ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাশিয়া থেকে অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ক্রয়

ভারতকে সতর্ক করল যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৩:২৭, ৩০ মে ২০১৮

ভারতকে সতর্ক করল যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র নতুন নিষেধাজ্ঞা জারির উদ্যোগের ক্ষেত্রে ভারতের মতো রুশ অস্ত্র ক্রেতা দেশগুলোকে বেশ কিছুটা ছাড় দেবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এটা অত্যন্ত স্পষ্ট করেছে যে মস্কোর সঙ্গে প্রস্তাবিত ৫শ’ ৫০ কোটি ডলারের পাঁচটি এস-ফোর হান্ড্রেড ট্রায়াম্ফ বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষর করা নয়াদিল্লীর উচিত হবে না। তবে নতুন নিষেধাজ্ঞা আইন বিষয়ে ভারতের উদ্বেগ কাটাতে ওয়াশিংটন কাজ করছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের। হাউস আর্মড সার্ভিসেস কমিটির চেয়ারম্যান উইলিয়াম ‘ম্যাক’ থর্নবেরি সোমবার নয়াদিল্লীতে বলেন, মার্কিন প্রশাসন ও কংগ্রেস বেশ গুরুত্বের সঙ্গে মত ব্যক্ত করেছে যে, এম ফোর হান্ড্রেড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা অর্জনে যে কোন দেশ আমাদের সঙ্গে (সামরিক) তথ্য আদান-প্রদানের সামর্থ্যকে জটিল করে তুলবে এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ভারতকে আমরা মূল্যায়ন করি। সফররত মার্কিন কংগ্রেসের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা এ ইঙ্গিতও দেন যে, তাদের দেশের প্রস্তাবিত এমকিউনাইন রিপার বা প্রিডেটর-বি ও অন্যান্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন প্রযুক্তি সরঞ্জাম বিক্রয়ের ওপর প্রভাব পড়তে পারে যদি এম-ফোর হান্ড্রেড চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। যুক্তরাষ্ট্র এও চায় যে, ভারত পরবর্তী পর্যায়ে তাদের দ্বিপক্ষীয় কৌশলগত অংশীদারিত্ব গ্রহণের জন্য কমিউনিকেশনস কমপ্যাটিবিলিটি এ্যান্ড সিকিউরিটি এ্যারেঞ্জমেন্ট (সিওএমসিএএসএ) ও ব্যাসিক এক্সচেঞ্জ এ্যান্ড কো-অপারেশন এ্যারেঞ্জমেন্ট ফর জিও স্পার্টিয়াল কো-অপারেশন চুক্তিতে স্বাক্ষর করবে। ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীনের প্রভাব বৃদ্ধির বিষয়ে জোরালো দৃষ্টি রেখেই ভারত তা করবে। কিন্তু ভারত ও রাশিয়া কাটসা (কাউন্টারিং আমেরিকান এ্যাডভারসারিস থ্রো স্যাংকশন এ্যাক্ট) নামে পরিচিত নতুন মার্কিন আইনটি প্রচারে একটি রোডম্যাপের ওপর কাজ করে যাচ্ছে এবং দুটি দেশের প্রস্তাবিত ১ হাজার ২শ’ কোটি ডলারের বেশি প্রতিরক্ষা প্রকল্পটি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ তথ্য প্রথম প্রকাশ করেছে টাইমস অব ইন্ডিয়া। অথচ মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জিম ম্যাটিস ইতোমধ্যে ভারতের মতো দেশগুলোর জন্য ক্যাটসা থেকে অব্যাহতির পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন। থর্নবেরি বলেন, কংগ্রেস ও সিনেট ভারতের উদ্বেগ নিরসনে বিভিন্ন পদক্ষেপ ও ভাষ্যের ওপর কাজ করছে। কিন্তু মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর রাশিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত অস্ত্র রফতানিকারী প্রতিষ্ঠান রোসোবোরোনএক্সপোর্টসহ ৩৯ রুশ প্রতিষ্ঠানকে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত নতুন আইন বিষয়ে অভিহিত করার জন্য ৬ এপ্রিল যে উদ্যোগ নিয়েছে তাতে সম্পূর্ণভাবে অস্থির হয়ে পড়েছে ভারতীয় নিরাপত্তা সংস্থা। ভারতের নিয়মিত ব্যবসা রোসোবোরোনএক্সপোর্টের সঙ্গেই। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, তার দেশ শুধু জাতিসংঘের পক্ষ থেকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা মেনে চলবে; কোন বিশেষ দেশের পক্ষ থেকে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা নয়। ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা নয়াদিল্লী মানবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। নয়াদিল্লী সফরকারী ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফের সঙ্গে সাক্ষাতের আগে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের এ অবস্থান তুলে ধরেন স্বরাজ। তিনি বলেন, যে কোন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে নয়াদিল্লী সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং ভারতের পররাষ্ট্রনীতি কারও চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না। পশ্চিমাদের সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত পরমাণু সমঝোতা থেকে বেরিয়ে যাওয়া এবং তেহরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালের যে সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র নিয়েছে সে সম্পর্কে নয়াদিল্লীর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে সুষমা স্বরাজ এসব কথা বলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ৮ মে ইরানের পরমাণু সমঝোতা থেকে তার দেশকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে ইরানের বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনর্বহাল করা হবে। এ সম্পর্কে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার দেশ ‘প্রতিক্রিয়াশীল’ নীতি প্রত্যাখ্যান করে এবং অন্য কোন দেশের চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্ত মানে না। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভারত ও ইরানের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা রয়েছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক বিনিময়ের পরিমাণ ছিল ১২৯০ কোটি ডলার। ভারতের অন্যতম বড় তেল সরবরাহকারী দেশ ইরান। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ সোমবার নয়াদিল্লী সফর করেন।
×