ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠকে ব্যবসায়ী নেতাদের আশ্বাস

এবার সময়মতো বেতন বোনাস পাবেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ১ জুন ২০১৮

এবার সময়মতো বেতন বোনাস পাবেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী ১০ জুনের মধ্যে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মে মাসের বেতন এবং ১৪ জুনের মধ্যে উৎসব ভাতা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। রোজার ঈদ সামনে রেখে শ্রমিক নেতাদের দাবির মুখে এ আশ্বাস দেয়া হয়। গার্মেন্টস কারখানায় কাজের পরিবেশ উন্নয়নে গঠিত এ্যাকর্ড-এ্যালায়েন্সকে আগামী ৩১ জানুয়ারির পর আর থাকতে দেয়া হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি আরও বলেন, পোশাক মালিকরা দৃঢ়ভাবে বলেছেন, এবার সময়মতো বেতন-ভাতা দেয়া হবে। আশা করি ঈদের আগে বেতন-ভাতা নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে বৈঠকে বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ এবং এফবিসিআইয়ের নেতারা এই আশ্বাস দিয়েছেন। যদিও পোশাক শ্রমিক ও তাদের সংগঠনগুলোর নেতারা আগামী ২০ রমজান বা ৬ জুনের মধ্যে বেতন ও উৎসব বোনাসের দাবি জানিয়ে আসছিল। ঈদের আগে সময়মতো শ্রমিকদের পাওনা নিশ্চিত করতে এর আগে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ব্যবসায়ী নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকেও তারা নির্ধারিত সময় বেতন-ভাতা পরিশোধের আশ্বাস দেন। সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে মতবিনিময় সভায় পোশাক শিল্পের বড় সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান বলেন, নির্ধারিত সময়েই শ্রমিকদের বেতন-ভাতা দেয়া হবে। কিছু ছোটখাটো সমস্যা থাকবে, সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করব। সবার মতো শ্রমিকরাও হাসি মুখে ঈদ করতে বাড়ি যাবেন। শিল্প পুলিশ ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিজিএমইএর ১৫টি মনিটরিং কমিটি কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমি আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই ১৪ জুন ছুটির আগে বেতন-বোনাস শান্তিপূর্ণভাবে দিয়ে দেয়া হবে। প্রসঙ্গত, প্রতি বছরই ঈদ সামনে রেখে শিল্প শ্রমিকদের বিশেষ করে পোশাক কর্মীদের বেতন-ভাতা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। যার ফলে বিক্ষোভসহ নানা কর্মসূচীতে দেখা যায় শ্রমিকদের। এ বছরও সঠিক সময়ের মধ্যে বেতন-ভাতা পরিশোধ করার দাবি রয়েছে। সিদ্দিকুর রহমান বলেন, যেসব প্রতিষ্ঠান বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমইএ-এর সদস্য নয়, তাদের নিয়ে সমস্যা হয়। এবার তারাও বলেছেন, সময়মতো বেতন-ভাতা দিয়ে দেবেন। এফবিসিসিআই সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। সেফটি ইস্যুতে আমরা অনেক দেশের তুলনায় এখন ভাল অবস্থানে রয়েছি। তিনি বলেন, আপনারা কোন রকম উসকানি ও বিপথগামীদের ষড়যন্ত্রে পা দেবেন না। বেতন-ভাতা বকেয়া রেখে কেউ ঈদ করতে যায়নি, আগামীতেও যাবে না। শ্রমিকদের বেতন-ভাতা বকেয়া রেখে ঈদ করতে যাব না, এটা আমি নিশ্চিত করছি। সভায় বিটিএমএর প্রতিনিধি বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে বেতন-ভাতা পরিশোধ করা হবে। শ্রমিকদের সন্তুষ্ট করেই প্রতিষ্ঠান চালাই। বিকেএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়, শ্রমিকদের বেতন-ভাতা ঠিকমতো দেয়া হবে। সবাই হাসিমুখে ঈদ করতে পারবেন। আমাদের প্রেসিডেন্ট কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন যেন, শ্রমিকরা পাওনা ঠিকমতো বুঝে পান। আগামী ১৪ জুনের পরে বিকেএমইএর আওতাধীন কোন প্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে হলে অবশ্যই সংগঠনের অনুমতি নিতে হবে বলেও জানান তিনি। জানুয়ারির পর এ্যাকর্ড-এ্যালায়েন্স নয় ॥ বাংলাদেশের পোশাক কারখানায় কাজের পরিবেশ উন্নয়নে গঠিত এ্যাকর্ড-এ্যালায়েন্সকে আগামী ৩১ জানুয়ারির পর আর থাকতে দেয়া হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ৩১ জানুয়ারির পর এ্যাকর্ড-এ্যালায়েন্সের বাংলাদেশে থাকার কোন প্রয়োজন হবে না। হাইাের্টে মামলা হয়েছে, কোর্ট সেটা স্থগিত করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা কোর্টে গিয়ে বলবে, আমরা ছয় মাস টাইম দিয়েছি। পৃথিবীর কোন দেশে (এ্যাকর্ড-এ্যালায়েন্স) নেই। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ভিয়েতনামে যেতে পারে না, প্রস্তাবই করতে পারে না যে এ্যাকোর্ড-এ্যালায়েন্স আসবে। চীনে নাই, পাকিস্তানে নাই, ভারতে নাই শুধু বাংলাদেশে, না এটা হবে না। আমরা আত্মমর্যাদাশীল জাতি, এখানে এ্যাকোর্ড-এ্যালায়েন্সের আর প্রয়োজন নেই। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের কারখানাগুলো আমাদের আরসিসি দেখবে। এ্যাকর্ড-এ্যালায়েন্সের মেয়াদ ৩১ জানুয়ারি পরে বৃদ্ধি করার কোন সম্ভাবনা নেই। প্রসঙ্গত, সাভারের রানা প্লাজা ধসের পর ইউরোপীয় ক্রেতাদের উদ্যোগে স্বাক্ষরিত এ্যাকোর্ড অন ফায়ার এ্যান্ড বিল্ডিং সেফটি ইন বাংলাদেশ এবং আমেরিকার ক্রেতাদের উদ্যোগে স্বাক্ষরিত বাংলাদেশ সেফটি এ্যালায়েন্স গঠন করা হয়। ইউরোপীয় চুক্তিটি সংক্ষেপে এ্যাকর্ড নামে পরিচিত। আর উত্তর আমেরিকার বিশ্ববিখ্যাত পোশাক ব্র্যান্ড ওয়ালমার্ট ও গ্যাপসহ ১৭টি প্রতিষ্ঠান জোটবদ্ধ হয়ে এ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স সেফটি ইনিশিয়েটিভ’ গঠন করে। সংক্ষেপে যা এ্যালায়েন্স নামে পরিচিত। তোফায়েল আহমেদ বলেন, রানা প্লাজা ধসের পরে এ্যাকোর্ড-এ্যালায়েন্স আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল। পৃথিবীর কোন দেশে এ্যাকোর্ড-এ্যালায়েন্স নেই।
×