার ফুসরত নেই। পছন্দের প্রিয় পোশাকটি কিনতে রাজধানীর প্রায় পাঁচ শতাধিক ফ্যাশন হাউস এবং অর্ধশত শপিংমলে ভিড় করছেন ক্রেতারা। নতুন ডিজাইনের বাহারি সব পোশাকের চমক আর চোখ ধাঁধানো বৈদ্যুতিক বাতির ঝলক ক্রেতা আকর্ষণ বাড়াচ্ছে ফ্যাশন হাউসগুলোতে। গতবারের তুলনায় দাম একটু বেশি হলেও বিদেশী পোশাকের কাছে মার খাচ্ছে এসব ফ্যাশন হাউসের পোশাক। দেশী ফ্যাশন হাউসগুলো বলছে, দেশী বাজার থেকে কাপড় কিনতে না পারায় বাধ্য হয়ে বিদেশ থেকে কাপড় কিনতে হয়। ফলে তাদের উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। অন্যদিকে প্রচলিত কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশী পোশাকের অবৈধ অনুপ্রবেশের কারণে কম দামে সেগুলো কিনে ক্রেতারা সন্তুষ্ট হন। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ঈদ কেন্দ্র করে শাহবাগের আজিজ মার্কেট থেকে শুরু করে ধানম-ি, গুলশান-বনানী, উত্তরা, ওয়ারি, পল্লবী, মিরপুর ১ ও ২ সেকশনসহ বিভিন্ন মার্কেট ও শপিংমলের ফ্যাশন হাউসগুলোতে নতুন পোশাকে কানায় কানায় পূর্ণ। দেশী কাপড় দিয়ে দেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সঙ্গে মিল রেখে রুচিশীল এবং মানানসই পোশাক তৈরি করেছে ফ্যাশন হাউসগুলো। কাপড় বোনা, কাটিং শেষে পোশাক তৈরি, ডিজাইন ও হাতের কাজ, ব্লক করা, ওয়াশ, আয়রন থেকে শুরু করে প্রত্যেক পর্বের কারিগরদের এখন মিনিটের ফুরসত নেই। থ্রিপিস, পাঞ্জাবির সঙ্গে অনুষঙ্গ লেস, পুঁতি বা পাথরের সমন্বয় করার কাজ নিয়েও ব্যস্ত কারিগররা। কার আগে কে নতুন ডিজাইনের পণ্য আনতে পারবেন এ নিয়ে চলছে রীতিমতো প্রতিযোগিতা। ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই তাদের ব্যস্ততা বাড়ছে। দেশী এসব ফ্যাশন হাউসে সবচেয়ে বেশি ভিড় করছেন তরুণ-তরুণী, শিশু-কিশোর ও মহিলারা। এ প্রসঙ্গে ফ্যাশন হাউস নিত্য উপহারের বাহার রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিনিয়ত মানুষের আগ্রহ বাড়ছে দেশী পোশাকের প্রতি। এটা অত্যন্ত ভাল দিক। বেচাকেনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখনও আশানুরূপ বিক্রি বাড়েনি। তবে দুই-একদিনের মধ্যে পুরোদমে বিকিকিনি শুরু হবে ফ্যাশন হাউস রঙের কর্ণধার ও ডিজাইনার বিপ্লব সাহা জনকণ্ঠকে বলেন, বর্ষা এবং গরমের কথা মাথায় রেখে এবার নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণী ও শিশুদের জন্য পোশাক তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, এখনও বেচাবিক্রি সেভাবে হয়নি। তবে আশা করছি সামনের দিনগুলোতে বিক্রি জমে উঠবে। বাংলাদশে ফ্যাশন উদ্যোক্তা সমিতির তথ্য মতে, দেশের ফ্যাশন হাউসগুলোতে বছরে আনুমানকি ছয় হাজার কোটি টাকার পোশাক বেচাকেনা হয়। সারা বছর তাদের যে ব্যবসা হয়, তার অর্ধেকেই হয় রোজার ঈদে। বাকি ১১ মাসে লেনদেন অর্ধেক। জানা যায়, দেশে বড় ফ্যাশন হাউসের সংখ্যা প্রায় ৬০/৭০। এর প্রত্যেকটির গড়ে ১০ থেকে ১২ শোরুম রয়েছে। নামী-দামী ফ্যাশন হাউসগুলোর মধ্যে রয়েছে অঞ্জনস, রঙ, আড়ং, অন্যমেলা, নিত্য উপহার, কে ক্রাফট, বিন্দিয়া, ননস, তহুস কালেকশন, চরকা, রেডিয়েন্ট ক্রিয়েশন, বিবিআনা, কুমুদিনী, নাগরদোলা, সাদাকালো, শাহরুখস কালেকশন, বাংলার মেলা, নক্সা, ওজি, লুবনান, প্লাস পয়েন্ট, টেক্সমার্ট, ক্যাটস আই, ইয়োলো, দেশাল, স্বদেশী ও দেশীদশ। এসব ব্র্যান্ডের পণ্য নিজস্ব শোরুমেই বিক্রি হয়। এর বাইরে ছোট-বড় আরও পাঁচ শতাধিক ফ্যাশন হাউস রয়েছে ঢাকায়। এগুলোরও গড়ে দুই থেকে পাঁচটি শাখা রয়েছে। ফ্যাশন হাউসগুলোর সংগঠন বাংলাদশে ফ্যাশন উদ্যোক্তা সমিতির (এফইএবি বা ফ্যাশন উদ্যোগ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে পাঁচ হাজারের মতো ফ্যাশন হাউস রয়েছে। ফ্যাশন হাউস রঙের কর্ণধার বিপ্লব সাহা বলনে, দেশীয় ফ্যাশন হাউসে তৈরি পোশাকের বেশিরভাগই উন্নতমানের কাপড়ে তৈরি। সুতার মানও ভাল। রঙেও থাকছে স্থায়ীত্ব। তারপরও গত কয়েকে বছর ধরে ঈদের বাজারের একটি অংশ দখল করে নিচ্ছে ভারত-পাকিস্তান থেকে আসা নানা ধরনের পোশাক। