ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যাতায়াত হোক নিরাপদ

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৩১ মে ২০১৮

যাতায়াত হোক নিরাপদ

ঈদ উদযাপনে নিরাপদে ও নির্বিঘেœ ঘরমুখো হওয়ার নিশ্চয়তা তেমন মেলে না। শত সহস্র দুর্ভোগ, বিড়ম্বনা সহ্য করে, কষ্টসাধ্য পরিশ্রমের পর বাড়ি ফেরার আনন্দ তবু পায় মানুষজন। ঈদ মানেই তাদের কাছে প্রিয়জনের সান্নিধ্য। তাই যে কোন মূল্যে শহর, নগর, বন্দর, গঞ্জ ছেড়ে গ্রামমুখো কিংবা অন্য শহরমুখো হওয়ার মধ্যেই যেন প্রাণের আনন্দ ও উচ্ছ্বাস জেগে ওঠে। কিন্তু তাতে ছাই ঢালে যাতায়াতের ক্ষেত্রের বিড়ম্বনাগুলো। এদেশের মানুষের এক বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো শত বিড়ম্বনা সহ্য করেও ঈদে বাড়ি ফেরা। গ্রামের বাড়িতে পরিবার পরিজন ও আত্মীয় স্বজনকে নিয়ে ঈদ পালন করার আনন্দই আলাদা। বর্তমানে ঈদ মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব নয়, সবার উৎসবে পরিণত হয়েছে। সব ধর্মের মানুষ এ উৎসবকে আনন্দের বড় উৎসব হিসেবে গ্রহণ করেছে। ঈদে ঘরে ফেরার আনন্দ যেমন রয়েছে, তেমনি বিড়ম্বনাও। বাড়ি যাওয়ার শত ভোগান্তি ও বিড়ম্বনাকে মানুষ ঈদের আনন্দের অংশ হিসেবেই মেনে নিতে বাধ্য যেন। তাই ঝুঁকি নিয়ে হলেও মানুষ বাড়ি যেতে চায়। অতিরিক্ত যাত্রী ও যানবাহনের চাপের ফলে দুর্ঘটনা ঘটে। এমনিতেই খানাখন্দ ও যানজটে বিধ্বস্ত সড়ক-মহাসড়ক। তাই ঈদে বাড়ি ফেরা নিয়ে সঙ্কিত মানুষ। তবে আগামী আট জুনের মধ্যে সড়ক মেরামতের নির্দেশ দিয়েছেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী। কিন্তু কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সন্দিহান যাত্রীরা হতেই পারেন। জোড়াতালির এই মেরামত বিপদ কমায় না, খানাখন্দে ভরা সড়ক মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় চলছে নির্মাণকাজ। কিন্তু এরই মধ্যে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় কাদামাটি, ইটের খোয়ায় একাকার হয়ে গেছে সড়কগুলো। একদিকে বৃষ্টিতে উঠে যাচ্ছে ইট খোয়া ও পিচ ঢালাই। অপরদিকে সড়ক মেরামতের অব্যবস্থাপনায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে যানবাহনগুলোকে। তদুপুরি রয়েছে ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও অদক্ষ চালক। রয়েছে সড়কজুড়ে যত্রতত্র বাজার ও পার্কিং। সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে সততার ঘাটতি থাকায় কোন রাস্তাই দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে না। বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে প্রতিবছর ঈদ পূর্ব যাতায়াতকালে দুর্ঘটনায় মানুষ মারা যাচ্ছে। নাড়ির টানে বাড়ি ফেরার অমানবিক কষ্টের মধ্যেও মানুষকে পড়তে হচ্ছে অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি ও ছিনতাইকারীদের কবলে। তারা প্রাণহরণেও সিদ্ধহস্ত। প্রতিবছর ঈদের আগে নামমাত্র রাস্তা মেরামতের নামে চলে হরিলুট। আর যাত্রীদের ভুগতে হয় দুর্ভোগ। ঈদের সময় আঞ্চলিক রুটের অনেক বাস চলে আসে মহাসড়কে। এতে যানজট বাড়ে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বহাল থাকলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ। এমনিতে রাস্তাঘাট বর্ষণে আক্রান্ত হয় জলাবদ্ধতায়। খানাখন্দ পরিণত হয় মরণফাঁদে। জনসংখ্যা হ্রাসে সড়ক পরিবহন যে ‘দক্ষতা’ প্রদর্শন করে বছরব্যাপী, ঈদে এর মাত্রা আরও বাড়ে। ঈদ এলেই মেরামতের নামে যা হয়, তা আর কর্তব্য নয়। কেন আরও আগে এই কাজ করা হয় না, তার জবাব মেলে না। কর্তৃপক্ষ বর্ষা এলে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি আর সংস্কারের নামে যা করে, তা অর্থের অপচয় একদিকে, অপরদিকে সংশ্লিষ্টদের হয় পোয়াবারো। এবারের ঈদে ঘরমুখো মানুষের অনেককে যন্ত্র দানবের তা-বের শিকার হয়ে পরপারে যাবার পথ সুগম হয়। সড়কে মড়ক লেগে গেলে আনন্দ পরিণত হয় নিরানন্দে। রেলের অবস্থাও সুবিধের নয়। যদিও এদেশে সবচেয়ে নিরাপদ ও আরামদায়ক হলো রেল ভ্রমণ। কিন্তু সেখানেও ঠাঁই নেই। রেললাইনের অবস্থা বর্ষণজনিত কারণে বহু স্থানে নড়বড়ে। আগাম টিকেট কিনেও বগিতে মেলে না ঠাঁই। আশ্রয় নিতে হয় ছাদে। যা অত্যন্ত ভয়াবহ। কালোবাজারিদের দাপট বাড়ে টিকেট বিক্রিতে। তদুপরি রেল চলে ধীর গতিতে। নৌপথের অবস্থা কম ভয়াবহ নয়, বহন ক্ষমতার অধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলো যেভাবে ছুটে চলে, তা দুর্ঘটনার আশঙ্কাকে সামনে আনে। অধিক ভাড়ায় টিকেট কিনে লঞ্চে কোনরকমে আশ্রয় নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যেতে হয় দাঁড়িয়ে। আর বর্ষা মৌসুমে নদী ভয়ঙ্করভাবে ফুঁসে উঠবেই। লাখ লাখ বাড়তি নৌযাত্রী পরিবহনের লক্ষ্যে অকেজো পরিত্যক্ত নৌযানগুলোকে কোনরকমে মেরামত ও রং লাগিয়ে যাত্রী পরিবহন যখন করে, তখন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থেকেই যায়। ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের জন্য কোন দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনাও নেয়া হয় না। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনেও বাধা দেয়া হয় না। ট্রেন, লঞ্চ, বাসের স্বল্পতা যাত্রীদের দুর্ভোগ বাড়ায়। আনন্দ উদযাপনে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতে চাই স্বস্তি, নিরাপত্তা। জীবনবাজি রেখে মানুষকে এভাবে বাড়ি ফেরার দুর্ভোগ লাঘবে সংশ্লিষ্টরা আগাম সতর্ক ব্যবস্থা নেবেনÑ সেই প্রত্যাশা দেশবাসীর।
×