ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মেয়েকে বিয়ে করতে জোর করায় যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বাবা-মায়ের কারাদণ্ড

প্রকাশিত: ০৭:৪৫, ৩০ মে ২০১৮

মেয়েকে বিয়ে করতে জোর করায় যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বাবা-মায়ের কারাদণ্ড

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ নিজেদের ১৮ বছর বয়সী মেয়েকে বাংলাদেশে নিয়ে গিয়ে বিয়ে করতে জোর করায় বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এক দম্পত্তিকে দোষী সাব্যস্ত করেছে যুক্তরাজ্যের একটি আদালত। চাচাত ভাইকে বিয়ে করতে চাপ দেয়ায় আগামী ১৮ জুন তাদের বিরুদ্ধে দণ্ড ঘোষণা করা হবে। মঙ্গলবার বিচারক বলেছেন তারা সেদিন তাৎক্ষণিক কারাবাসের প্রস্তুতি নিতে পারেন। আইনগত কারণে ওই বাবা-মা এবং মেয়ের নাম প্রকাশ করা হয়নি। লিডস ক্রাউন আদালতের বিচারক বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে সহিংসতা ব্যবহার, হুমকি দেয়া ও মেয়েকে বিয়ে করতে জোর করার অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছেন। খবর মিরর ও মেইল অনলাইনের। প্রসিকিউটর মিশেল কোলব্রোন আদালতকে বলেন, ঘটনার শিকার মেয়েটিকে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশে নেয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই বিয়ের পরিকল্পনার কথা জানানো হয়। ঘটনার বিবরণে মেয়েটি জানিয়েছে আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে সাক্ষাত ও ঈদ পালনের জন্য ছয় সপ্তাহের ছুটি কাটানোর উদ্দেশে তাকে বাংলাদেশে নেয়া হয়েছিল। মেয়েটি আদালতকে জানিয়েছেন তার বাবা কয়েক বছরে ধরেই এই পরিকল্পনা করেছেন বলে তাকে বলেছেন। আগে ধারণ করা এক সাক্ষাতকারে মেয়েটি আদালতকে বলেছেন, ‘তিনি বলেছেন ছেলেটি সত্যিই উপযুক্ত, আমি তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ দিয়েছি আর ছেলেটি এখানে থাকার মতো যথেষ্ট আকর্ষণীয়। তিনি আমাকে হ্যাঁ বলানোর চেষ্টা করেছেন কিন্তু কোন অবস্থাতেই হ্যাঁ বলিনি। আমার কাছে এটা বিরক্তিকর লেগেছিল কারণ সে আমার আপন চাচাত ভাই।’ উত্তর ইংলান্ডের লিডসে জন্ম আর বেড়ে ওঠা মেয়েটিকে বারবার বলা হয়েছে বিয়ে হলে সে ‘রানীর মতো থাকবে’। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা বাবা-মায়ের জন্য ‘লজ্জা বয়ে আনবে’ বলেও তাকে বলা হয়েছে। মেয়েটি আরও জানায় তার মা তাকে পেটানোর জন্য বাবাকে চাপ দিয়েছে। মায়ের বিশ্বাস ছিল এর ফলে বিয়ের বিরুদ্ধে কথা বলা বন্ধ করবে মেয়েটি। এখনও স্কুল পড়ুয়া মেয়েটি তার মাকে বলেছিল তাকে বিয়ে করতে জোর করা হলে যা ঘটেছে তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দায়ের করবে। মেয়েটি বিচারককে জানায়, কিন্তু আমার মা বলেছিল সেটা কখনই হবে না। কারণ তারা আমাকে একবছরের জন্য ছেড়ে যাবে আর এর মধ্যে আমি গর্ভবতী হয়ে যাব। তাতে আমার চাচাত ভাইটি যুক্তরাজ্যের ভিসা পেয়ে যাবে। বিয়ের কয়েকদিন আগে নিজের ছোট বোনের সহায়তায় ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশন অফিসে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয় মেয়েটি। তারাই তাকে উদ্ধার করে। বিয়ের পরিকল্পনা জানার পর লিডসে নিজের ছেলেবন্ধুকে পাঠানো বেপরোয়া বার্তাগুলোও আদালতকে দেখানো হয়। মঙ্গলবার রায় ঘোষণার সময়ে মেয়ের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ওই বাবা-মা। তবে রায় ঘোষণার পর তারা কোন প্রতিক্রিয়া দেখাননি। যুক্তরাজ্যে জোর করে বিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে আইন কার্যকর হয় ২০১৪ সালের জুনে। তবে এই আইনের আওতায় বিচারের ঘটনা বেশ কম। গত সপ্তাহে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নারীকে নিজের মেয়েকে তার দ্বিগুণ বেশি বয়সের এক আত্মীয়কে বিয়ে করতে জোর করার দায়ে কারাদণ্ড দেয়া হয়।
×