ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অশান্ত পার্বত্যাঞ্চল

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১ জুন ২০১৮

অশান্ত পার্বত্যাঞ্চল

পার্বত্য চট্টগ্রাম আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে। প্রধান দুটি পাহাড়ী আঞ্চলিক সংগঠনের বিভক্ত চার গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও শক্তি প্রদর্শনের মহড়াকে কেন্দ্র করে প্রায় প্রতিদিনই সেখানে ঘটছে গোলাগুলি, হতাহতের ঘটনা। গত কয়েকদিনে বিশেষ করে রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে একাধিক রক্তপাতের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সংগঠন জেএসএস ও ইউপিডিএফের নেতৃত্ব, আধিপত্য বিস্তার ও শক্তির মহড়ায় গত ৬ মাসে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিসহ অন্তত ২৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। অস্ত্রের ঝনঝনানি, শোডাউন ও রক্তপাতের মধ্যে ভূলণ্ঠিত হচ্ছে মানবতা ও মানবিকতা। কয়েকটি গ্রুপের পারস্পরিক সংঘাত, সংঘর্ষ, গোলাগুলি, রক্তপাত ও হানাহানির ঘটনায় সর্বাধিক বিপর্যস্ত হয়েছে পাহাড়ী জনপদের জনজীবন। ফলে অনেক তরুণ-তরুণীকে নিরাপত্তার জন্য ইতোমধ্যে এলাকাছাড়া হতে হয়েছে। সর্বাধিক আতঙ্কে বসবাস করতে হচ্ছে সেখানে বসবাসরত বিপুলসংখ্যক বাঙালী অধিবাসীদের। সবচেয়ে যা দুঃখজনক তা হলো, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাইরে পাহাড়ী জনপদে শান্তি, সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য স্থাপনের জন্য স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নেতৃস্থানীয়দের আদৌ কোন উদ্যোগ-আয়োজন নেই। ১৯৯৭ সালে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগ ও নেতৃত্বে পার্বত্য শান্তি চুক্তি সম্পাদিত হওয়ার পর সঙ্গত কারণেই আশা করা গিয়েছিল যে, ওই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, এতদিনেও তা হয়নি। বরং ইতোমধ্যে কোন কোন অঞ্চল আরও অস্থির ও অশান্ত হয়ে উঠেছে। এর জন্য পাহাড়ীদের পক্ষ থেকে প্রায়ই শান্তি চুক্তির ধারাগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ার অভিযোগ উত্থাপিত হয়ে থাকে। এই অভিযোগ অবশ্য সর্বাংশে সত্য নয়। বরং শান্তি চুক্তি বাস্তবায়নে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকার বরাবরই আন্তরিক ও সচেষ্ট। তবে পার্বত্য অঞ্চলে সর্বাপেক্ষা জটিল সমস্যা ভূমি জরিপ ও বণ্টনের কাজটি এখনও অসম্পন্ন রয়ে গেছে। বিষয়টি সময়সাপেক্ষ এবং জটিলও বটে। আইনী জটিলতাও আছে বৈকি। সর্বোপরি পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসীরা একাধিক ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীতে বিভক্ত। নেতৃত্বের সঙ্কটসহ বহুধাবিভক্ত গোষ্ঠী এমনকি সশস্ত্র পন্থীও বিদ্যমান, যার জের চলমান। এমতাবস্থায় নিজেদের মধ্যে নেতৃত্বহীনতা, পারস্পরিক সন্দেহ ও অবিশ্বাস বিরাজমান থাকলে শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন যে হবে সুদূরপরাহত, তাতে আর সন্দেহ কী? পাহাড়ীদের এই সারসত্য বুঝতে হবে যে, নিজেদের মধ্যে অবিশ্বাস ও অনৈক্য বজায় রেখে এমনকি সশস্ত্র সংগ্রামের পথ বেছে নিয়ে খুব বেশিদূর অগ্রসর হওয়া যাবে না। তাতে তারা নিজেদের গোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের অনিবার্য ধ্বংসই ডেকে আনবে। বরং তাদের উচিত হবে বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মান প্রদর্শন করে পারস্পরিক শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান সুনিশ্চিত করা। নিজেদের মধ্যে বিবাদ ও হানাহানিসহ পাহাড়ী-বাঙালী বিভেদ সর্বদাই অনভিপ্রেত ও অনাকাক্সিক্ষত। বাংলাদেশ ধর্মীয় সম্প্রীতি, শান্তি ও সহাবস্থানের দেশ। সেখানে অবস্থানরত বাঙালীদেরও বুঝতে হবে যে, পাহাড়ীরা তাদের আদৌ শত্রু নয়, বরং ভাই। সংখ্যাগুরুদের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেয়া অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। সে অবস্থায় উভয়পক্ষকেই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে। আগামীতে এই ধরনের ঘটনার যেন আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে এবং সব হত্যার দ্রুত বিচার হয়, তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসনের এবং রাজনৈতিক নেতাদের।
×