ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরা

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১ জুন ২০১৮

নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরা

ঈদ মানে আনন্দ। আর সেই আনন্দে শামিল হতে বাঙালী মুসলমান শহর নগর, বন্দর, গঞ্জ ছেড়ে শিকড়ের টানে গ্রামে যাবার জন্য আকুলি-বিকুলি করে থাকে। এ এক চিরায়ত দৃশ্য। কিন্তু স্বস্তিতে, নির্বিঘ্নে বাড়ি ফেরা সহজতর নয়। সড়ক, রেল, নৌ ও আকাশপথে চলাচল মসৃণ হয়ে ওঠে না ঈদ পূর্ব যাত্রায়। সবখানে এক বেহাল অবস্থা। মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কোন বিকল্প না থাকলেও সে ব্যবস্থা গ্রহণে তেমন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজন আগাম পদক্ষেপ। গুরুত্বপূর্ণ সিগন্যালগুলোতে ট্রাফিক পুলিশ এককভাবে দায়িত্ব পালনে হিমশিম খায়। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে তারা কুলিয়ে উঠতে পারে না। স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা সহযোগী হলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকতে পারে। কিন্তু তেমন উদ্যোগ সব সময় নেয়া হয় না, ঈদের সময় অতিরিক্ত ব্যবসা তথা মুনাফা লাভের আশায় মেয়াদোত্তীর্ণ লক্কড় ঝক্কড় মার্কা গাড়িগুলো, এমনকি নছিমনও হাইওয়েতে চলাচল করে। সড়ক-মহাসড়কগুলোতে হাইওয়ে পুলিশকে সক্রিয় রাখা সঙ্গত। তবে প্রধান বিড়ম্বনা শুরু হয় আগাম টিকেটপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে। ভোগান্তির শুরু এখান থেকেই। টিকেট প্রাপ্তি থেকে শুরু করে ঘরে পৌঁছানো পর্যন্ত পদে পদে বিড়ম্বনা সইতে হয় গ্রামমুখো তথা ঘরমুখো মানুষকে। ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ট্রেন, বাস ও লঞ্চের অগ্রিম টিকেট বিক্রি নিয়ে চলে মহা ঝুটঝামেলা। কালোবাজারে পাওয়া নিয়েও মহাজটিলতা তৈরি হয়। বাড়ি ফেরার প্রস্তুতিটা শুরু হয় রমজান মাসের গোড়াতেই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকে বলেই বাড়িমুখো হওয়ার প্রবণতা বাড়ে। কিন্তু টিকেট মেলে আরও পরে। রমজানের শুরুতে অগ্রিম টিকেট প্রদান শুরু না হওয়ার কারণে রমজানের মাঝামাঝি বা শেষ দিকে এসে আগাম টিকেট বিক্রি করার কারণে দুর্ভোগের মাত্রা বাড়ে। তাই ঈদের কয়েকদিন আগে থেকেই ঘরে ফেরার সব আয়োজন সম্পন্ন করার জন্য সে কী প্রাণপণ প্রচেষ্টা চলে। ঝড়-বৃষ্টিতে মধ্যরাত থেকে দীর্ঘ লাইন দিয়ে টিকেট কেনার বিপত্তি বাড়ে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়। মূল ভাড়ার দ্বিগুণ, তিনগুণ হলেও টিকেট প্রাপ্তির আনন্দ বুঝি অপরিসীম। টিকেট শেষ লটকানো ফলক দেখা এবং পাশে টিকেট কালোবাজারের ফিসফিসিয়ে ‘বাড়তি দাম দিলে পাবেন’ ভাষ্য শোনা চিত্রগুলো পুরনো, এনালগ যুগের। আর এই ডিজিটাল যুগেও এসব দৃশ্যপটের কোন পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায় না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাউন্টারে দাঁড়িয়ে থেকে টিকেট না পাওয়ার ব্যর্থতার ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাড়ে। কিন্তু কিছুই করার নেই। কারণ এই একটা সময়, যখন যাত্রীরা জিম্মি হয়ে যায় পরিবহন ব্যবসায়ীদের দাপটের কাছে। রেলের আগাম টিকেট ব্যবস্থা চালু হলেও টিকেটপ্রাপ্তি যেন মহার্ঘ লাভ। কিন্তু তা-ও হাতেগোনা, যার তার ভাগ্যেই জোটে না। যতই কর্তাব্যক্তিরা হাঁকডাক দেন প্রতিবছর এবারের ঈদে ঘরমুখো মানুষের কোন কষ্ট হবে না। যানবাহনের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, বাড়তি ভাড়া নেয়া হবে নাÑ এসবই বাহুল্যচর্চিত মুখরোচক কথা ছাড়া আর কিছুই নয়। বাস্তবে এসব নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতা আর প্রদর্শিত হয় না। বছরের পর বছর একই চিত্র চলতে থাকার ফলে ঈদে ঘরে ফেরার অর্থ দাঁড়ায় একগাদা দুর্ভোগ। এবার দুর্ভোগের মাত্রা কমবে না, বরং বাড়তে বাধ্য। আগাম বর্ষা এসে বিনষ্ট রাস্তাঘাট আরও বিনষ্ট করছে। বাসের ছাদে যাত্রীদের গাদাগাদি করে আশ্রয় নেয়া মানে দুর্ঘটনাকে ডেকে আনা। রেলের অবস্থা তেমন ভয়াবহ না হলেও বর্ষণজনিত কারণে বহু স্থানে রেললাইনের অবস্থা নড়বড়ে। নৌপথের অবস্থা কম ভয়াবহ নয়। তবু মানুষ বাড়ি যেতে চায়, যেতে হয়, কিন্তু রমজানের শুরুতেই যদি আগাম টিকেট বিক্রি হতো, তবে দুর্ভোগ কমত। অনলাইনে টিকেট বিক্রি সর্বত্র চালু না হওয়ায় বিপত্তি বাড়ে। প্রতিবছরই এ অব্যবস্থা মেনে নিতে হয় যাত্রীদের। যাত্রা নির্বিঘœ করার জন্য তাই আগাম পরিকল্পনা নেয়া উচিত। বাড়ানো উচিত পরিবহন। এভাবে মানুষকে দুর্ভোগমুক্ত করার দায় তো কাউকে নিতেই হবে।
×