ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ মূলত বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির -স্বদেশ রায়

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ৩১ মে ২০১৮

‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ মূলত বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির -স্বদেশ রায়

গণজাগরণ মঞ্চ সৃষ্টি ও হেফাজতের বিদায়ের পরে জামায়াতে ইসলামীর থিঙ্কট্যাঙ্করা বুঝে ফেলে জামায়াতের মূল নেতাদের কারও আর ফাঁসির হাত থেকে বাঁচানো যাবে না। তখন তারা বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়, যার কিঞ্চিত চিত্র জেল থেকে লেখা কামারুজ্জামানের চিঠিতে আছে। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া জামায়াতে ইসলামীর থিঙ্কট্যাঙ্কের ওই সিদ্ধান্তগুলোর ভেতর গুরুত্বপূর্ণ ছিল : তারা ধরে নেয়, আগামীতে অন্তত পনেরো বছর জামায়াতে ইসলামী স্বনামে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারবে না। এ অবস্থায় তাদের সংগঠনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য তারা বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। যার ভেতর অন্যতম- তারা বিভিন্ন সেবা ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে শহরের মহল্লায় মহল্লায় তাদের রাজনীতি খুব সূক্ষ্মভাবে প্রচার করে যাবে। অন্যদিকে তারা যেমন বিএনপিতে প্রকাশ্যে আছে, তেমনি গোপনেও কিছু অংশ আওয়ামী লীগে ঢুকে যাবে। আওয়ামী লীগে তাদের ঢুকে যাওয়ার মূল উদ্দেশ্য, আওয়ামী লীগ সংগঠনকে দুর্বল ও বিতর্কিত করা। অন্যদিকে তারা পনেরো বছর ধরে চেষ্টা করবে বিএনপিকে সম্পূর্ণরূপে গ্রাস করতে। এছাড়া তারা তাদের চরিত্রটা এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যাবে যাতে যারা এখন বিএনপি করছে তারা সহজেই এই সংগঠন করতে পারে। তাদের থিঙ্কট্যাঙ্কদের বিশ্বাস, তারা যদি পনেরো বছর এভাবে এগুতে পারে তাহলে বিএনপির বদলে তাদের সেই পরিবর্তিত নামের সংগঠনই হবে এ দেশে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ। যেহেতু তাদের নতুন সংগঠনে চিহ্নিত কোন যুদ্ধাপরাধী থাকবে না। অন্যদিকে ছাত্রদের নিয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেয়, ছাত্ররা মূলত সাধারণ ছাত্রদের মধ্যে প্রথমে ধর্মীয় অনুভূতি জাগিয়ে রাখার চেষ্টা করবে। তারা গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে এবং যাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করবে তারা যাতে অন্য কোন বিষয়ে পড়াশোনা না করে শুধু ধর্মীয় পড়াশোনা ও আচার-আচরণের মধ্যে জীবনকে আটকে রাখে সেই চেষ্টা করবে। পাশাপাশি সব সময়ে চেষ্টা করবে সাধারণ ছাত্রদের প্রতারিত করে কীভাবে তাদেরকে সঙ্গে রাখা যায়। এ ছাড়া তাদের একটি অংশ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠনের মধ্যে ঢুকে পড়বে। ঢুকে তাদের মূল লক্ষ্য থাকবে প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা শহরে ছাত্রলীগের যেসব গুরুত্বপূর্ণ কর্মী আছে, তাদের বিতর্কিত করা ও প্রয়োজনে নিজেদের ভেতর কোন্দল লাগিয়ে তাদের হত্যা করা। এছাড়া অনাকাক্সিক্ষত কিছু হত্যাকা-ে ছাত্রলীগকে জড়িত করে তাদের জেলে ঢোকানোর ব্যবস্থা করা। পাশাপাশি তাদের মূল সংগঠন জামায়াতে ইসলামী যেমন বিভিন্ন নামে বিভিন্ন সময়ে তাদের সংগঠনকে বাঁচিয়ে রাখা, তাদের রাজনীতি বাঁচিয়ে রাখার কাজ করছে, তেমনি কাজ ছাত্র সংগঠনেও করবে। তাদের ভাষায় এগুলো দাওয়াতি সংগঠন। প্রয়োজনে একেক সময়ে একেক নাম নিচ্ছে। তাদের ছাত্র সংগঠনও একই কাজ করবে। তারাও সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলনের নামে