ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন

প্রত্যাশা অনুযায়ী মেলেনি প্রাপ্তি

প্রকাশিত: ২২:৫৮, ৩১ মে ২০১৮

প্রত্যাশা অনুযায়ী মেলেনি প্রাপ্তি

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ চতুর্থ পর্যায়ের নির্বাচনকে সামনে রেখে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) ৩০টি ওয়ার্ডের সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে সচেতন নগরবাসী ইতোমধ্যে নানা হিসেব-নিকেশ কষতে শুরু করেছেন। সর্বশেষ তৃতীয় পরিষদের নির্বাচিত মেয়রের কাছে নগরবাসীর প্রত্যাশা কতটুকু ছিল আর কতোখানিইবা পূরণ হয়েছে তা নিয়ে জনকন্ঠের বিশেষ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নগরবাসীর দুর্ভোগের নানান চিত্র। সনাকের সভাপতি গাজী জাহিদের মতে, প্রাচ্যের ভেনিস বরিশাল নগরী আজ ময়লার ভাগাড়ের পাশাপাশি জলাবদ্ধতায় পরিণত হয়েছে। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ফুটপাথ দখল করে রাখায় পথচারীর চলাচলে মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি হলেও বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই। এসব সমস্যা সমাধানে সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের কোন ভূমিকা নেই। অথচ নির্বাচনের পূর্বে আজকের মেয়রের কাছে নগরবাসীর অনেক প্রত্যাশা ছিল। সে অনুযায়ী কোন প্রাপ্তি মেলেনি। তিনি আরও বলেন, বর্তমান থেকে শিক্ষা নিয়ে আসন্ন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে সৎ, যোগ্য ও দক্ষ প্রার্থীকেই নগরবাসী বেঁছে নেবেন। বরিশাল সরকারী বিএম কলেজের সিনিয়র অধ্যাপক নারী নেত্রী শাহ্ সাজেদার মতে, সিটি কর্পোরেশন নগরবাসীর চাহিদার বিশাল একটি স্থান। সেইস্থানের সুযোগ-সুবিধা পেতে নিয়মিত কর পরিশোধ করা সত্ত্বেও নগরবাসী তাদের চাহিদা অনুযায়ী সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্ছিত রয়েছেন। ড্রেনেজ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পরেছে। জলাবদ্ধতা ও ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে পুরো নগরী। বিসিসি থেকে অবাধে থ্রী-হুইলার যানবাহন নগরীতে চলাচলের সুযোগ করে দেয়ায় যানজট এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। ফুটপাথ দখলের কারণে পথচারীর চলাচলে মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। এসব সমস্যা সমাধানে মেয়র কখনই কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। বরং সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণের সময়কার সকল উন্নয়নমূলক কাজ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আজ ম্লান হয়ে যাচ্ছে। তিনি (শাহ্ সাজেদা) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হিরণের মৃত্যুর সাথে সাথে নগরবাসীর প্রাপ্তিরও মৃত্যু হয়েছে। তাই আসন্ন নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থীকে বেঁছে নেয়ার জন্য তিনি নগরবাসীর প্রতি আহবান করেন। খেলাঘরের জেলা সভাপতি জীবন কৃষ্ণ দে বলেন, সৎ-নিষ্ঠাবান, আদর্শবাদী, যে প্রয়াত সফল মেয়র শওকত হোসেন হিরণের মতো নগরবাসীর জীবনমানের উন্নয়নসহ সাধারণ মানুষের কথা ভেবে তাদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে পৌঁছবেন সেই প্রার্থীকে আগামী নির্বাচনে সমর্থন দেয়া হবে। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিসিসির দ্বিতীয় পরিষদের নির্বাচিত মেয়র শওকত হোসেন হিরণের উন্নয়নমূলক কাজের পর নগরীতে চোখে পড়ার মতো আর কোন উন্নয়ন হয়নি। এমনকি রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তার (হিরণের) উন্নয়নমূলক কাজ আজ বিলীন হয়ে যাচ্ছে। নগরীর সুরম্য ফুটপাথ দীর্ঘদিন থেকে দখল করে রেখেছে একশ্রেণীর সুবিধাভোগী। ফলে পথচারীসহ শিশুদের এখন রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকার হতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, নগরীর