ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মে বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রত্যাবর্তনের মাস

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২৯ মে ২০১৮

মে বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রত্যাবর্তনের মাস

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শৈশব কৈশোরেই তাঁর স্বপ্ন এবং চেতনা ধারণ করেছিলেন। মধুমতি-বাইগার নদীর তীরে তীরে, পাখির কল-কাকলী, গাছ-গাছালী আর নয়নাভিরাম শস্য শ্যামল প্রান্তরে স্বাাধীন মুক্ত জীবন যাপনের মধ্য দিয়ে এক ধরনের স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করেন। কৈশোরেই মানুষের দুঃখ-দুর্দশা বঞ্চনা তাঁকে বিচলিত করে তোলে- স্বপ্ন দেখেন এই দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর। বাংলার মানুষ শত দুঃখ দুর্দশার মধ্যেও স্বাধীন চেতা, তারা বার বার বিদ্রোহ করেছে ব্রিটিশের বিরুদ্ধে, সংগ্রাম করেছে জমিদারী প্রথার বিরুদ্ধে- শেখ মুজিবও এ চেতনার ধারক। এ ভূ-খ- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, ঈদ-পূজা-পার্বণে-উৎসবে হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রীস্টান- এক এবং অভিন্ন। ‘ধর্ম যার যার উৎসব সবার’-এ সংস্কৃতি এ ব-দ্বীপের মানুষের হাজার বছরের। ৪৭-এর দেশ বিভাগের পর পরই শেখ মুজিব সিদ্ধান্ত নিলেন আমাদের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র চাই- যে রাষ্ট্র পরিচালিত হবে গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার ভিত্তিতে। শুরু করলেন সংগ্রাম-পেছনে রইলো পরিবার, ব্যক্তিগত জীবন, প্রিয়জনদের মায়া-মমতা। শুরু হলো এক অবিচল পথচলা, আপোসহীন লক্ষ্য নিয়ে শত নির্যাতন-জেল-জুলুম-ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে কথিত শংকর বাঙালী জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার এক দুর্গম লড়াই। সুদীর্ঘ চব্বিশ বছরের লড়াই সংগ্রামের চূড়ান্ত রূপ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠিত হলো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা, গণতান্ত্রিক অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় স্বাধীনতারিরোধী জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্র ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ইতিহাসের নৃশংসতম অধ্যায় সৃষ্টি করলো। সঙ্গে সঙ্গে ফিরে এলো পাকিস্তানী রাজনীতির তিন উপাদান- সামরিক ক্যু-হত্যা ষড়যন্ত্র, ধর্মের অপব্যবহার এবং অহেতুক ভারত বিদ্বেষ। মুক্তিযুদ্ধের প্রাণের সেøাগান জয় বাংলা পাল্টে হলো বাংলাদেশ জিন্দাবাদ। ভূ-লুণ্ঠিত হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বিকৃতি হতে থাকল গৌরবের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। বাংলাদেশ যেন ফিরে গেল ৫৮-এর আইয়ুব খানের ক্যু এবং রাষ্ট্র পরিচালনার ধারায়। শুরু হলো আওয়ামী লীগ কর্মীদের হত্যা, নির্যাতন, ঘরছাড় এবং দল ভাঙ্গার এক গভীর ষড়যন্ত্র। কর্মীরা দিশেহারা, পথহারা, কিছু নেতৃবৃন্দ ক্ষমতার সঙ্গে মিশে গেল। নেতৃবৃন্দ হিমশিম খাচ্ছে ভাঙ্গন ঠেকাতে, নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে। এমন সময়ে ১৯৮১ সালের ১৪-১৬ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশন। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা শত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে বুকের ভেতর কষ্ট-যন্ত্রণা নিয়ে পিতার হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে আন্তর্জাতিক কমিশন গঠন এবং বিশ্বজনমত সৃষ্টিতে ব্যস্ত। কাউন্সিলে অনেক আলাপ-আলোচনার পর জাতীয় ও দলীয় ঐক্যের প্রতিক হিসেবে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাঁকে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তাঁর একটি বার্তা সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাজ্জাক সম্মেলনে পাঠ করে শোনান। শেখ হাসিনা তাঁর বার্তায়- ‘সর্ব প্রকার দ্বন্দ্ব-বিভেদ ভুলে আত্মসমালোচনা ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে কাউন্সিলর ও নেতাদের বঙ্গবন্ধুর কর্মসূচী বাস্তবায়নের আহ্বান জানান।’ কাউন্সিলররা সেদিন এক ধরনের স্বস্তি এবং আশা এবং আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। ১৯৮১ সালের ১৭ মে, বুকের ভিতর কষ্টের পাথর বেঁধে তিনি পা রাখলেন তাঁরই ¯েœহময়ী প্রাণপ্রিয় পিতা-মাতা, ভাই, ভ্রাতৃবধূসহ নিকট আত্মীয়ের রক্তে ভেজা বাংলার মাটিতে, নিজের জীবনের স্বামী-সন্তান-সংসারের অবশিষ্ট সুখটুকু পেছনে ফেলে- কেবল পিতার অবশিষ্ট কাজটুকু সম্পন্ন করতে। সেদিন রাজধানী ঢাকা ছিল মিছিল আর সেøাগানের শহর। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মিছিল আর সেøাগান। ওইদিন কালবৈশাখী ঝড়ো হাওয়ার বেগছিল ৬৫ মাইল। এবং এই দুর্যোগপূর্র্ণ আবহাওয়ার মধ্যে লাখো লাখো মানুষ শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখার জন্য রাস্তায় ছিল। ’বঙ্গবন্ধুর বংশের প্রদীপ, ঐতিহ্যের ধারক ও স্মৃতির প্রতীক’ শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখার জন্য কিশোর, তরুণ, বৃদ্ধ নির্বিশেষে অগণিত মানুষ বাস, ট্রাক, লঞ্চ, স্টিমার ও ট্রেনযোগে দেশের দূর-দূরান্ত থেকে ঢাকা এসে সমবেত হয়েছিল। লাখো জনতা অকৃপণ প্রাণঢালা অভ্যর্থনার মধ্য দিয়ে বরণ করে নেয় তাদের নেত্রীকে। কুর্মিটোলা বিমান বন্দরে সেদিন জনসমুদ্রে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘সবকিছু হারিয়ে আমি আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছি। বাংলার মানুষের পাশে থেকে মুক্তিসংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য আমি এসেছি। আমি আওয়ামী লীগের নেত্রী হওয়ার জন্য আসিনি। আপনাদের বোন হিসেবে, মেয়ে হিসেবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমি আপনাদের সঙ্গে থাকতে চাই।’ কুর্মিটোলা থেকে শেরে বাংলানগর পর্যন্ত ৮ মাইল রাস্তা সময় লাগার কথা বেশি হলে ৩০ মিনিট। প্রায় তিন ঘণ্টায় শেখ হাসিনা শেরে বাংলানগরে পৌঁছালেন। ঝড়বৃষ্টিতে নগর জীবন তখন প্রায় বিপন্ন, রাস্তা ঘাট স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয়ে গেছে। কিন্তু ঝড় বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে শেরে বাংলা নগরে অপেক্ষায় থাকেন লাখ লাখ মানুষ। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তিনি মানিক মিয়া এ্যাভিনিউর গণসংবর্ধনা মঞ্চে এলেন। গণসংবর্ধনায় ভাষণদানকালে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু ঘোষিত দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী বাস্তবায়ন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমি জীবন উৎসর্গ করে দিতে চাই। আমার আর কিছু চাওয়া-পাওয়ার নেই। সব হারিয়ে আমি এসেছি আপনাদের পাশে থেকে বাংলার মানুষের মুক্তির সংগ্রামে অংশ নেয়ার জন্য।’ আনন্দঘন ও হৃদয় বিদারক এ অনুষ্ঠানে কর্মীরা মুহুর্মুহু নানা সেøাগানে মুখরিত করে রেখেছিল-’ শেখ হাসিনা তোমায় কথা দিলাম, মুজিব হত্যার বদলা নেব’, ’জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু’, ‘শেখ হাসিনা, শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘ঝড়বৃষ্টি আঁধার রাতে আমরা আছি তোমার সাথে।’ শেখ হাসিনা সেদিন বার বার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছিলেন। কর্মীদের চোখেও ছিল অশ্রুধারা। তখন সময়টা খুব খারাপ ছিল। পঁচাত্তরের খুনীরা তখনও তৎপর সব জায়গায় ওত পেতে আছে। এর মধ্যেই বঙ্গবন্ধু কন্যা পিতার পথ ধরে জীবনের সকল ঝুঁকি নিয়ে শুরু করলেন বাংলার মানুষের মুক্তির সংগ্রাম। সেদিন তিনি কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন না করলে এতদিনে দেশ পুরোপুরি পাকিস্তানের মতো স্বৈরাচারী, বিশৃঙ্খল ও সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রে পরিণত হতো। শেখ হাসিনা সে অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করেছেন এবং বাংলার মানুষকে মুক্তিযুদ্ধের গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় অভিষিক্ত করেছেন। বিশ্বের সবচাইতে শক্তিশালী গণতান্ত্রিক দেশ গ্রেট ব্রিটেনের বিমান বন্দরের