ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

২১ চিকিৎসকের ১৭টিই শূন্য

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ৩০ মে ২০১৮

২১ চিকিৎসকের ১৭টিই শূন্য

সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা থেকে ॥ চিকিৎসক সঙ্কটের কারণে জেলার মদন উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। ২১ চিকিৎসকের জায়গায় মাত্র পাঁচ চিকিৎসক দিয়ে চলছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম। এ কারণে প্রতিষ্ঠানটির সেবার মান অত্যন্ত নিম্নমানে এসে ঠেকেছে। সাধারণ চিকিৎসার জন্যও রোগীদের নির্ভর করতে হচ্ছে বাণিজ্যিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর ওপর। অথবা ছুটতে হচ্ছে জেলা সদর বা ময়মনসিংহে। জানা গেছে, মদন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের মোট পদ আছে ২১। এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ ১৭ চিকিৎসকের পদ শূন্য। কর্মরত চারজনের মধ্যেও একজন আছেন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। অন্যদিকে ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকের পদ আছে আটটি। এর বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় ওই দু’জনও এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সাময়িক দায়িত্ব পালন করছেন। অর্থাৎ সব মিলিয়ে মাত্র পাঁচ চিকিৎসক দিয়ে চলছে ৫০ শয্যার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। কর্মরত ওই পাঁচজনের মধ্যে একজন কার্ডিওলজিস্ট। আর বাকি চারজনের প্রত্যেকে মেডিক্যাল অফিসার। অর্থাৎ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সব পদই শূন্য। গাইনি, মেডিসিন, অর্থোপেডিক্স, সার্জারি, শিশু, সনোলজি, প্যাথলজি, নাক-কান ও গলা ও দন্ত প্রভৃতি বিশেষায়িত বিভাগের কোন চিকিৎসক নেই এখানে। সূত্র আরও জানায়, মেডিক্যাল এ্যাসিস্টেন্ট, সেবিকা, ওয়ার্ডবয় প্রভৃতি পদও অসংখ্য শূন্য। মেডিক্যাল এ্যাসিস্টেন্ট আছেন মাত্র দু’জন। সুইপার আছেন মাত্র একজন। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে নোংরা-আবর্জনাময় হয়ে আছে পুরো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ওদিকে হাসপাতালের ভর্তিকৃত রোগীদের ওয়ার্ডগুলোও জরাজীর্ণ। খসে পড়ছে ছাদের প্লাস্টার। পাশে কয়েক বছর আগে একটি নতুন ভবন নির্মাণ করা হলেও স্যুয়ারেজ লাইন ব্লকেজের কারণে সেটিতে রোগীদের স্থানান্তর করা যাচ্ছে না। অতি সাধারণ এ সমস্যাটির সমাধান না হওয়ায় তেমন কোন কাজেই আসছে না নতুন ভবনটি। এদিকে আল্ট্রাসনোগ্রাফির চিকিৎসক না থাকায় আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিনটির আজও প্যাকেটই খোলা হয়নি। বাইরের বাণিজ্যিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে অধিক খরচে আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে হয় রোগীদের। মল-মূত্র ও রক্তের পরীক্ষা বা এক্সরেও করানো যায় না সচরাচর। ভারপ্রাপ্ত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ ফজলে বারী ইভান এসব সমস্যার কথা স্বীকার করে জানান, প্রতিদিন এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ রোগী ভর্তি থাকে। এছাড়া বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেয় কমপক্ষে এক থেকে দেড় শ’ রোগী। কিন্তু এ পর্যাপ্ত চিকিৎসক এবং কর্মচারী না থাকায় সেবা দিতে গিয়ে আমাদের রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। সিভিল সার্জন ডাঃ তাজুল ইসলাম বলেন, শুধু মদন নয়, জেলার অনেক হাসপাতালেই চিকিৎসকের সঙ্কট রয়েছে। শূন্য পদগুলো পূরণের জন্য আমরা উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করছি। এছাড়া নতুন ভবনটির সমস্যার বিষয়টিও কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। হয়তো শীঘ্রই সমাধান হবে। আমতলী ও তালতলী নিজস্ব সংবাদদাতা আমতলী, বরগুনা থেকে জানান, আমতলী ও তালতলী উপজেলার পাঁচ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় চিকিৎসক আছে মাত্র চারজন। দুই উপজেলায় ৩৯টি চিকিৎসকের পদ থাকলেও ৩৫ পদ শূন্য। আমতলীর ৫০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক হাসপাতালের নতুন ভবনে ক্রটিপূর্ণ বৈদ্যুততিক সংযোগের কারণে অধিকাংশ ফ্যান অকেজো। শৌচাগারে কোন লাইট নেই। তালতলী ২০ শয্যা ও কুকুয়ার ১০ শয্যা হাসপাতালের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। তিনটি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ও ৭টি ইউনিয়ন ক্লিনিকে কোন চিকিৎসক নেই। এতে ভেঙ্গে পরেছে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবা। সামান্য অসুখ হলেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর যেতে হয় শহরের কোন হাসপাতালে। আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ এবং তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক চিকিৎসক দিয়ে চলছে স্বাস্থ্য সেবা। জানা গেছে, আমতলী ও তালতলী দুই উপজেলার তিনটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, তিনটি উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ও ৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য এ্যান্ড হেলথ ক্লিনিকের ৩৯টি চিকিৎসকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে আমতলী উপজেলা ৫০ শয্যাবিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১ চিকিৎসকের মধ্যে রয়েছে ৬ জন। এর মধ্যে ডাঃ মোনায়েম সাদ প্রেষণে পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে, জিকু শীল ও ডেন্টাল চিকিৎসক রকিবুল আলম ২ মাসের বেসিক ট্রেনিংয়ে রয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসকসহ তিন জন দিয়ে চলছে উপজেলার সাড়ে তিন লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা। তালতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬টি চিকিৎসকের পদ রয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসক আছে মাত্র ১ জন। ওই একজন চিকিৎসক দিয়ে চলে দেড় লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা। কুকুয়া ১০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২টি চিকিৎসক পদের বিপরীতে কোন চিকিৎসক নেই। গুলিশাখালী, গাজীপুর ও তালতলী উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ৭টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য এ্যান্ড হেলথ ক্লিনিকে কোন চিকিৎসক নেই। আমতলী ও তালতলীর স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর চিকিৎসক পদ খালি থাকায় স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের সাধারণ মানুষ। এদিকে গাজীপুর উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থাকে প্রায়ই তালাবদ্ধ। ওইখানে চিকিৎসক ও কর্মচারী নেই। উপ-কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার মিঠুন সরকার ওই ক্লিনিকের দায়িত্বে থাকলেও তিনি সপ্তাহে একদিন যান। আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক না থাকায় মানুষের পটুয়াখালী ও বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যেতে হচ্ছে। আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডাঃ শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেন, ৩৯ চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে ৪ চিকিৎসক রয়েছে। চিকিৎসক চেয়ে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। তিনি আরও বলেন, অকোজো ফ্যানগুলো দ্রুত মেরামত করা হবে।
×