ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লবণ কাদায় শীতলক্ষ্যায় নোনাপানি ॥ মরছে মাছ

প্রকাশিত: ০৭:১৮, ২৯ মে ২০১৮

লবণ কাদায় শীতলক্ষ্যায় নোনাপানি ॥ মরছে মাছ

নিজস্ব সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ, ২৮ মে ॥ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া এলাকার এসিআই লবণ মিলের লবণাক্ত কাদায় পাশের ফসলি জমি ও শীতলক্ষ্যার পানি নোনা রূপ নিয়েছে। ফলে মিঠা নদীর পানিতে বসবাস করা মাছগুলো মরে ভেসে ওঠছে আর ফসলি জমিতে আশানুরূপ ফসল ফলছে না। এতে চরম বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে স্থানীয় পরিবেশ। অন্যদিকে আবাসিক এলাকায় এ মিল চালু হওয়ায় বিগত ১৩ বছর ধরে স্থানীয়দের টিনের চালা পাচ্ছে না স্থায়িত্ব। ২/৩ বছর পেরুতেই নতুন টিনের চালায় মরিচা ধরে সামান্য বৃষ্টিতে বসতঘরে পানি পড়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শুধু তাই নয়, শীতলক্ষ্যার সীমানা পিলার ছাড়িয়ে নদীর জমি দখল করে অবৈধভাবে চালাচ্ছে এ মিলের কার্যক্রম। এসব বিষয়ে অভিযোগের যেন শেষ নেই। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার মুড়াপাড়া ফেরিঘাট সংলগ্ন এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর একাংশ দখল করে গড়ে ওঠেছে এসিআই লবণের মিল। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে লবণের মিলের বর্জ্য হিসেবে লবণের কাদা সরাসরি ফেলা হচ্ছে নদীতে। এতে মিঠা পানির শীতলক্ষ্যার পানি লবণের কাদার প্রভাবে হয়ে পড়ছে নোনা পানি। এতে মিল এলাকায় প্রায়ই মরা মাছ ও শুশুক মাছসহ মরে ভেসে ওঠতে দেখা গেছে। সূত্র জানায়, নদীতে একটি ট্রলার বেঁধে রেখে রাতের আঁধারে সরাসরি নদীতে ওই লবণের কাদা ফেলা হয়। এসব বিষয়ে অভিযোগ থাকার পর প্রশাসনের নির্দেশনায় মিলের পাশেই একটি পুকুর খনন করে সেখানে ওই কাদা রাখার কথা থাকলেও এসিআই কর্তৃপক্ষ অনিয়ম করে নদী দখল করে ওই পুকুর বৃদ্ধি করেছে। তবু ওই পুকুর উপচিয়ে পাশের ফসলি জমিতে নোনা পানি ও কাদা গড়িয়ে পড়ায় ফসলি জমিতে ফসল ফলছে না আশানুরূপ। এতে স্থানীয় কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তাদের ক্ষতিপূরণ দিচ্ছেন না মিল কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় কৃষক আসাদুল্লা মিয়া জানান, তিনি ৫ বিঘা জমিতে শীতের সব্জিসহ বর্ষাকালীন সব্জি করেই জীবিকা চালান। কিন্তু এ মিল হওয়ার পর থেকে ওই জমিতে এখন আগের মতো ফসল হয় না। মিল কর্তৃপক্ষ প্রথমে ২/১ বছর ক্ষতিপূরণ দিলেও এখন তারা পাত্তাই দেয় না; বরং ক্ষতিপূরণ চাইতে গেলে মামলার ভয় দেখায়। এছাড়াও পাশের মাছের প্রজেক্টে এই লবণাক্ততা ছড়িয়ে পড়ায় তাদের মাছ চাষ ব্যাহত হচ্ছে। এতে স্থানীয়রা অপূরণীয় ক্ষতির শিকার হলেও তারা তাদের ভোগান্তির কথা স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছেন। কিন্তু কোন সুরাহা পাননি। স্থানীয় এলাকাবাসী অভিযোগ করে জানান, তাদের টিনের চালায় ২/১ বছর না যেতেই নতুন টিন মরিচা ধরে পুরনো রূপ নিচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই ওইসব বসতঘরে পানি পড়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এসব বিষয় নিয়ে স্থানীয়দের ক্ষোভ থাকলেও মানববন্ধন কিংবা প্রতিবাদের আয়োজন করলে স্থানীয় ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীরা ওই প্রতিবাদ সভা প- করে দেয়। তাদের বসতঘরসহ আশপাশের সকল ঘরবাড়ির লোহাজাতীয় পদার্থতে অকালেই মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যায়। তাদের দাবি এ মরিচা ধরার জন্য দায়ী এসিআই লবণ। তারা আরও দাবি করেন, লবণ পক্রিয়াজাত করার সময় লবণের গুঁড়োদানা বাতাসে ওড়ে আশপাশের টিনের চালায় জমে থাকে। এতে মরিচা ধরে যায়। তাই তারা দাবি করেন, কারখানাটি আবাসিক এলাকা থেকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে স্থানীয় পরিবেশ রক্ষায় কর্তৃপক্ষ যেন ব্যবস্থা নেন। এ বিষয়ে এসিআই লিমিটেড কোম্পানির ব্যবস্থাপক (মিডিয়া) নাহিদুল ইসলাম জানান, এসিআই লবণ মিলের প্রভাবে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। নদী দখল বিষয়ে তিনি বলেন, নদীর সীমানায় কোন স্থায়ী কাঠামো তৈরি করা হয়নি। শুধু অস্থায়ীভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
×