ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৩০ মে ২০১৮

প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়ন

দেশে প্রাক প্রাথমিক ও প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে একনেক সভায় ৩৮ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকার একাধিক প্রকল্প অনুমোদনের বিষয়টি নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় গৃহীত পাঁচ বছর মেয়াদী চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচীর কাজ আগামী জুলাই থেকে শুরু হয়ে চলবে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে এই কর্মসূচী সহায়ক হবে। এর অধীনে এবার অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সবিশেষ জোর ও গুরুত্বারোপ করা হবে শিক্ষার গুণগত মান তথা উৎকর্ষ সাধনে। এ জন্য প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত বর্তমান পাঠ্যসূচীর প্রয়োজনীয় সংশোধনসহ সব বিদ্যালয়ে যথাযথ শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী শিশু শ্রেণী থেকেই জোর দেয়া হবে বাংলা ইংরেজীসহ অন্তত একটি বিদেশী ভাষা শিক্ষার ওপর। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুরা শৈশব থেকেই একাধিক বিদেশী ভাষা দ্রুত রপ্ত করতে সক্ষম। এর পাশাপাশি জোর দিতে হবে অঙ্কের ওপর। প্রাথমিক শিক্ষার ফলাফলে প্রতিবছর দেখা যায় এই তিনটি বিষয়েই ঘাটতি রয়েছে অধিকাংশ শিক্ষার্থীর। এমনকি এসব বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষতামূলক শিক্ষকের অভাবও প্রকট। সে অবস্থায় দেড় লক্ষাধিক নতুন শিক্ষক নিয়োগসহ জোর দেয়া হবে শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণের ওপর। এর পাশাপাশি প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি গ্রন্থাগার ও কম্পিউিটার ল্যাব থাকা জরুরী। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন বাস্তবায়নে এর বিকল্প নেই। নতুন শিক্ষানীতিতে ২০১৮ সাল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বাস্তবায়ন করার সরকারী ঘোষণা থাকলেও সর্বশেষ অবস্থা হয়েছে লেজেগোবরে। শিক্ষানীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষা পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীতে উন্নীত করা নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একদিকে পরীক্ষামূলকভাবে ৬২৭টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত চালু করে প্রত্যাশা অনুযায়ী ফল অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বছরখানেক আগে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে মৌখিকভাবে ন্যস্ত করলেও প্রশাসনিক জটিলতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কায় তা হস্তান্তর করতে পারছে না। ফলে তা বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়ে। সর্বোপরি অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠদানের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, অভিজ্ঞ ও যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক ও আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা নেই। রাতারাতি এসব গড়ে তোলাও সম্ভব নয়। বাজেট ঘাটতির বিষয়টিও সুবিদিত। মোটকথা, প্রাথমিক শিক্ষা সুনির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আমলাতান্ত্রিক ও মনস্তাত্ত্বিক জটিলতায় জড়িয়ে পড়েছে সংশ্লিষ্ট দুই মন্ত্রণালয়। ফলে স্বভাবতই প্রবল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে সারাদেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষাবিদ, শিক্ষক ও শিক্ষা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। কবে নাগাদ তা বাস্তবায়িত হবে অথবা আদৌ বাস্তবায়িত হতে পারবে কিনা, তাও বলতে পারছে না কেউ। দেশে শিক্ষা নিয়ে সৃজনশীল ও মৌলিক চিন্তকের অভাব আছে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উন্নত ও সমৃদ্ধ একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়নসহ পাঠ্যপুস্তক প্রণয়নেও সমস্যা বিরাজমান। প্রাথমিক শিক্ষার সঙ্গে মাদ্রাসা ও কিন্ডার গার্টেন শিক্ষার সমন্বয় সাধন ও আধুনিকীকরণ অত্যাবশ্যক ও জরুরী। শিশুদের জন্য একাধিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রচলিত থাকলে, শুরুতেই তা হোঁচট খেতে বাধ্য। সে অবস্থায় ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশনের আলোকে উদ্যোগ নিতে হবে। এর পাশাপাশি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষাস্তর বাস্তবায়নের সমস্যাগুলো দূর করতে হবে ধাপে ধাপে। অবকাঠামো বিনির্মাণসহ শিক্ষকদের নিবিড় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তদনুযায়ী পাঠ্যপুস্তক, যা হবে আধুনিক ও যুগপোযোগী। একাধিক মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের পরিবর্তে সমগ্র শিক্ষাব্যবস্থা আনতে হবে একক মন্ত্রণালয়ের অধীনে। বর্তমানে জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ আশানুরূপ নয়। বহুমুখী থেকে একমুখী শিক্ষা প্রবর্তনে আমলাতন্ত্রও প্রতিবন্ধক। পাঠ্যপুস্তকের প্রকাশকগোষ্ঠী এবং কোচিং ও গাইড বই ব্যবসায়ীরাও কম অন্তরায় নয়। দীর্ঘদিন থেকে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী এর পেছনে কাজ করছে। শিক্ষার মান উন্নয়নসহ যথাযথ শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে এসবই দূর করতে হবে। শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে বিদ্যমান এসব প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে পর্যায়ক্রমে।
×