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের দেশী সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সবকিছুই হারিয়ে যাবে। বরাবরের মতো এবারও ঈদ বাজারে মেয়েদের বিভিন্ন ফ্যাশনের সালোয়ার কামিজের সঙ্গে যোগ হয়েছে সিঙ্গেল কামিজ। সাধারণত বাজারে যে টু-পিস বা থ্রি-পিস পাওয়া যায় তা থেকে সিঙ্গেল কামিজ একটু ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত সিঙ্গেল কামিজের প্যাটার্ন কিছুটা ভিন্ন। গলায় ভারি কাজ, স্ক্রিন প্রিন্টেড বা সুতার ভারি কাজ দিয়ে নক্সা করা থাকে। কিছু আবার ডাবল পার্টের সিঙ্গেল কামিজের নক্সাও পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটি ফ্যাশন হাউস ও শপে দেখা যাচ্ছে নানা ডিজাইনের সিঙ্গেল কামিজ। সিম্পল ও গর্জিয়াস দু’ভাবেই তৈরি করা হয়েছে এসব কামিজ। লং, এক্সট্রা লং এমনকি ফ্লোর টাচ ডিজাইন প্রাধান্য পেয়েছে কামিজের প্যাটার্নে। বর্ষা ও গরমের কথা মাথায় রেখে লিলেন ও সুতিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। তবে এক্সক্লুসিভ পোশাকগুলোতে নেট, বিভিন্ন ধরনের জর্জেট, মসলিন- এসব উৎসবধর্মী কাপড়ও ব্যবহার করা হয়েছে। বিভিন্ন ডিজাইন ভেরিয়েশনে রয়েছে সালোয়ার কামিজের বিশাল সম্ভার। বিভিন্ন ফ্যাশন হাউসের ডিজাইনাররা জানান, এবারের ঈদ সালোয়ার কামিজের আয়োজন থাকছে বেশি। সালোয়ার কামিজ সেকশনে সিঙ্গেল কামিজকে আলাদা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি থাকছে সিঙ্গেল দোপাট্টা, পালাজো ও লেগিংস। পছন্দ মতো যেকোন পোশাক যে-কেউ সহজেই বেছে নিতে পারবেন। সালোয়ার কামিজে প্যাচওয়ার্ক, পাড়, লেস ও ডেকোরেটেড বাটন ব্যবহার করা হয়েছে কাজের মাধ্যম হিসেবে। এ ছাড়া কম্পিউটার এম্ব্রয়ডারি, টাইডাইয়ের কাজও দেখা যাবে। এবারের ঈদ কালেকশনের উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার। এবারে ঈদ পোশাকে একদিকে যেমন পাওয়া যাবে উৎসবের আমেজ, অন্যদিকে পাওয়া যাবে বর্ষার রূপ। সাদা, হলুদ, সবুজ, নীল, বেগুনিসহ সব ধরনের রঙের ব্যবহারে তৈরি করা হয়েছে এসব পোশাক। পাশাপাশি প্রতি বছরের মতো এবারের ঈদে ছেলেদের পাঞ্জাবির কাটিং, প্যাটার্ন, লেন্স ও কালারে এসেছে নতুনত্ব। এবারের ঈদে সিøম ফিটিং পাঞ্জাবির প্যাটার্ন বেশি চলছে। সেই সঙ্গে লং, সেমি লং লেন্থ থাকছে। শর্ট পাঞ্জাবিও করা হয়েছে। তবে এর প্রচলনটা কম। রঙের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল রঙের পাশাপাশি স্টাইপ, হালকা প্রিন্ট এসবও থাকছে। তবে ম্যাটেরিয়াল হিসেবে সুতির কাপড়ই প্রাধান্য পেয়েছে। কারণ গরমের এই সময়ে সুতির মতো আরামদায়ক আর কোন কাপড় হতে পারে না। প্রতিটি ফ্যাশন হাউসেই আলাদা করে সাজানো হয়েছে পাঞ্জাবির ঈদ কালেকশন। ঈদে ট্র্যাডিশনাল পাঞ্জাবির পাশাপাশি হালকা কারুকাজ করা পাঞ্জাবি থাকছে। নানা ধরনের প্রিন্টের নক্সা করা পাঞ্জাবিও থাকছে। এ ছাড়া টাইডাই করা পাঞ্জাবিও পাওয়া যাচ্ছে। হাতা গলায় ও বোতামের ধার ধরে হালকা কাজ করা পাঞ্জাবি বেশ চলছে।
×