ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অভিজাত রেস্তরাঁ নান্দোসে মশা মাছি তেলাপোকার অবাধ বিচরণ

প্রকাশিত: ০৬:১০, ১ জুন ২০১৮

অভিজাত রেস্তরাঁ নান্দোসে মশা মাছি তেলাপোকার অবাধ বিচরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কথায় বলে বাইরে ফিটফাট, ভেতরে সদরঘাট। এমন অবস্থা রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধানম-ির খ্যাতিমান রেস্তরাঁ হিসেবে পরিচিত নান্দোসের। জমকালো এই রেস্টুরেন্টের ভেতরে ময়লা নোংরা আর আবর্জনায় ভরা। তেলাপোকা, মশা, মাছির অবাধ বিচরণ। সেইসঙ্গে আছে মানুষের শরীরে মারাত্মক রোগব্যাধি সৃষ্টি করার সব কারবার। রেস্টুরেন্টটি যে সস দিয়ে কোন তরকারি রান্না করার কথা, সেই সস তারা কাঁচাই খাওয়াচ্ছে ক্রেতাদের। সাময়িকভাবে এসব সস মুখরোচক হলেও তা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এসব খাবার খেয়ে শরীরে ঘা, চর্মরোগ থেকে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগের জন্ম নিতে পারে। এমন নানা অভিযোগে রেস্টুরেন্টটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা এবং মোবাইল কোর্টকে নানাভাবে প্রভাবিত করার অপরাধে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারকে ১৫ দিনের কারাদ- অনাদায়ে এক লাখ টাকা জরিমানা করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের ভ্রাম্যমাণ আদালত। বৃহস্পতিবার দুপুর দেড়টার দিকে আচমকা ডিএমপির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান ধানম-ির নান্দোস নামের রেস্টুরেন্টটিতে অভিযান চালায়। অভিযানকালে পুলিশসহ ম্যাজিস্ট্রেটকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। স্বাভাবিক কারণেই অভিজাত এলাকা ধানম-িতে এত বড় রেস্টুরেন্টে অভিযানের খবরে কর্তৃপক্ষ বিভিন্নভাবে তদ্বির শুরু করে। নানা জায়গা থেকে ফোন আসা শুরু হয় ম্যাজিস্ট্রেটের ফোনে। কিন্তু কোন কিছুতেই বিচারককে তার অবস্থান থেকে টলাতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত অভিযান শুরু হয়। অভিযান চলে টানা দুই ঘণ্টা। এমন টানা হেঁচড়ার মধ্যেই রেস্টুরেন্টের অনেক নোংরা জিনিসপত্র, মালামাল সরিয়ে পেছন দিক দিয়ে সরিয়ে ফেলা হয়। তারপরেও শেষ পর্যন্ত চালানো অভিযানে যা দেখা যায় তাও রীতিমতো বিস্ময়কর। দেখা যায়, নোংরা রান্না ঘর। ঘরের প্রতিটি জায়গায় বাসি, পচা খাবার রাখা। আর তাতে অনায়াসে তেলাপোকারা রাজত্ব করে বেড়াচ্ছে। টিকটিকি ঘুরে বেড়াচ্ছে। ময়লা কাপড় দিয়ে নোংরা বাসনকোসন ধরা হচ্ছে। সেসব বাসনকোসনেই রান্না হচ্ছে। শুধুমাত্র খাবারটি পরিবেশন করা হয় সুন্দর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জিনিসপত্রের মাধ্যমে। তা দেখেই ক্রেতারা মনে করেন, ভেতরের পরিবেশ ভাল। অনেক ক্রেতাই এমনটাই দাবি করেছেন। তারা জানান, যেভাবে খাবার পরিবেশন করা হয়, আর ভেতরের যে চিত্র দেখা গেল তা সত্যিই বিস্ময়কর ব্যাপার। দেখা যায়, নোংরা রান্না ঘরে পেরি পেরি নামের এক ধরনের সস ময়লা বাসনকোসনের মধ্যে রাখা। সেখানে মিলে শত শত পেরি পেরি সস। সসটি যাচাই-বাছাই করে দেখে দেশের একমাত্র সরকারী মান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান বিএসটিআই। পরীক্ষায় দেখা যায়, আমদানির সময় বিএসটিআইয়ের কাছ থেকে সসটি শুধুমাত্র রান্নার কাজে ব্যবহার করার জন্য ছাড়পত্র নেয়া হয়েছে। অথচ সসটি রান্নায় ব্যবহৃত হচ্ছে না। তারা রান্নায় সস ব্যবহার না করে প্যাকেটজাত করে। এরপর তা ফ্রাইড রাইস, পেরি পেরি চিকেনসহ নানা খাবারের সঙ্গে পরিবেশন করছে। ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান সাংবাদিকদের জানান, তারা কাঁচা সস খাবারের সঙ্গে পরিবেশন করছে। অথচ তার পক্ষে কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তাই বিএসটিআই অধ্যাদেশ অনুযায়ী এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া অস্বাস্থ্যকর নোংরা পরিবেশে রান্নার জন্য ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে আরও এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এসব সস মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে চিকিৎসকদের ভাষ্য। এদিকে অভিযানের সময় নান্দোস রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার আবু সিদ্দিকুর রহমান মজুমদার নানাভাবে সময়ক্ষেপণ ও ফোন দিয়ে মোবাইল কোর্টকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেন। এজন্য তাকে বিএসটিআই অধ্যাদেশ অনুযায়ী ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদ- দেয়া হয়েছে। অনাদায়ে আরও এক লাখ টাকা জরিমানা করেন বিচারক। একই অভিযানে ধানম-ির নাসিম স্কয়ারের ক্রিমসন কাপ ক্যাফেতে অভিযান চালিয়ে ক্যাফের নিজস্ব বিস্কুটে বিএসটিআইয়ের লোগো, উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণ না থাকায় বিএসটিআইয়ের অধ্যাদেশে এবং পেস্ট্রিতে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ না থাকায় মোট দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অভিযান শুরুর পরপর ভবনে অবস্থিত আল-আমার লেবানিজ কাবাবসহ অন্যান্য রেস্টুরেন্টগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। অভিযানে বিএসটিআইর প্রতিনিধি ছাড়াও মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ ও মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
×