ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জামায়াত নেতার সঙ্গে ডিজির বৈঠকে শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩০ মে ২০১৮

জামায়াত নেতার সঙ্গে ডিজির বৈঠকে শিক্ষকরা ক্ষুব্ধ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বেয়াই জামায়াত নেতা কামাল উদ্দিন জাফরীর সঙ্গে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের বৈঠকের ঘটনায় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষক সমাজে। তোলপাড় চলছে শিক্ষা প্রশাসনে। সরকারী-বেসরকারী শিক্ষক সংগঠনের পক্ষ থেকে জামায়াত নেতার বৈঠককে সরকার বিরোধী গোপন ষড়যন্ত্র অভিহিত করে অবিলম্বে মহাপরিচালক বিল্লাল হোসেনের অপসারণ দাবি করেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে তারা বলেছেন, বিল্লাল হোসেন মাদ্রাসা অধিদফতরকে স্বাধীনতা বিরোধীদের আখড়ায় পরিণত করেছেন। অবিলম্বে অপসারণ না করা হলে মাঠে নামবেন শিক্ষকরা। এদিকে মঙ্গলবার জনকণ্ঠ পত্রিকায় ‘জামায়াত নেতার সঙ্গে মহাপরিচালকের রহস্যজনক গোপন বৈঠক’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জনকণ্ঠ পত্রিকার কাটিংসহ বিষয়টি দ্রুত দেখার জন্য কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মোহম্মদ আলমগীরকে নির্দেশ দিয়েছেন। সচিব মঙ্গলবার এ নিয়ে কোন কথা বলতে রাজি না হলেও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে এর জন্য এক-দু’দিন সময় লাগতে পারে। এর আগে সোমবার নিজ অফিস কক্ষে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের করে দিয়ে যুদ্ধাপরাধী দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বেয়াই নানা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা কামাল উদ্দিন জাফরীর সঙ্গে বৈঠক করেন মাদ্রাসা অধিদফতরের মহাপরিচালক। জনপ্রিয় ইসলামী ব্যক্তিত্ব মাওলানা নুরুল ইসলাম ফারুকী হত্যা মামলার আসামিও এ জামায়াত নেতা। ঘটনাকে ‘মিটিং’ বলতে রাজি না হলেও আলোচনার কথা স্বীকারও করেছেন মহাপরিচালক। কি আলোচনা হয়েছে তা সাংবাদিকদের খুঁজে বের করার পরামর্শও দেন মহাপরিচালক। বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর বোরাক টাওয়ারে অবস্থিত অধিদফতের মহাপরিচালক তার নিজ অফিস কক্ষে বৈঠক করেন। বৈঠক চলে সাড়ে বারোটা পর্যন্ত। এদিকে যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর বেয়াই জামায়াত নেতা জাফরীর সঙ্গে মাদ্রাসা অধিদফতরের মহাপরিচালকের বৈঠকের ঘটনায় অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে শিক্ষক সমাজে। অবিলম্বে মহাপরিচালক বিল্লাল হোসেনের অপসারণ দাবি করেছে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদ। স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের অঙ্গ সংগঠন স্বাধীনতা মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি মাওলানা মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান নাঈম এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোঃ নজরুল ইসলাম এক বিবৃতিতে অধিদফতরের কার্যালয়ে যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর বেয়াই জামায়াত নেতা কামাল উদ্দিন জাফরীর সঙ্গে গোপন বৈঠকের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। নেতৃবৃন্দ বলেছেন, একজন সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সরকারীর অফিসে বসে একজন চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধীর এভাবে গোপন বৈঠক কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, মহাপরিচালক মোঃ বিল্লাল হোসেন এই দায়িত্বে অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়েন। তিনি মাদ্রাসা অধিদফতরকে স্বাধীনতা বিরোধীদের আখড়ায় পরিণত করেছেন। এই দফতরকে ঘিরে স্বাধীনতা বিরোধীদের অপতৎপরতায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মাদ্রাসার বহু শিক্ষক নাজেহাল হয়েছেন। মহাপরিচালক নিজেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অনেক শিক্ষককে অপদস্ত করেছেন। বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে মহাপরিচালক মোঃ বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন এবং বলেন, তদন্তের স্বার্থে এই মুহূর্তে তাকে অপসারণ করতে হবে। জামায়াত নেতার সঙ্গে মহাপরিচালকের বৈঠকের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি। সংগঠনের সভাপতি মোহম্মদ আজিজুল ইসলাম অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানিয়ে বলেছেন, এই ঘটনাকে ছোট করে দেখলে সরকার ভুল করবে। এভাবে একজন যুদ্ধাপরাধীর আত্মীয় বহু অপকর্মে অভিযুক্ত জামায়াত নেতার সঙ্গে একজন সরকারী কর্মকর্তা বৈঠক করতে পারে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে তরিৎ পদক্ষেপ নিতে হবে। না হয় এটা শিক্ষক সমাজ ভালভাবে নেবে না। এ বৈঠককে সরকার বিরোধী গোপন ষড়যন্ত্র অবিহিত করে অবিলম্বে মহাপরিচালকের অপসারণ দাবি করেছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি। সংগঠনের সভাপতি নজরুল ইসলাম রনি বলেছেন, এটা কোনভাবেই মানা যায় না। আমরা ঘটনায় উদ্বিগ্ন। আমরা মনে করি দুজনই জামায়াত নেতা। তারা সরকার বিরোধী ষড়যন্ত্র করতেই এভাবে বৈঠক করেছেন। এই মহাপরিচালকের পূর্বের কর্মকা-ও বিতর্কিত। তাই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। মহাপরিচালকের অপসারণ দাবি করেছে বাংলাদেশ শিক্ষক ইউনিয়ন। সংগঠনের সভাপতি আবুল বাশার হাওলাদার বলেছেন, আমরা শিক্ষক সমাজ ঘটনার জন্য অবিলম্বে মহাপরিচালকের অপসারণ দাবি করছি। বিষয়টি উদ্বেগের। এভাবে একজন সরকারী কর্মকর্তা জামায়াতের সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন না। এদিকে গোপন বৈঠক করলে সরকারের বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করছে মাদ্রাসা শিক্ষকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মুদার্রেসীনের মহাসচিব মাওলানা সাব্বির আহমেদ মোমতাজী। তিনি বলেছেন, ‘ঘটনা জানার পর আমি মহাপরিচালকে ফোন করেছিলাম। মহাপরিচালক আমাকে বলেছেন, ‘তার দরজা সবার জন্য খোলা। জামায়াত নেতা যদি তার প্রতিষ্ঠান নিয়ে আসে তাহলে আসতেই পারেন।’
×