ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সার্বিক অবস্থায় আমি সন্তুষ্ট নই ॥ কাদের

ভাঙ্গাচোরা সড়কের জন্য বরাদ্দের অপ্রতুলতা দায়ী

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৩০ মে ২০১৮

ভাঙ্গাচোরা সড়কের জন্য বরাদ্দের অপ্রতুলতা দায়ী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সোমবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া স্ট্যাটাসে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আশ্বাস দিয়ে লিখেছিলেন ঈদে বাড়ি ফেরা স্বস্তিদায়ক হবে। ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের যাত্রা শুরুর আগে সড়ক-মহাসড়কের অবস্থা নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে সড়কমন্ত্রী বলেছেন, তিনি নিজেই সড়কের মানে সন্তুষ্ট নন। মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া স্ট্যাটাসে এই অসন্তুষ্টির কথা তুলে ধরে ঈদযাত্রা যানজটমুক্ত রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও বলেন মন্ত্রী। বুধবার মন্ত্রণালয়ে আসন্ন ঈদ প্রস্তুতি ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন ওবায়দুল কাদের। নিজের ফেসবুক পেজে দীর্ঘ লেখনীতে মন্ত্রী সড়কের মান এখন আগের চেয়ে ভাল, এটাও উল্লেখ করেন তিনি। নানা প্রকল্পের কথা তুলে ধরে দাবি করেন, সড়কের মান উন্নতির কাজও শুরু হয়েছে। লেখায় সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নে সরকারের নেয়া নানা প্রকল্প এবং উন্নয়ন কাজগুলোর অগ্রগতি নিয়ে বর্ণনা দেন কাদের। সড়ক সংস্কারের মান নিয়ে জনমনে প্রশ্নের বিষয়টি জানান মন্ত্রী। জানান, সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে কাজ করছে। বিকেল পর্যন্ত মন্ত্রীর নতুন স্ট্যাটাসে এক হাজার ১০০ বেশি লাইক দেখা গেছে। এছাড়াও ৩৮টি শেয়ার ও ৭৩টি কমেন্ট রয়েছে। মন্ত্রীর স্ট্যাটাসে বিভিন্ন এলাকার সড়কের নানা সমস্যার কথা কমেন্টে তুলে ধরেন অনেকেই। এর মধ্যে শফিক সবুজ নামের একজন লিখেছেন, পোস্তগোলা পয়েন্টে উড়াল সড়কের কাজ হওয়ায় যানবাহন চলাচলে ধীর গতি চলছে। ৩০০ গজ সড়ক পার হতে সময় লাগছে দুই ঘণ্টা। ঈদযাত্রায় মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে কী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, সেটিও তুলে ধরেন মন্ত্রী। আশা করেন, গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও ঈদযাত্রা তুলনামূলক স্বস্তিদায়ক হবে। ঈদে বাড়ি ফেরার চাপ শুরুর আগেই সারাদেশের সড়ক মহাসড়কের জরুরী মেরামত কাজ ৮ জুনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনার কথা আবারও তুলে ধরেন মন্ত্রী। কাদের বলেন, ‘মহাসড়কসমূহ অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে এখন অধিকতর ভাল। তবে মন্ত্রী হিসেবে বলব, দেশের সর্বত্র যে চিত্র তাতে আমি পুরোপুরি সন্তুষ্ট নই। ভাঙ্গাচোরা সড়কের জন্য বরাদ্দের অপ্রতুলতাকেও দায়ী করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘সড়ক সংস্কারের চাহিদার বিপরীতে যে বরাদ্দ পাওয়া যায় তা দিয়ে অগ্রাধিকার নির্ধারণ করে প্রায় ২১ হাজার কিলোমিটার জাতীয়, আঞ্চলিক এবং জেলা সড়কের মেরামত ও সংস্কার কাজ করতে হয়। এতে কিছু কিছু সড়ক কাভারেজের বাইরে থেকে যায়।’ সংস্কার কাজ নিয়ে নানা সময় ওঠা অভিযোগের বিষয়টিও উল্লেখ করেন মন্ত্রী। বলেন, ‘একথা অস্বীকারের উপায় নেই যে, দেশের সড়ক নির্মাণ এবং সংস্কার কাজের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে জনমনে। এ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে মান উন্নয়নের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। তবে দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বদলে যাচ্ছে বলেও দাবি করেন কাদের। বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে।’ একনেক সভায় দেশের পাঁচটি বিভাগে ১০১টি জেলা সড়ক চওড়া এবং মজবুত করার প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে বলেও জানান সড়কমন্ত্রী। এর আগে তিনটি বিভাগের জেলা সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদিত হয়। এসব প্রকল্প অনুমোদন হওয়ায় সড়কের মান আরও ভাল হবে বলে আশাবাদী কাদের। তিনি লেখেন, জেলার সড়ক উন্নয়নে এতদিন আমাদের কিছুটা ঘাটতি ছিল। এখন আর ঘাটতি রইল না। নির্বিঘেœ চলাচল নিশ্চিত করতে মানসিকতার পরিবর্তনেরও তাগাদা দেন মন্ত্রী। বলেন, ‘পৃথিবীর অনেক দেশে আরও অপ্রশস্ত রাস্তায় যথাযথভাবে মেইনটেন করেই পরিবহন ব্যবস্থাপনা চলছে। সড়ক মহাসড়কে নির্বিঘেœ চলাচলে আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন জরুরী বলে মনে করি। প্রয়োজন ট্রাফিক আইন মেনে চলা। ঈদ যাত্রায় নানামুখী উদ্যোগ ॥ ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের যাত্রা নির্বিঘœ করতে নেয়া উদ্যোগের বিষয়ে সড়ক মন্ত্রী জানিয়েছেন, এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে তাদের প্রস্তুতি। রোজার মাঝামাঝি সময়ে ঈদ করতে বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা সেরে নিয়েছেন শহরবাসী। প্রতি ঈদেই কোটি কোটি মানুষ বড় বড় শহর থেকে গ্রাম বা মফস্বলে নিয়ে ঈদ করেন। ঈদের আগের চারদিন সিএনজি স্টেশন ২৪ ঘণ্টা খোলা ॥ ঈদের আগের চারদিন আগে স্টেশনগুলো সার্বক্ষণিক খোলা থাকবে। যে কোন সময় যান চলাচলের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি নিতে এই ব্যবস্থা চালু থাকবে ঈদের পরের চারদিন। ঈদের আগে তিনদিন মহাসড়কে ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে বলেও জানান মন্ত্রী। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য, পচনশীল দ্রব্য, ওষুধ, কাঁচা চামড়া, জ্বালানি বহনকারী এবং পোশাক কারখানার সামগ্রী বহনকারী যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞার আওতামুক্ত থাকবে। এর বাইরে যানজট এবং অতিরিক্ত চাপ এড়াতে এলাকাভিত্তিক পোশাক কারখানাগুলো ধাপে ধাপে ছুটি দেয়া এবং খোলার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। মহাসড়কে চলাচলের গতি অব্যাহত রাখতে ঈদের আগের সাতদিন এবং পরের সাতদিন সুনির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সড়কে কোন মোটরযান থামাবে না। সড়ক মহাসড়কের যেখানে সেখানে গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানো-নামানো যাবে না। কোনভাবেই ঈদযাত্রায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলতে দেয়া যাবে না। মেঘনা সেতুর পাশে থাকবে ফেরিও ॥ ঈদে সেতুতে টোল আদায়কারী সব বুথ ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হবে। নদী পারাপারে অতিরিক্ত ফেরি থাকবে। দুর্ঘটনা কবলিত গাড়ি দ্রুত সরিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধু সেতু, মেঘনা সেতু ও গোমতী সেতুসহ দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানে রেকার ও ক্রেন থাকবে। বড় দুর্ঘটনার পর দ্রুত উদ্ধার কাজ পরিচালনায় থাকবে হেলিকপ্টার। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে গত কয়েক মাস ধরে মেঘনা ও গোমতী সেতু পারাপারে দীর্ঘ সময় লেগে যাওয়ার কারণে মেঘনা ঘাটে (সেতু সংলগ্ন) ফেরির ব্যবস্থা রাখাও হচ্ছে। এজন্য তৈরি হচ্ছে ঘাট যা ঈদের এক সপ্তাহ আগেই প্রস্তুত হয়ে যাবে। উন্নয়ন প্রকল্পের বর্ণনা ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত প্রায় ১৯০ কিলোমিটার সড়ক চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় এ মহাসড়কে ২৩টি সেতু, ২৪২টি কালভার্ট, ৩টি রেলওয়ে ওভারপাস, ১৪টি সড়ক বাইপাস, দুইটি আন্ডারপাস, ৩৪টি স্টীল ফুটওভার ব্রিজ, ৬১টি বাস-বে এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক যাত্রী ছাউনী নির্মাণ করা হয়েছে। মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী থেকে কাচপুর পর্যন্ত অংশ আটলেনে উন্নীত করা হয়েছে। এখন নির্মাণ হচ্ছে দ্বিতীয় কাচপুর, দ্বিতীয় মেঘনা, দ্বিতীয় গোমতী সেতু। সেতু তিনটি নির্মিত হলে ডিসেম্বর নাগাদ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট থাকবে না বলেও আশ্বস্ত করেন কাদের। ৮৭ কিলোমিটার দীর্ঘ জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করার কাজ শেষ করার বিষয়টিও তুলে ধরা হয় লেখনীতে। পার্বত্য এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর করতে নানা নেয়া উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন মন্ত্রী। বলেন, ‘দুর্গম পাহাড়ের উপর থানচি-আলিকদম সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছে, যা দেশের সর্বোচ্চ সড়ক। বিসিআইএম করিডোরের আওতায় মিসিং লিংক হিসেবে নির্মাণ করা হচ্ছে বালুখালি-ঘুনধুম সড়ক। দেশের সীমান্ত এলাকা দিয়ে সীমান্ত সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কেরানীহাট-বান্দরবান সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ এগিয়ে চলেছে।’ ২০১৭ সলে পাহাড় ধসের পর জরুরী ভিত্তিতে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়ক যোগাযোগ সচলের বিষয়টিও তুলে ধরেন কাদের। এই সড়কে অস্থায়ীভাবে একটি বেইলি সেতু নির্মাণসহ ১২৮টি পয়েন্টে ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক মেরামত করা হয়েছে। স্থায়ী মেরামতের জন্যও প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।
×