ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মাদক সংশ্লিষ্ট কারাবন্দী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযান

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ৩০ মে ২০১৮

মাদক সংশ্লিষ্ট কারাবন্দী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযান

মশিউর রহমান খান ॥ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জড়িত দেশের ৬৮ কারাগারে আটক কারাবন্দী ও কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযানে নেমেছে কারা অধিদফতর। কারা গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে ও বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে পাওয়া মাদকের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিভাগীয় প্রধানদের সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ নিয়েছেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেখার উদ্দীন। মঙ্গলবার কারা মহাপরিদর্শক বিষয়টি জনকণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন। এরই অংশ হিসেবে মাদক সেবনের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় কারা মহাপরিদর্শকের নির্দেশে শরীয়তপুর জেলা কারাগারের তিন কারারক্ষীকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করেছেন ঢাকা বিভাগের ডিআইজি প্রিজন্স তৌহিদুল ইসলাম। একই কারাগারে কর্মরত চাকরিচ্যুতরা হচ্ছেন মুন্সীগঞ্জের মোঃ সালাউদ্দীন আহমেদ ব্যাচ নং ১২৩৮০, রাজবাড়ীর পলাশ হোসেন ব্যাচ নং ১৩২৭৭ ও কিশোরগঞ্জের ফারুখ হোসেন ব্যাচ নং ১৩০০৭। এছাড়া সদর দফতর থেকে মাদক গ্রহণ, কারাবিধি লঙ্ঘন, শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ ও মাদক সংশ্লিষ্টতাসহ বিভিন্ন অপরাধের ১৪ কারারক্ষীকে নিজ বিভাগের বাইরে দেশের বিভিন্ন কারাগারে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। এদের মধ্যে সালাউদ্দীন ১৬ বছর, পলাশ ১১ বছর ও ফারুখ ১২ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন কারাগারে কর্মরত ছিলেন। কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, বিভিন্ন কারাগারে যাতে কোন প্রকার মাদক কোনভাবেই প্রবেশ করতে না পারে তার জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মাদক প্রবেশ কঠোরভাবে রোধে ও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য পরীক্ষাপূর্বক সকল কারা কর্মচারীকে কারাগারে প্রবেশ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত কেউ কোন অবহেলা করলে তাদের বিরুদ্ধেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানা গেছে। এছাড়া মাদক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে সন্দেহজনক এমন কোন কারা কর্মকর্তা কর্মচারীকে বিশেষ নজরধারীতে রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, মাদক সংশ্লিষ্ট যে কোন প্রকার তথ্য নিয়মিত বিভাগীয় প্রধান হিসেবে ডিআইজি প্রিজন্সদের প্রদান করতে কারা গোয়েন্দাদের বলা হয়েছে। কারাসূত্র জানায়, কারাগারে আটক বন্দীর ক্ষেত্রে জেলকোড অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। এছাড়া কারা কর্মকর্তা কর্মচারীদের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাময়িক বরখাস্ত, ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা, ইনক্রিমেন্ট স্থগিত করা বা পদোন্নতি বন্ধ করা, এসিআরে বিরূপ মন্তব্য করা, তদন্তপূর্বক স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা, বিভাগীয় মামলা দায়ের করা ও নিজ বিভাগের বাইরের বিভাগে বদলি ও নিজ জেলা থেকে সর্বোচ্চ দূরের কারাগারে বদলি করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিভাগের উপ-কারামহাপরিদর্শক পার্থ গোপাল বণিক জনকণ্ঠকে বলেন, আগের মতো আমরা কারাভ্যন্তরে মাদক প্রবেশ রোধ করতে সর্বাত্মক কাজ করছি। এরপরও নানা উপায়ে কারাভ্যন্তরে মাদক প্রবেশ করছে কারাবন্দী ও সংশ্লিষ্টদের সহায়তায়। গত সপ্তাহে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের মাদকাসক্ত কারারক্ষী রনি বড়ুয়া ব্যাচ নং ২২৮৪৭। এক মহিলা কারারক্ষীর বাসায় নেশার টাকা যোগাড় করতে গিয়ে চুরি করতে গেলে হাতেনাতে তাকে ধরে ফেলেন স্থানীয় লোকজন। এরপর তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হয় ও একইসঙ্গে ফৌজদারি মামলা দায়ের করে পুলিশের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। বর্তমানে সে কুমিল্লা কারাগারে আটক রয়েছেন। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর। কারা সূত্র জানায়, কারারক্ষী পলাশ হোসেন এর আগেও তাকে মাদক গ্রহণের দায়ে ও সংশ্লিষ্টতা থাকায় তাকে দুই দফা বরখাস্ত করা হয়। একইসঙ্গে শরীয়তপুর জেলা কারাগার থেকে তাকে গাজীপুর জেলা কারাগারে সংযুক্ত করা হয়। কর্মরত অবস্থায় গত বছরের ১৪ অক্টোবর পলাশ হোসেন এক পিস ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়। পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে কাশিমপুর কারাগারের দুই কারারক্ষী পালিয়ে গেলেও পলাশ হোসেন পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। পরে তিনি ১ মাস ৫ দিন কারাভোগের পর কাশিমপুর পার্ট ২ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন। চাকরিচ্যুতির কারণ হিসেবে জানা গেছে, চাকরিচ্যুত তিন কারারক্ষী একইসঙ্গে ইয়াবা সেবন করছিলেন। এর মধ্যে সালাউদ্দীন ইয়াবা সেবন করছিলেন আর অপর দুই কারারক্ষী পলাশ ও ফারুখ তা ভিডিও করেন। পরবর্তীতে এই ভিডিও বিভিন্ন জনের কাছে ছড়িয়ে পরলে কারা কর্তৃপক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে তাদের সাময়িক বরখাস্ত করে। পরবর্তীতে এসব অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাদের তিন জনকে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে বলে কারা সূত্রে জানা গেছে। অপরদিকে মাদক সেবন ও বহনের অভিযোগে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের মোঃ রায়হান উদ্দীন ও আশরাফুল ইসলামকে শাস্তিমূলক বদলি করেছে কারা অধিদফতর। এদের কাছ থেকে মাদক গ্রহণের সরঞ্জাম পেয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে ঢাকা বিভাগের কারা মহাপরিদর্শক তৌহিদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, কারাভ্যন্তরে আমরা কোনক্রমেই মাদক প্রবেশ যাতে না করতে পারে তার জন্য প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থাই নেয়া হচ্ছে। আমরা চাই কারাবিভাগ হোক সম্পূর্ণ মাদকমুক্ত। অপরদিকে কারাবিধি লঙ্ঘন, দায়িত্ব পালনে অবহেলা, কারা শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগসহ বিভিন্ন অপরাধে দেশের বিভিন্ন কারাগারের ১২ জন কারারক্ষীকে নিজ বিভাগের বাইরে শাস্তিমূলক বদলি করেছে কারা অধিদফতর। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ষেয়দ ইফতেখার উদ্দীন জনকণ্ঠকে বলেন, সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক গ্রহণ, সেবন ও মাদক সংশ্লিষ্টতার দায়ে দেশের ৬৮ কারাগারের সবচেয়ে বেশি মাদক মামলার আসামি আটক রয়েছেন। এর পাশাপাশি দেশব্যাপী বর্তমানে চলমান মাদকবিরোধী অভিযান। এর ফলে আরও কয়েক হাজার বন্দী একই মামলায় আটক রয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে কারাগারে যাতে কোনক্রমেই মাদক প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য আমরা সর্বোচ্চ কঠোরতা অবলম্বন করছি। মাদকের সঙ্গে জড়িত কারাবন্দী ও কারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাময়িক বরখাস্ত, শাস্তিমূলক বদলি, বিভাগীয় ও ফৌজদারি মামলা দায়েরসহ চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত করা হচ্ছে। এছাড়া মাদক প্রবেশ কঠোরভাবে রোধে ও সঠিকভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য পরীক্ষাপূর্বক সব কারা কর্মচারীকে কারাগারে প্রবেশ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত কেউ কোন অবহেলা করলে তাদের বিরুদ্ধেও সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। কারা মহাপরিদর্শক বলেন, কারা গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে ও বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে পাওয়া মাদকের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তের মাধ্যমে বিভাগীয় প্রধানদের সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশের প্রতিটি কারাগার হোক মাদকমুক্ত এ লক্ষ্যেই আমাদের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
×