ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জামদানি মেলা প্রদর্শনী উদ্বোধন

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ৩০ মে ২০১৮

জামদানি মেলা প্রদর্শনী উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জামদানি আমাদের সুপ্রাচীন ঐতিহ্য এবং পৃথিবীর বিখ্যাত মসলিনের উত্তরাধিকার। বাংলাদেশের কারুশিল্পীদের নিপুণ হাতের তৈরি মসলিন বস্ত্র এক সময় বিশ্বখ্যাত ছিল। হাজার বছর আগে মিসরের প্রাচীন কৃষ্টি ও ঐতিহ্য আচ্ছাদনে রোমিও অভিজাত নারীদের পরিধেয় বস্ত্র হিসেবে মসলিন ব্যবহার হতো। ইংরেজ শাসনের নেতিবাচক প্রভাবে মসলিন হারিয়ে গেলেও জামদানি সংস্করণে আমরা মসলিনের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি। জামদানি শিল্প এখন ইউনেস্কো ঘোষিত ওর্য়াল্ড হেরিটেজ হিসেবে অন্তর্ভুক্তি লাভ করেছে। এই অর্জন বাঙালীর গৌরবের। এখন জামদানির ঐতিহ্য ধরে রাখতে হলে গুণগত মানসম্পন্ন জামদানি উৎপাদনের সংশ্লিষ্ট সকলকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের উদ্যোগে আয়োজিত জামদানি প্রদর্শনী ও মেলা উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ এনামুল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিসিক চেয়রম্যান মুশতাক হাসান মুহঃ ইফতেখার এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। শিল্পমন্ত্রী তার বক্তব্যে আরও বলেন, জামদানি একটি বংশানুক্রমিক কারুশিল্প। নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলায় বেশকিছু গ্রাম এবং সিদ্ধিরগঞ্জ ও সোনারগাঁও উপজেলার কয়েকটি গ্রামে যুগ যুগ ধরে জামদানি তৈরি হয়ে আসছে। বিসিক জামদানি শিল্পের উন্নয়নে কারুশিল্পীদের একই স্থানে শিল্প স্থাপনে কাঠামোগত সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে তাদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন এবং নতুন প্রজন্মকে উৎসাহ প্রদান, উৎপাদন বৃদ্ধি ও বিপণন সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া জামদানি বস্ত্র কেনাবেচার জন্য এখানে একটি হাট কর্নার স্থাপিত হয়েছে। এখানে প্রতি বৃহস্পতিবার তাঁতশিল্পীরা উৎপাদিত জামদানি বস্ত্র বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন। তিনি আশা করছেন, যে উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কে সামনে রেখে এ শিল্পনগরী স্থাপিত হয়েছে তার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে আরও তৎপর হবে। এ শিল্পের প্রসার ও গুণগত মানোন্নয়নে আমাদের সরকার সম্ভাব্য সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে যাবেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পাঠ বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের জামদানি শিল্পকর্মে শুরুটা পুরোপুরি জানা না গেলেও প্রাচীন ইতিহাস থেকে ঐতিহাসিক ও পর্যটকদের অনেক সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে জানা যায় যে আমাদের ঐতিহ্যবাহী মসলিন আজকের জামদানি। বিশেষ অঞ্চলের লোকদের শিল্পচর্চা ও শিল্প ভাবনার ফলাফলই এই জামদানি শিল্প দেশের গ্রামীণ শিল্পের উন্নয়নের মাধ্যমে মানুষের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। মির্জা আজম আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। একটা সময় আমাদের দেশে অন্তত ২০ লাখ তাঁত শিল্পী ছিল। আর এখন তা কমতে কমতে ৩ লাখে চলে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন জেলার নামের সঙ্গে এর ব্র্যান্ডিং করেছেন। জামালপুর জেলা ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে নক্সী কাঁথায়, যশোরকে খেজুরের গুড়, টাঙ্গাইলকে টাঙ্গাইল শাড়ি ও ফরিদপুরকে পাট দিয়ে ব্র্যান্ডিং করা হচ্ছে। তাঁতীদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য এর আগে প্রধানমন্ত্রী ৫০ কোটি টাকার তহবিল দিয়েছিলেন। সেই তহবিল এবার বাড়িয়ে এবার ১২০ কোটি টাকা করা হচ্ছে। এটা একেবারেই অল্প সুদে। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এই সরকারের মেয়াদকালেই তাঁত শিল্পীদের জন্য দুই হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প শুরু হবে যা আগামী দুই বছরের মধ্যে উদ্বোধন করা হবে। সেখানে শিল্পীদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব ধরনের ব্যবস্থা থাকবে। পদ্মা সেতু থেকে নামার পরে একটি জায়গা নির্বাচন করা হয়েছে। সেখানে ২০০ একর জায়গার ওপর এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। সেখান থেকে মাত্র ২০ মিনিটে তাঁত শিল্পীরা ঢাকা আসতে পারবেন। এ সময় তিনি বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের দিক তুলে ধরেন। সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর তার বক্তব্যে বলেন, বাঙালী যে সব শিল্পকর্ম নিয়ে গর্ব করতে পারে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জামদানি বাঙালী ললনারা শাড়ি নামক স্বতন্ত্র একটি বস্ত্র পরিধান করে। আর সে বস্ত্রকে গৌরবময় করার জন্য এতে শিল্পের ছোঁয়ায় আঁকা হয় নানা ছবি ও শিল্পীদের আঁকা ছবির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে সবখানে। এই শিল্পকর্মটি কতটা গৌরবের কতটা অহঙ্কারের তা কেবলমাত্র শিল্প সমাজদার ব্যক্তিরা অনুধাবন করতে পারেন। অতিরিক্ত শিল্প সচিব বলেন, জামদানি প্রদর্শনী কারুশিল্পীদের পণ্য বিপণনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে এ ধরনের প্রদর্শনী আয়োজন। শুধু রাজধানী ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামে সীমাবদ্ধ না রেখে দেশের অন্যান্য বড় শহরগুলোতেও করা যেতে পারে। আমাদের সংস্কৃতির ধারক জামদানিকে টিকিয়ে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে বিসিক চেয়ারম্যান বলেন, জামদানি শিল্পনগরী স্থাপনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য জামদানির ওপর প্রশিক্ষণ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা বিক্রয় ও প্রদর্শনী কেন্দ্র স্থাপনসহ একটি আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর জামদানি শিল্পনগরী গড়ে তোলার জন্য বেসিক কাজ করে যাচ্ছেন। ১০ দিনব্যাপী এ জামদানি প্রদর্শনীর উদ্বোধনের পর শিল্পমন্ত্রী বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী গ্যালারিতে ৩৩টি স্টল নিয়ে বসেছে এ জামদানি প্রদর্শনী। বিক্রেতারা জানান, এখানে দুই হাজার টাকা দামের জামদানি থেকে শুরু করে ৮০ হাজার টাকা দামের পর্যন্ত জামদানি পণ্য রয়েছে। আধুনিকা ফ্যাশানের স্বত্বাধিকারী প্রণিতা সরকার জনকণ্ঠকে জানান, তার স্টলে দুই থেকে শুরু করে ৪০ হাজার টাকা দামের জামদানি শাড়ি রয়েছে। তিনি সারাবছরই দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্নœ মেলায় জামদানি শাড়ির প্রদর্শনী করেন। আজিজুল জামদানির স্বত্বাধিকারী মোঃ আজিজুল হক জানান তার স্থলে তিন হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৮০ হাজার টাকা দামের জামদানি শাড়ি রয়েছে। আজিজুল জানান, তিনি নোয়াপাড়া রূপগঞ্জ জামদানিপল্লী থেকে এসেছেন। এই জামদানিপল্লী থেকে আসা কাওসার জামদানির সাত্তারের স্বত্বাধিকারী কাওসার জানান, তার স্থলে দুই হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৮০ হাজার টাকা দামের পর্যন্ত জামদানি শাড়ি রয়েছে। তিনি জানান আজ থেকে দেড় লাখ টাকা থেকে দুই টাকা দামেরও জামদানি শাড়ি তিনি স্টলে প্রদর্শনী করবেন।
×