উন্নয়ন তো দূরের কথা বিসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে গিয়েই প্রায় আন্দোলনের সম্মুখীন হতে হয় বর্তমান মেয়রকে। জেলা মহিলা পরিষদের সাবেক সভাপতি নুরজাহান বেগম বলেন, কর্মজীবী নারীদের জন্য নারীবান্ধব প্রকল্প গ্রহণের জন্য দীর্ঘদিন পূর্বে বর্তমান মেয়রের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হলেও আজও তা আলোর মুখ দেখেনি। আগামী নির্বাচনে যে প্রার্থী নারীদের অগ্রাধিকারভিত্তিতে মূল্যায়ন করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এগিয়ে আসবে তাকেই নারী ভোটাররা সমর্থন দেবেন। জলাবদ্ধতা পিছু ছাড়ছে না নগরবাসীকে ॥ সামান্য একটু বৃষ্টিতেই নগরীর ব্যস্ততম প্রধান সড়কসহ নিন্মাঞ্চলের বসত বাড়ি, রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজের মাঠ তলিয়ে গেলেও দীর্ঘদিনে এরকোন স্থায়ী সমাধান করতে পারেনি সিটি কর্পোরেশন। ফলে জলাবদ্ধতা নিয়ে নগরবাসীর ক্ষোভ দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটবে আসন্ন সিটি নির্বাচনে। এমনটাই জানিয়েছেন সচেতন নগরবাসী। স্থানীয় সংবাদ কর্মী তানভির আহম্মেদ অভি বলেন, নগরীর জেল খাল, লাকুটিয়া খাল, আমানতগঞ্জ খাল, সাগরদী খাল ও টিয়াখালী খালের অস্তিত্ব সংকটের (দখল) কারণে এখন মৃত প্রায়। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থা কিংবা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে একটু বৃষ্টিতেই নগরীতে হাঁটু পানি জমে দীর্ঘসময় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে খালগুলো সংস্কারের জন্য কয়েক বছর পূর্বে প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও আজও তা আলোর মুখ দেখেনি। সম্প্রতি সময়ে জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে জেলখালকে দখলমুক্ত করা হলেও সংস্কারের অভাবে আজও তার সুফল পায়নি নগরবাসী। নগরীতে জমে থাকা বৃষ্টির পানি পরিকল্পিতভাবে সিটি কর্পোরেশনের ড্রেন দিয়ে ওইসব খালে প্রবাহিত হতে না পারার কারণেই সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর রাস্তাঘাট ও ঘর বাড়ি তলিয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। সমাজ সেবক মোর্শেদ মামুন বলেন, সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীর সদর রোড, নবগ্রাম রোড, বগুড়া রোড, কালীবাড়ি রোড, মল্লিক রোড, ব্রাউন্ড কম্পাউন রোড, লঞ্চঘাট, বাস র্টামিনালসহ বিভিন্ন সড়কে হাঁটু সমান পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে নগরবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়াও নগরীর ৯নং ওয়ার্ডের কীর্তনখোলা নদীরতীরের রসুলপুরচরসহ নিন্মাঞ্চলের অসংখ্য বাড়ি ঘর পানি জমে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি (মোর্শেদ মামুন) বলেন, আসন্ন সিটি নির্বাচনে শুধুমাত্র জলাবদ্ধতার জলের মতোই বিএনপির প্রার্থী অন্যত্র ভেসে যাবে। সূত্রমতে, সর্বশেষ বরিশাল সিটি করর্পোরেশনের তৃতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৩ সালের ১৫ জুন। তখন এখানে ভোটার ছিল দুই লাখ ১১ হাজার ২৫৭ জন। বর্তমানে ভোট বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৩৭ হাজার ৬০৭ জনে। সর্বশেষ নির্বাচনে সাবেক মেয়র আওয়ামীলীগ নেতা শওকত হোসেন হিরণকে হারিয়ে ৮৩ হাজার ৭৫১ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামাল। এবারও তিনি (বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামাল) বিএনপির মনোনয়ন পেতে জোর লবিং করে যাচ্ছেন। পাশাপাশি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দসহ তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থক থেকে শুরু করে সাধারণ ভোটারদের একমাত্র প্রার্থী হয়ে দীর্ঘদিন থেকে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন মহানগর আওয়ামীলীগের যুগ্ন সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ।
×