বিভিন্ন বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত করার চেষ্টা করবে। ১৩ সালে এ সিদ্ধান্ত নিয়ে জামায়াতে ইসলামী বসে নেই। তাদের কর্মকা- বিশেষ করে তারা গ্রামাঞ্চলে ধর্মের নামে কী কাজ করছে, তা যদি বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও সমাজ গবেষকরা নিবিষ্ট মন নিয়ে কাজ করেন, তারা যদি সে ছবি তুলে আনেন, তাহলে দেখা যাবে এক ভয়াবহ চিত্র। তাদের প্রথম কাজ হচ্ছে ধর্মকে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করে, ব্যাখ্যা করে মেয়েদের নানা বাঁধনে বেঁধে ফেলা। যাতে নারীরা বাইরে আসতে না পারে। এছাড়া তারা স্কুলপড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদেরও মগজ ধোলাই করছে নানা উছিলায়। ১৩ থেকে ১৮, এই পাঁচ বছরে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের ছাত্র সংগঠন সব থেকে বেশি সফল হয়েছে তথাকথিত কোটাবিরোধী আন্দোলনে। এই আন্দোলনে তারা আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগসহ বামপন্থী সকল ছাত্র সংগঠনকে প্রতারিত করতে পেরেছে। আর এর সঙ্গে প্রতারিত করতে পেরেছে হাজার হাজার সাধারণ ছাত্রকে। আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ও বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলো এভাবে প্রতারিত হওয়ার পরে এখন তারা কী করবে, নিজেদের কীভাবে সাজাবেÑ তাদের প্রতিটি সংগঠনের ভেতর যে ছাত্রশিবির ঢুকে পড়েছে, তাদের কীভাবে বের করবেÑ এ সব বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি এখনও। এমনকি তারা এখনও সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পারেনি তাদের প্রতারিত করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে নামিয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যঙ্গ করে রাজপথে প্ল্যাকার্ড নিয়ে নেমেছে। আর রাজাকারের সন্তান যেগুলো সেগুলো তো শরীরে ‘আমি রাজাকার’ লিখেই নেমেছে। অন্যদিকে নারীদেরও বাইরে আসার পথ তারা বন্ধ করতে পেরেছে অনেকখানি। এগুলো সবই জামায়াত ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাফল্য। জামায়াত অত্যন্ত সুচতুর সংগঠন। তাই তারা যখনই দেখেছে তাদের ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে তারা একটি সাফল্য অর্জন করেছে, তখনই সে সাফল্যকে ধরে রাখার চেষ্টায় তারা তাৎক্ষণিকভাবে নেমে গেছে। যে কোন রাজনৈতিক বা সামাজিক সাফল্য, এমনকি যে কোন সাফল্য ধরে রাখতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন পড়ে তার একটি সাংগঠনিক রূপ দেয়া। সে কাজটি তারা ইতোমধ্যে করেছে। ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ নামে তারা বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাংগঠনিক কাঠামো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে অনেকগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ইতোমধ্যে দাঁড় করিয়েছে। তারা যে ইসলামী ছাত্রশিবির তার আরও একটি বড় প্রমাণ, তারা যদি কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী হতো তাহলে কোটা বাতিল হয়ে যাওয়ার পরেও তাদের এ সংগঠন কেন করতে হবে? এ থেকেও প্রমাণিত হয়, কেবলমাত্র ছদ্মনামে ইসলামী ছাত্রশিবিরকে দাঁড় করানোর জন্যই তারা এ সংগঠন করেছে। অর্থাৎ ১৩ সালে জামায়াত যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তারা এ মুহূর্তে তাদের সংগঠনের নামে কোন রাজনীতি করবে না, তারা আগামী ১৫ বছর বিভিন্ন নামে তাদের সংগঠন করবে, এটা তাদের সফলতম একটি অধ্যায়। এই বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের একজন নেতা রাশেদ ইতোমধ্যে ইসলামী ছাত্রশিবিরের