ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মধুপুরের বেগুন রফতানি হচ্ছে বিদেশে

প্রকাশিত: ০৪:১১, ৩১ মে ২০১৮

মধুপুরের বেগুন রফতানি হচ্ছে বিদেশে

ইফতেখারুল অনুপম, টাঙ্গাইল ॥ টাঙ্গাইলের মধুপুরে বেগুনের বাম্পার ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। অধিক লাভজনক হওয়ায় ধান ছেড়ে বেগুন চাষে ঝুঁঁকছেন এ উপজেলার কৃষকরা। বেগুন চাষ করে একদিকে কৃষকরা যেমন আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। রোজার সময়ে বেগুনের চাহিদা পূরণ করছেন। অন্যদিকে দেশের মানুষের পুষ্টি ও সবজির চাহিদা পূরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। মধুপুরের বেগুন এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। সরেজমিনে জানা যায়, মধুপুর উপজেলার কুড়ালিয়া ইউনিয়নের কদিমহাতীল, টিকরী, কোনাবাড়ী, কুড়াগাছা ইউনিয়নের পিরোজপুর, গোলাবাড়ী ইউনিয়নের গোলাবাড়ী গ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামে গত কয়েক বছর ধরে বোরো মৌসুমে তাদের জমিতে বোরো ধান চাষ না করে বেগুন চাষ শুরু করেছেন। অধিক লাভজনক হওয়ায় এলাকার প্রত্যেক কৃষকই ২০ শতক থেকে সর্বোচ্চ ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমিতে বেগুনের চাষ করেছেন। এসব এলাকায় মাঠে-মাঠে এখন কেবল বেগুনের ক্ষেত। এ এলাকার কৃষকরা হাইব্রিড ও নসিমন এবং যশোরের ইসলামপুরী ও সাদা গুটি জাতের বেগুন চাষ করেছেন। উপজেলার মধুপুরের পোদ্দারবাড়ী গ্রামের রুহুল আমীন (৩৫) তিনি এবার কুড়ালিয়া ইউনিয়নের কদিমহাতীল গামের ২৪ বিঘা জমি লিজ নিয়ে বেগুন চাষ করেছেন। তিনি হাইব্রিড ও নসিমন জাতের বেগুন চাষ করেছেন। তার বেগুন খেতে এবার ভাল ফলন হয়েছে। প্রতিদিন সে গড়ে প্রায় ৭০০ কেজি বেগুন বিক্রি করতে পারছেন। বাজারে বর্তমানে ২ হাজার থেকে ২২০০ টাকা মণ বেগুন বিক্রি হচ্ছে। ফলে বেগুনে যা ব্যয় করেছেন তার চেয়ে লাভ হচ্ছে বহুগুণ বেশি। শুধু রুহুল আমীন নয়। মধুপুরে এ রকম প্রায় ৪০ জন বেগুন চাষী রয়েছেন। তারাও অনুরূপভাবে ৬০০ থেকে ৮০০ কেজি বেগুন বিক্রি করে থাকেন। বেগুন চাষীদের হিসাব মতে শুধু মধুপুরেই প্রতিদিন ২০ লাখ টাকার বেগুন উৎপাদন হচ্ছে। এখানকার বেগুনসহ মধুপুরের সবজি রফতানি হচ্ছে বিদেশের মাটিতেও। বেগুন বিক্রি করে রুহুল আমীনের মতো অনেক চাষী স্বাবলম্বী হচ্ছেন। বেগুন চাষে আশপাশের অনেক শ্রমিকেরও কর্মস্থানের সৃষ্টি হচ্ছে। হাইব্রিড ও নসিমন জাতের বেগুন রোপণ করে ৫০-৬০ দিনের মাথায় বেগুন পাওয়া যায়। বর্তমানে আড়তদাররা ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি দরে কৃষকের কাছ থেকে ক্রয় করছেন বিদেশে পাঠানোর জন্য। রুহুল আমীন জানান, অন্যান্য ফসলের চেয়ে বেগুনে লাভ পাওয়া যায় বেশি। তাই এ জাতের বেগুন চাষ করেছি। রমজানে বেগুনের দাম আরও বাড়বে। বিকল্প পন্থায় আড়তদারদের মাধ্যমে বেগুন বিদেশে যাচ্ছে। জটাবাড়ী গ্রামের সোবহান মিয়াও ২৫ বিঘা জমি ৫ বছরের জন্য লিজ নিয়ে গত দুই বছর ধরে বেগুন চাষ করছেন। জব্বার মিয়া নামে আরেক কৃষক এ বছর ২৫ বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। তিনি একদিনে ৫০ মণ বেগুন তুলে ২ হাজার ২০০ টাকা প্রতি মণ দরে ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় পাইকারি বিক্রি করেছেন। গোপালপুর গ্রামের জামাল উদ্দিন ৪৫ শতক জমিতে এবং পিরোজপুর গ্রামের একরামুল হক ২ বিঘা জমিতে ও জাহিদুল ইসলাম জাহিদ ১ বিঘা জমিতে বেগুনের চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। বেগুন চাষীরা জানান, এক বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করলে সব মিলিয়ে খরচ পড়ে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। ধান পাওয়া যায় সর্বোচ্চ ২০ থেকে ২২ মণ। প্রতি মণ ৭শ’ টাকা হিসেবে উৎপাদিত ধানের বাজার মূল্য সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ৪শ’ টাকা। উৎপাদন খরচ বাদ দিলে কৃষকের ঘরে তেমন লাভ থাকে না। অপরদিকে এক বিঘা জমিতে বেগুন চাষ করতে সর্বোচ্চ খরচ পড়ে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। সেখানে পুরো মৌসুমে বেগুন পাচ্ছেন প্রায় দেড়শ’ মণ। বর্তমান বাজার অনুযায়ী গড়ে প্রতি মণ বেগুন পাইকারি পর্যায়ে বিক্রি করছেন ২ হাজার থেকে ২২০০ টাকা। খরচ বাদ দিয়ে কৃষকরা ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করছেন। যার ফলে যে এলাকায় কোন দিন সবজি চাষ সম্ভব ছিল না। সেখানকার কৃষকরা বেগুন চাষে এগিয়ে এসেছেন। বেগুন বিক্রি করতে কখনো কৃষকদের কষ্ট করে হাটে বাজারে যেতে হয় না। পাইকারি কাঁচা তরকারি ব্যবসায়ীরা সরাসরি ক্ষেত থেকে নগদ টাকায় কিনে নিয়ে যান। এতেও তারা অনেক বেশি লাভবান হচ্ছেন। পাইকারি বেগুন ক্রেতারা জানিয়েছেন, মধুপুর থেকে প্রতিদিন ৮-১০ ট্রাক বেগুন কিনে তারা ঢাকা, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম ও বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে থাকেন। বেগুন চাষীরা জানান, বাজারে ভেজাল কীটনাশকের কারণে কৃষকের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।
×