নাম হিথরো এয়ার পোর্ট এবং অন্যতম পেশাদার এয়ার লাইন্সের নাম ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ। বিশ্ববাসী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলো ২০০৭ সালের মে মাসের প্রথম সপ্তাহে উন্নয়নশীল দেশের অন্যতম নেতা শেখ হাসিনা তাঁর প্রিয় স্বদেশ বাংলাদেশে আসার জন্য প্রতিদিন বিমান বন্দরে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিলেন। পৃথিবীর ইতিহাসে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এটি একটি বড় ঘটনা। পাসপোর্ট, ভিসা এবং টিকিট থাকলেই যে কোন মানুষ বিমানে উঠতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের সবচাইতে বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান এবং জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনাকে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ঘৃণ্য প্রয়াস নিচ্ছিল গণতান্ত্রিক দেশের বিমান পরিবহন তৎকালীন বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইন্ধনে। বিশ্ববাসী, বিশ্ব মিডিয়া এবং বাংলাদেশের মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। দ্রুত বেগে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি হলো শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে দিতে হবে। বিশ্বব্যাপী চাপের মুখে কুচক্রী মহল বাধ্য হলো শেখ হাসিনাকে ৭ মে দেশে ফেরার অনুমতি দিতে। এ কারণে ২০০৭ সালের ৭ মে তারিখটি বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য সাম্প্রতিক সময়ে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন যদি শেখ হাসিনা নিজের চিন্তা, প্রজ্ঞা, দূরদর্শিতা, সাহস এবং ঝুঁকি নিয়ে দেশে ফিরে না আসতেন তবে বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রের মুখ দেখতো কি-না দেশবাসীর আশঙ্কার যথেষ্ট যুক্তি ও তথ্য রয়েছে। ঐ সময়ের পরিস্থিতি যদি আমরা স্মরণ করি তবে বিষয়টি সহজেই অনুমেয়। ১/১১ উত্তর শাসক গোষ্ঠী নানাভাবে দেশের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে ভয়ভীতি এবং প্রলোভনে আকৃষ্ট করতে সফল এবং নতুন দল গঠনে সক্রিয়, সেনাবাহিনী প্রধান নানা পদ্ধতিতে দেশের মানুষের মন জয় করতে ব্যস্ত, আন্তর্জাতিক সমর্থন সংগ্রহ করতে তৎপর, বেগম খালেদা জিয়া এবং তার দল দুর্নীতির দায়ে ভঙ্গুর এবং পর্যুদস্ত। একমাত্র আশার আলো বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ষড়যন্ত্রকারীরা প্রকাশ্যে এবং অপ্রকাশ্যে কর্মী এবং জনগণকে বোঝানোর চেষ্টা করছিল যে, শেখ হাসিনার এখন দেশে ফেরার দরকার নেই, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কিছুদিন পর এমনিতেই চলে আসতে পারবেন। বিষয়টা এমনভাবে বোঝাবার চেষ্টা চলছিল যে, ১/১১ চারদলীয় জোট এবং তাদের নেতাদের বিরুদ্ধে, শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নয়। এটি যে একটি গভীর ষড়যন্ত্র ছিল শেখ হাসিনার গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হয়। পরবর্তী সময়ে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে তা প্রমাণিত হয়েছে যে, তখনকার পরিস্থিতি ১/১১ বাহিনী নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে পারলে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করার কোন পথ রাখত না এবং শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সহসাই হতো না। সেই সময় সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশ আঁধারে নিমজ্জিত ছিল। আমাদের আতি চেনা-জানা সংগ্রামী নেতৃবৃন্দ সহজেই আত্মসমর্পণ করছিলেন। প্রতিবাদের কণ্ঠস্বর নিভে গিয়েছিল। কেবল বিচ্ছিন্নভাবে কিছু পেশাজীবী বুদ্ধিজীবী সচেতন মানুষ এবং নিবেদিত আওয়ামী কর্মী-সমর্থক এ পরিস্থিতির বিরুদ্ধে কথা বলছিল। গোটা দেশ এবং বিশ্ববাসী শুনছিল কেবল একটি তেজী, আত্মপ্রত্যয়ী দেশপ্রেমিক কণ্ঠস্বর সেটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার। জনপ্রিয় কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী তখন তার একটি কলামে লিখেছিলেনÑ ‘বাংলাদেশে এখন একজনই সুপুরুষ আছে আর তিনি হচ্ছেন শেখ হাসিনা।’ তাই ৭ মে তারিখ শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন দিবসটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ইতিহাসের জন্য একটি বিশেষ দিন। শেখ হাসিনা যদি সেদিন তার একক সিদ্ধান্তে ফিরে না আসতেন তবে বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্রের জন্য আর কতদিন লড়াই করতে হতো, কত মানুষের আবারও জীবন দিতে হতো তা ভাবাই যায় না। ‘স্বৈরাচার নিপাত যাক গণতন্ত্র মুক্তি পাক- ৮১ থেকে ৯০ পর্যন্ত দীর্ঘ আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন শেখ হাসিনা এবং প্রধান শক্তি ছিল তাঁর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সঙ্গে সহযোগী সংগঠনসমূহ। ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের নৈরাজ্য, অনাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন শেখ হাসিনা। এবার বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ৩৭ বছর পূর্ণ হলো। তিনি ১৯৮১ সালের ১৭ মে ঢাকার মাটি ছুঁয়ে যে কথা দিয়েছিলেন তা তিনি অক্ষরে অক্ষরে পালন করে চলেছেন। একইভাবে সেদিন ঢাকা শহরে লাখ লাখ কর্মীরা যে শপথ নিয়েছিলেন যে, দেশের সকল পরিস্থিতিতেই তাদের মায়ের মতো বোনের মতো নেত্রীকে আগলে রাখবেন সেটিই তারা প্রমাণ করেছেন। আজকে বাংলাদেশে বারবার সঙ্কটাপন্ন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আবহে, হাজার বছরের বাঙালী কৃষ্টি-সংস্কৃতির অবগাহনে ফিরে পেয়েছে বাংলাদেশের প্রাণ। বাংলাদেশ আজকে বিশ্বের বিস্ময়। বিশ্বের দরবারে উন্নয়নের রোল মডেল। এ মাসেই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আকাশ বিজয় করেছে বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আকাশ-সমুদ্র-সীমান্ত বিজয় পূর্ণ হলো। গত ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে সকল শর্ত পূরণ করে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পদার্পণ করেছে। বাংলাদেশের মাথা পিছু আয় এখন ১৭৫২ ডলার। অর্থনৈতিক সকল সূচকে বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় এগিয়ে। নির্দিষ্ট সময়ের আগেই ধাপে ধাপে পূরণ হয়ে যাচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ বা রূপকল্প ২০২১-এর সকল কর্মসূচী। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য, বিদ্যুত, যোগাযোগসহ সকল ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হচ্ছে জাজ্বল্যমান পরিবর্তন। পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ যোগাযোগ ব্যবস্থায় দৃশ্যমান হচ্ছে আমূল পরিবর্তন। সময় এখন বাংলাদেশের। সময় এখন শেখ হাসিনার। সময় এখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শক্তির। শেখ হাসিনা ব্যক্তিগতভাবে এবং বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারার জন্য অর্জন করছেন অসংখ্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি দমন কর্মসূচীকে আরও বেগবান করা এখন সময়ের দাবি। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা, সৎ, যোগ্য, কর্মঠ, মানবতাবাদী গণতান্ত্রিক নেতা। গণতন্ত্রের মানসকন্যা এখন গণতন্ত্রের মূর্তপ্রতীক। তিনি ইতোমধ্যে ঘোষণা করেছেন, জাতিকে স্বপ্ন দেখিয়েছেন উন্নত বাংলাদেশের ভিশন-২০৪১। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন, গণতন্ত্র-উন্নয়নের এ ধারা অব্যাহত রাখার জন্য, দেশকে একটি সম্পূর্ণ কল্যাণ রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত করার জন্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পূর্ণ বাস্তবায়নের জন্য আজকে দেশের মানুষের সামনে শেখ হাসিনার কোন বিকল্প নেই। সকল বিবেচনায় পরিস্থিতিটা এমনভাবে দাঁড়িয়েছে যে, শেখ হাসিনা বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে। লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের প্রিয় স্বাধীন বাংলাদেশের সার্বিক কল্যাণে সকল বিষয়গুলো দেশের মানুষের গভীরভাবে অনুধাবন করা এখন জরুরী। লেখক : সাবেক উপাচার্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
×