সদস্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বাস্তবতা বলে, রাশেদ এদের ভেতর সব থেকে ছোট মাপের শিবির, তাই সহজে ধরা পড়েছে। বাদবাকি সবই খুবই সুচতুর শিবির সদস্য। তাই এখনও উন্মোচিত হচ্ছে না। প্রকৃতভাবে খোঁজ নিলে দেখা যাবে, সবাই শিবিরের সদস্য। এদের সমর্থক একজন আমার ফেসবুকের সদস্য ছিল। তার প্রোফাইল পিকচারে বঙ্গবন্ধুর ছবিও আছে এক কোনায়। কিন্তু কয়েকটি স্ট্যাটাসের পরে দেখলাম সে লিখেছে, আজ পহেলা বৈশাখ সারাদিন বাসায় ছিলাম। কোন নতুন পোশাক পরিনি। বিধর্মীদের এই অনুষ্ঠানে যেতে হয়নি বলে মনটা খুব খুশি। তার এ স্ট্যাটাস থেকে বোঝা যায়, এর আগের কয়েক বছর তাকে যেতে হয়েছিল পরিস্থিতির চাপে। এবার তারা কোটাবিরোধী আন্দোলন করে দেশে রাজাকারী চেতনা এমন জাগাতে পেরেছে যে, সে এবার তার মনের মতো কাজ করতে পেরেছে। এ যেমন এই ছেলে সম্পর্কে একটি দিক। তেমনি আরও একটি দিক ভেবে দেখার আছে, ছাত্রলীগ বা বাম সংগঠনের ছাত্রদের নামে কারা গত কয়েক বছরে পহেলা বৈশাখে নারীদের কাপড়-চোপড় নিয়ে টানাটানি করেছে এবং কী উদ্দেশ্যে করেছে? তা এই ছেলেগুলোকে চিহ্নিত করে প্রশাসনের মাধ্যমে ও রাজনৈতিক সংগঠনের মাধ্যমে খোঁজ নিলেই বোঝা যাবে। যা হোক, গ্রামে গ্রামে জামায়াত যেমন বিভিন্ন দাওয়াতি সংগঠন গোপনে চালিয়ে যাচ্ছে, এখানে তারা সে গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারেনি। যে কোন ভাবেই হোক ধরা পড়ে গেছে, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ মূলত বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ছদ্মনাম। এদিক থেকে মাহমুদুর রহমান মান্নাকেও ধন্যবাদ দিতে হবে। তিনি এই কোটা বিরোধীদের উদ্দেশে বলেছেন, শেখ মুজিবের ছবি নিয়ে আর জয়বাংলা স্লোগান দিয়ে তো রক্ষা পেলেন না। ছদ্মনামে আন্দোলন হয় না। মাহমুদুর রহমান মান্না এদের বন্ধু হয়েও মূলত এদের মুখোশ কিছুটা হলেও খুলে দিয়েছেন। যা হোক, এখন তারা প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নামে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের শাখা খুলতে শুরু করেছে। তাই প্রগতিশীল সকল ছাত্র সংগঠনের এ মুহূর্তের কর্তব্য হবে, অবিলম্বে এই ছদ্মনামের ইসলামী ছাত্রশিবিরকে প্রতিহত করা। শুরুতেই এদের প্রতিহত করতে না পারলে এরা প্রকৃত নামে যে ক্ষতি দেশের করত, তার থেকে অনেক বেশি ক্ষতি করবে। একটাই শুধু উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, প্রকৃত নামে ইসলামী ছাত্র শিবির এখনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢোকার সাহস পেত না, কিন্তু ছদ্মনামে তারা ঢুকে গেছে। আর এই ছদ¥ নামে ঢুকেছে বলে জামায়াত-শিবিরের চিহ্নিত মিডিয়ার বাইরে তাদের পক্ষে ছদ্মাবরণে যে মিডিয়া আছে, তারাও এদেরকে বুক ফুলিয়ে সমর্থন দিচ্ছে। সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কেউ কেউ আবার বলে, তাদের বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিল। এক্ষেত্রে তাদের বাপের বয়স দেখা হোক। দুই. তাদের বাপদের প্রশ্ন করা হোক, কোথায় তারা যুদ্ধ করেছে, তাদের কমান্ডারের নাম কি ছিল? এই দুটি প্রশ্নে দেখা যাবে সব জারিজুরি ফাঁস হয়ে যাবে। অনেক জামায়াতী টকশোতে এসে নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেয়। এরাও ঠিক তেমনি। তবে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অবিলম্বে সব ছাত্র সংগঠন মিলে এই ছদ্মনামের শিবিরকে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিহত করতে হবে। এদের দাঁড়াতে দিলেই এরা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে। তাই শুরুতেই সমূলে উৎপাটন করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। [email protected]
×