ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এনসিসিসির সভায় সিদ্ধান্ত

জেএসসি-জেডিসিতে বিষয় ও নম্বর দুটিই কমছে

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১ জুন ২০১৮

জেএসসি-জেডিসিতে বিষয় ও নম্বর দুটিই কমছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমাতে অবশেষে চলতি বছরের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা থেকেই কমছে বিষয় ও নম্বর। জেএসসি ও জেডিসিতে তিনটি করে বিষয় কমানোর সঙ্গে সঙ্গে দুই পরীক্ষাতেই ২০০ নম্বর কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম সমন্বয় কমিটির (এনসিসিসি) সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে এখন জেএসসিতে ৮৫০ নম্বরের পরিবর্তে ৬৫০ নম্বর এবং জেডিসিতে এক হাজার ৫০ নম্বরের পরিবর্তে ৮৫০ নম্বরের পরীক্ষায় বসতে হবে শিক্ষার্থীদের। শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানদের সুপারিশ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে টানা তিন দফা বৈঠকের পর বৃহস্পতিবার এনসিসিসি’র সভায় নম্বর ও বিষয় কমানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এলো। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসেইনের সভাপতিত্বে সভায় আরও ছিলেন কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ আলমগীর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মোঃ আখতারুজ্জামান, বুয়েটের সাবেক শিক্ষক ইনামুল হক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহারিচালক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হকসহ অন্যান্য শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান। নতুন ঘোষণা অনুসারে জেএসসি-জেডিসিতে এতদিন বাংলা ও ইংরেজীর দুটি করে পত্রে ১৫০ করে নম্বরের পরীক্ষা হতো। এখন বাংলা ও ইংরেজীতে আর আলাদা পত্র থাকবে না। একেকটি বিষয়ে ১০০ নম্বরের পরীক্ষা হবে। এছাড়া জেএসসি-জেডিসির চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়ন করা হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসেইন বলেন, অষ্টমের সমাপনী এই পরীক্ষায় চতুর্থ বিষয়সহ ১০টি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হতো শিক্ষার্থীদের। এখন বাংলা ও ইংরেজীর দুটি এবং চতুর্থ বিষয়ের পরীক্ষা আর দিতে হবে না। শিক্ষার্থীদের ওপর থেকে চাপ কমাতে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। জেএসসিতে এখন ৮৫০ নম্বরের পরিবর্তে ৬৫০ নম্বর এবং জেডিসিতে ১০৫০ নম্বরের পরিবর্তে ৮৫০ নম্বরের পরীক্ষায় বসতে হবে শিক্ষার্থীদের। বাংলা ও ইংরেজীর বিষয় কমায় ১০০ নম্বরের জন্য সিলেবাস নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে জানিয়ে সোহরাব হোসেইন বলেন, এমন হতে পারে এমসিকিউ এক লাইন লিখতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে হোসাইন সাংবাদিকদের জানান, শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের সংগঠন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সুপারিশের আলোকে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা থেকে সাতটি বিষয়ে মোট ৬৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব করেছে। সেটি আমরা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। নতুন সিদ্ধান্ত অনুসারে গণিত, ধর্ম, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ের পরীক্ষা আগের মতো আগের নম্বরেই অনুষ্ঠিত হবে। সচিব আরও বলেন, বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ করা হয়েছে শিক্ষার্থীদের ওপর লেখাপড়ায় চাপ দেয়া হচ্ছে। এসব বিষয় আমলে নিয়ে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় বিষয় ও নম্বর কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে এখানে শিখন ফলাফল অক্ষুন্ন রেখে নম্বর এবং বিষয় কমানো হয়েছে, যাতে একজন শিক্ষার্থী সঠিক শিক্ষাটা আয়ত্ব করতে পারে। শিক্ষার লক্ষ্য যেন ব্যাহত না হয়। বিভিন্ন বোর্ড চেয়ারম্যানদের সুপারিশের ভিত্তিতে বিষয় এবং নম্বর কমানো হয়েছে। সে অনুযায়ী সিলেবাসও তৈরি করা হবে। যেহেতু বিষয় এবং নম্বর কমানো হয়েছে তাই শিক্ষার্থীদের ওপর এর কোন চাপ পড়বে না। সচিব জানান, ২০১৯ সালে আমরা কারিকুলামে হাত দেব। তখন আরও বড় আকারে বিষয় কমবে। কারণ তখন আমরা সবকিছু ভাবনা চিন্তায় রেখেই কারিকুলাম করব। যাতে শিক্ষার্থীরা চাপে না পড়ে। চলতি বছরে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় এমসিকিউ থাকবে কি না সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষাসচিব বলেন, হঠাৎ করে এমসিকিউ বাদ দেয়া যাবে না। তবে আমরা সিস্টেমে পরিবর্তন আনব। হয়ত শিক্ষার্থীদের একলাইন লেখা লাগতে পারে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, এমসিকিউ পুরোপুরি তুলে দিতে হলে আগে শিক্ষাবিদদের সঙ্গে বসতে হবে। এর বিকল্প কী হবে তা ঠিক করতে হবে। এখন মে মাস চলছে। নবেম্বরে পরীক্ষা। মাত্র পাঁচ মাস আগে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দিলে সমস্যা হতে পারে। এজন্য চলতি বছরের জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় এমসিকিউ বাদ দেয়ার কোন পরিকল্পনা নেই। এর আগে গত ৮ মে শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানরা এই দুই পরীক্ষায় নম্বর ও বিষয় কমানোর প্রস্তাব করেছিলেন। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুঃ জিয়াউল হক স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আন্তঃশিক্ষাবোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুঃ জিয়াউল হক জানিয়েছেন, মূলত শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমাতেই বিষয় ও নম্বর কমানোর সুপারিশ করেছিলেন। শিক্ষার্থীদের চাপ কমাতে কিছু বিষয় কমানো দরকার ছিল। তাই চলতি বছর থেকেই জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় ৬৫০ নম্বরের পরীক্ষা নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। আর মাদ্রাসার জেডিসিতে আগেও মোট নম্বর বেশি ছিল জেএসসির তুলনায়। এখন সেখানেও নম্বর কমেছে। উল্লেখ্য, গেল বছর ২০১৭ সালের জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীদের আটটি বিষয়ে ৮৫০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়েছে। বাংলা প্রথমপত্র ১০০, দ্বিতীয়পত্র ৫০, ইংরেজি প্রথমপত্র ১০০, দ্বিতীয়পত্র ৫০, গণিত, ধর্ম, বিজ্ঞান, বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়, গার্হস্থ্য অর্থনীতি/কৃষি বিষয়ে ১০০ করে এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে ৫০ নম্বরসহ মোট ৮৫০ নম্বরের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
×