ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অভিজাত মিষ্টি ‘রসে’র কারখানায় ইঁদুর তেলাপোকার বসতি

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ৩১ মে ২০১৮

অভিজাত মিষ্টি ‘রসে’র কারখানায় ইঁদুর তেলাপোকার বসতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অভিজাত মিষ্টির দাবিদার রস। খোদ রাজধানীতেই রয়েছে ২১ আউটলেট। প্রতিটি দোকানেই চোখ ধাঁধানো ডেকোরেশন। এখানকার এক কেজি মিষ্টির দাম রাখা হয় ৫শ’ থেকে পনেরো শ’ টাকা। এ মিষ্টি বিত্তবানেরাই বেশি কেনেন। এমন ব্র্যান্ড ইমেজের মিষ্টির কারখানায় তৈরি করা হয়- তা দেখে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাজ্জব বনে যায়। বুধবার রাজধানীর ডেমরা ভাঙ্গা এলাকায় রসের কারখানায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে অভিযানে ধরা পড়ে ভুতুড়ে ও নোংরা পরিবেশ, যেখান তেলাপোকা ইঁদুর ও বেড়ালের রাজত্ব। বড় পাতিলে থরে থরে সাজানো রসগোল্লার ওপর তেলাপোকা রীতিমতো দাপিয়ে বেড়ায়। ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম সেখানে দাঁড়িয়ে দেখেন তেলাপোকার কা-। এই পাতিল থেকে ওই পাতিলে তেলাপোকা দৌড়াচ্ছে, মাঝে মাঝে রসগোল্লায় ঠোকর দিচ্ছে। তখন বেশ ক’জন তেলাপোকার সঙ্গে সেলফি তোলায় ব্যস্ত। ওদিকে ইঁদুরের দৌড়। পিছুৃ ধাওয়া নেয় বিড়াল। এমন সব মজার চিত্র দেখে আদালতের বিজ্ঞ হাকিম সারওয়ার আলম কিংকর্তব্যবিমূঢ়। তার সামনে কারখানার দু’ শ্রমিককে দেখা গেছে একটা বড় কড়াই থেকে তেলাপোকা ধরে সরিয়ে ফেলতে। অপরজন পাশের একটি রুমের নোংরা ময়লা পরিষ্কার করতে থাকেন। উপস্থিত অভিযানকারীরা আশপাশের সব ক’টি মিষ্টির কড়াই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেন। তখন তাদের চোখে পড়ে একটি গামলায় নোংরা কাপড় দিয়ে মিষ্টি ঢেকে রাখা। পাশের একটায় ময়লা চিনি। এক পাতিলে দুধ-তাতে ছত্রাক। স্যাঁতসেঁতে মেঝের ওপর ছড়ানো ছিটানো ময়লার স্তূপ। চিনির বস্তায় পোকা মাকড়ের বসবাস। মাছির ভনভনানি। কেন এমন বিশ্রি অবস্থা জানতে চান সারওয়ার আলম। উপস্থিত ম্যানেজার মফিজুর রহমান কোন জবাব দিতে পারেননি। আরও তিন কর্মচারী মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। কারও মুখে জবাব নেই। ম্যাজিস্ট্রেট নিজেও হতবাক। এমন পরিবেশেই প্রতিদিন তৈরি হয় মণকে মণ মিষ্টি। যা রস-ব্র্যান্ডের মাল হিসেবে বিক্রি করা হয় চড়া দামে। এমন অভিজাত কিনে খাচ্ছে বিত্তবানেরা। ম্যাজিস্ট্রেট যা দেখেছেন-তার কোন কিছুই গ্রহণযোগ্য নয়। মানদ-ের বিচারে কোনটাই গ্রহণীয় নয়। এ অবস্থায় জরিমানা করেন ১২ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে সময় বেঁধে দেন সাতদিন। এ সময়ের মধ্যে অবশ্যই পরিবেশ পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে হবে। নইলে আবার এসে গোটা কারখানাই সিলগালা করে দেবেন। তাতে সম্মত হওয়ায় চলে আসে ভ্রাম্যমাণ আদালত। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিষয়ে টের পেয়ে কিছু আগেই পেছন দিয়ে দৌড়ে পালায় রসের মালিক। মীনা বাজারে ফের অভিযান ॥ এ দিকে রাজধানীতে সুপারশপ মীনা বাজারে আবারও অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় নিষিদ্ধ ঘোষিত পেরিয়ার মিনারেল ওয়াটারের বোতল পেয়েছে ডিএমপির ভ্রাম্যমাণ আদালত। ফ্রান্সের পেরিয়ার ব্র্যান্ড বেশ কয়েকবার বাংলাদেশে এই মিনারেল ওয়াটারের ব্যবসা করতে চেয়েছিল। কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর একে ছাড়পত্র দেয়নি বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)। বুধবার দুপুরে মীনা বাজারের লালবাগের এতিমখানা রোড শাখায় এই অভিযান চালানো হয়। অভিযানের নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মশিউর রহমান। এ সময় নিষিদ্ধ পণ্য ছাড়াও বাজারটি থেকে পচা, দুর্গন্ধযুক্ত মাছ-মাংস জব্দ করা হয়। বিএসটিআই অধ্যাদেশ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে মীনা বাজারের দুই কর্মকর্তাকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
×