ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এবার গারো পাহাড়ে চা বিপ্লবের সম্ভাবনা

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ২৯ মে ২০১৮

এবার গারো পাহাড়ে চা বিপ্লবের সম্ভাবনা

রফিকুল ইসলাম আধার, শেরপুর ॥ শেরপুরের সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে বাণিজ্যিকভাবে চা চাষ শুরু হয়েছে। বেসরকারী উদ্যোগে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে ২৭টি প্রদর্শনী চা বাগান স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। এর মাধ্যমে বন্যহাতির আক্রমণে ফসল ও প্রাণহানির কবলে থাকা পাহাড়ি জনপদ পাল্টে যেতে পারে সবুজ পাতার ঢেউয়ে। সেই সঙ্গে সেখানকার দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানের পাশাপাশি উৎপাদিত চা শেরপুর অঞ্চলসহ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। আর এতে সরকারী সহযোগিতা পেলে গারো পাহাড়ে চা আবাদে বিপ্লব ঘটানো সম্ভব হতে পারেÑ এমন ধারণা অভিজ্ঞজনদের। জানা যায়, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের শেরপুরের নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলা, নেত্রকোনার দূর্গাপুর, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এবং জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার পাহাড়ি জনপদের মাটির গুণাগুণ ও আবহাওয়া চা চাষাবাদের অত্যন্ত উপযোগী। বিভিন্ন সময় শেরপুরের পাহাড়ি টিলায় বাংলাদেশ টি বোর্ড চা চাষাবাদের উদ্দেশে মাটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চা চাষাবাদের উপযোগী হিসেবে ঘোষণা করে। টি বোর্ডের তথ্যমতে, ঝিনাইগাতী উপজেলায় ১ হাজার ৮৫৬ একর, নালিতাবাড়ী উপজেলায় ২ হাজার ৫শ’ একর ও শ্রীবরদী উপজেলায় এক হাজার ১৫১ একর জমি রয়েছে যাতে চা চাষ করা সম্ভব। কিন্তু কার্যকর উদ্যোগের অভাবে আজও তা গড়ে উঠেনি। গারো পাহাড়ের পাদদেশে তাওয়াকোচা, গুরুচরণ দুধনই, পানবর, বাকাকুড়া, ছোটগজনী, গান্ধিগাঁও, হালচাটি, গজনী, নওকুচি, রাংটিয়া, ডেফলাই, সন্ধ্যাকুড়া, গোমড়া ও হলদিগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেক পতিত জমি রয়েছে। এতে চা চাষ করে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও প্রচুর মুনাফা অর্জন সম্ভব। এবার ওই ধারণাকে কাজে লাগিয়ে ‘গারো হিলস টি কোম্পানি’ নামে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা ও সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের মাধ্যমে গারো পাহাড় অঞ্চলে চা চাষের সূচনা করেছে। সরেজমিনে গেলে কথা হয় নতুন চা চাষী আব্দুল মোত্তালেবের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত বৈশাখ মাসে ফনিক্স সাহেব (কোম্পানির চেয়ারম্যান) আইসে আমগর পঞ্চগড় নিয়ে গেছিল’। ওইখানে গিয়ে তেঁতুলিয়া, জিরো পয়েন্ট বেড়াইয়ে দেখলাম চা চাষ করে ওই দেশটা (পঞ্চগড়) খুব উন্নত হইছে। আর আমরা যে ফসলগুলো আবাদ করি, তা হাতি খাইয়ে যা গা। এতে আমরা লাভবান হই না। শুনছি চা গাছটা হাতি খায় না। তাই আমরা এবার চা চাষ করে অনেক লাভবান হমু। গারো নেতা অরুণ ম্রং বলেন, গারো পাহাড়ে বন্য হাতির আক্রমণে ফসলাদি যথেষ্ট পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য ওই এলাকার চাষী ভাইয়েরা ফসল ঘরে তুলতে পারে না। যেহেতু এ এলাকা চা চাষে উপযোগী, তাই চা চাষ করতে চাষীরা ব্যাপক আগ্রহী হয়েছে। বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক কর্মকর্তা এম এ খালেক বলেন, শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে চা চাষাবাদের জন্য মাটির গুণাগুণ পরীক্ষার সময় আমি বিশেষজ্ঞ দলের সঙ্গে ছিলাম। এখানকার মাটি, তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত ও অন্যান্য পরিবেশগত অবস্থা চা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। এখানে চা উৎপাদনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। গারো হিলস টি কোম্পানির চেয়ারম্যান-উদ্যোক্তা আমজাদ হোসাইন ফনিক্স জানান, ঝিনাইগাতীর গারো পাহাড়ে ২৭ জন ক্ষুদ্র চাষীর মাধ্যমে ২৭টি প্রদর্শনীতে যে চা চাষ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে, তা গারো পাহাড়ের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়বে। আর এর মাধ্যমে পাহাড়ি জনপদে দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থানের পাশাপাশি উৎপাদিত চা শেরপুর জেলা তথা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, সরকার যদি পুরো সহযোগিতা করেন তবে এ পাহাড়ে চা আবাদ করে বিপ্লব ঘটানো যাবে। তিনি আরও জানান, পঞ্চগড়ের সমতল ভূমিতে চা চাষের অভিজ্ঞতা এখানে কাজে লাগানো হবে। ইতোমধ্যে কয়েক দফা স্থানীয় কৃষকদের নিয়ে ক্রস ভিজিট করা হয়েছে। আশা করি অচিরেই এর সুফল মিলবে। এ বিষয়ে ঝিনাইগাতী উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম বাদশা বলেন, পাহাড়ি জনপদে কর্মসংস্থানের খুব অভাব। এমন অবস্থায় গারো হিলস টি কোম্পানি এগিয়ে আসায় তাদের সাধুবাদ জানাই। এখানে চা বাগান গড়ে উঠলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি পর্যটনেও আকৃষ্ট হবে লোকজন। আশা করি, এর মধ্য দিয়ে পাহাড়ি জনপদে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
×