ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

গিকা চৌধুরীকে গ্রেফতারের নির্দেশ

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১ জুন ২০১৮

গিকা চৌধুরীকে গ্রেফতারের নির্দেশ

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রকাশ্য হুমকি দেয়ার ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর (গিকাচৌ) বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে চট্টগ্রামের মহানগর আদালত ও ফটিকছড়ি থানায়। বুধ ও বৃহস্পতিবার দায়ের এই তিন মামলায় তার বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি এবং রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি এবং অপর একটি মামলায় প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। পুলিশ ইতোমধ্যেই এ সংক্রান্ত মামলার দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে। এদিকে, বুধবার রাতে গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর চট্টগ্রাম নগরীর গুডস হিলের বাড়িতে হামলার ঘটনাও ঘটেছে। বিক্ষুব্ধদের একটি গ্রুপ বাড়ির গার্ড রুম এবং সংলগ্ন অফিসকক্ষে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। ভাংচুর হয় গ্যারেজে থাকা বেশ কটি গাড়িও। সিএমপির কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জনকণ্ঠকে জানান, আদালত থেকে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু হয়েছে জেনেছি। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত নির্দেশনা আমাদের হাতে আসেনি। অনুরূপভাবে কোতোয়ালি থানার ওসি মোঃ মহসিনও জানান, আদালত থেকে গ্রেফতারি পরোয়ানা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গিকা চৌধুরীকে গ্রেফতারে অভিযান শুরু হবে। তিনিও জানান, আদালতের নির্দেশনা কোর্ট পুলিশের মাধ্যমে তারা জানতে পেরেছেন। এখন শুধু অপেক্ষা করছেন গ্রেফতারের নির্দেশনা সংক্রান্ত আদেশটির জন্য। উল্লেখ্য, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী যুদ্ধাপরাধের জন্য মৃত্যুদ-ে দ-িত সালাউদ্দিন চৌধুরীর (সাকাচৌ) সহোদর। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গত মঙ্গলবার বিকেলে ফটিকছড়ি বিএনপির এক আলোচনা সভায় গিকাচৌ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ভাষায় যে বক্তব্য রেখেছেনতা এমনÑ আপনার বাবার চেয়েও আপনার অবস্থা খারাপ হবে। এছাড়া সরকারী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে তীব্র ভাষায় বক্তব্য রাখেন। এতে আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অর্থাৎ বুধবার রাতে ভাংচুর হয় গিকা চৌধুরীর গুডস হিলের সুরম্য ভবনে। রাত পৌনে আটটার দিকে ৫০ থেকে ৬০ তরুণ বাড়ির মূল ফলক টপকে ভেতরে ঢুকে পড়ে। প্রথমে বিক্ষুব্ধরা ভাংচুর চালায় ভবনটির সিকিউরিটি গার্ড রুম এবং সংলগ্ন অফিস কক্ষ। আরও ভাংচুর করা হয় গ্যারেজে থাকা মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার এবং পাজেরো জীপসহ মোট আটটি গাড়ি। বিক্ষুব্ধরা অফিস কক্ষের ভেতর থেকে কিছু ফাইলপত্র বাইরে এনে আগুনে জ্বালিয়ে দেয়। অপরদিকে, পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে গিকা চৌধুরী বুধবার রাতেই চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। কোতোয়ালি পুলিশ জানিয়েছে, তারা ইতোমধ্যে গিকা চৌধুরীর খবর নিয়ে জানতে পেরেছেন, তার অবস্থান ঢাকায়। তিনি গা ঢাকা দিয়ে আছেন। এ সংক্রান্তে ঘটনায় চট্টগ্রামের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শহীদুল্লাহ কায়সারের আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম উদ্দিন মুহুরী। আর মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আল ইমরান খানের আদালতে আরেকটি মামলা করেন চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি। এছাড়া ফটিকছড়ি থানায় অপর মামলাটি দায়ের করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জামাল উদ্দিন। মামলায় বাদী পক্ষের কৌঁসুলি ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী জনকণ্ঠকে জানান, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দায়ের করা মামলাটি গ্রহণ করে আসামি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আর মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। মানবতাবিরোধী অপরাধে ফাঁসির দ-ে দ-িত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মতো তার সহোদর গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীও বেফাঁস কথাবার্তা ও বাহুশক্তি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে বেশ আলোচিত। তিনি এর আগেও প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে অনেক আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছেন। বিএনপির এ নেতা মঙ্গলবার ফটিকছড়িতে স্থানীয় বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে চরম আপত্তিকর মন্তব্য করলেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরিণতি তার বাবার চেয়েও খারাপ হবে। তার এ বক্তব্যের প্রতিবাদে বুধবার ফটিকছড়ি থানায় মামলা করেন উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি জামাল উদ্দিন। আপত্তিকর এ বক্তব্যের খবর প্রচার হওয়ার পর ছাত্রলীগের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় নগর ছাত্রলীগের সাবেক দফতর সম্পাদক আরশেদুল আলম বাচ্চুর নেতৃত্বে বের হওয়া একটি মিছিলে গিকা চৌধুরীর কুশপুতুল দাহ করা হয়। এর কয়েকঘণ্টার মধ্যে হামলা হয় গুডস হিলের বাড়িতে, যে বাড়িটি ’৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও তাদের স্বজনদের ধরে এনে নির্যাতনের জন্য কুখ্যাত হয়ে আছে। এদিকে, গিকাকে গ্রেফতারে আদালতের নির্দেশ এবং সাকা পরিবারের গুডস হিলের বাস ভবনটি বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের হামলার শিকার ও ভাংচুরের ঘটনায় সিএমপি ও জেলা পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে বৈঠক করেছেন। বৈঠক সূত্রে জানানো হয়, আদালতের নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভিযান চালানোর প্রস্তুতি তারা গ্রহণ করেছেন। তবে গিকা চৌধুরীর বাস ভবনটি সিএমপি কোতোয়ালি থানার অধীনে। ভাংচুরের ঘটনাও হয়েছে ওই ভবনে। কিন্তু আদালতের পক্ষে এই সংক্রান্ত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাঁচলাইশ থানাকে নির্দেশনা কেন দেয়া হয়েছে তা নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও নগর আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী বিষয়টি নিয়ে কোন ব্যাখ্যা দিতে পারেননি। পাশাপাশি পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও জানান, গিকা চৌধুরী প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি ফটিকছড়িতে। আর তার বাস ভবনটি ভাংচুর হয়েছে যেটি কোতোয়ালি থানার অধীনে। কিন্তু আদালত পাঁচলাইশ থানাকে নির্দেশনা দিয়েছে তা নিয়ে তিনি কোন কিছু বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত অবহিত হননি।
×