ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রান্স এশিয়ান রেল নেটওয়ার্কের প্রবেশদ্বার হবে

ঐতিহাসিক কালুরঘাটে নতুন রেল ও সড়ক সেতু তৈরির উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ২৯ মে ২০১৮

ঐতিহাসিক কালুরঘাটে নতুন রেল ও সড়ক সেতু তৈরির উদ্যোগ

আনোয়ার রোজেন ॥ চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক কালুরঘাট এলাকায় কর্ণফুলী নদীর ওপর নতুন রেল ও সড়ক সেতু তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ দুটি সেতু নির্মিত হলে চট্টগ্রাম টু কক্সবাজার করিডরের অপারেশনাল বাধা দূর হবে। একই সঙ্গে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের জন্য বড় করিডর তৈরি করা যাবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন চীন, ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে সংযুক্ত করে যে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের কথা বলা হচ্ছে, রেলসেতুটি তার অংশ হিসেবে কাজ করবে। দুটি সেতু নির্মাণের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ১৬৫ কোটি টাকা। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত ‘কালুরঘাটে কর্ণফুলী নদীর ওপর একটি ‘রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনে যাচাই-বাছাই হচ্ছে। অনুমোদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সম্প্রতি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য জুয়েনা আজিজ এতে সভাপতিত্ব করেন। সভায় প্রকল্পের প্রস্তাবিত বিভিন্ন অংশের ব্যয়সহ নানা বিষয় আলোচনা হয়। প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, প্রাথমিক প্রস্তাবনায় প্রকল্প বাস্তবায়নে কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ডের (ইডিসিএফ) সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। মোট ব্যয়ের মধ্যে ইডিসিএফ থেকে ৭৮৪ কোটি টাকা ঋণ সহযোগিতা হিসেবে পাওয়ার কথা। বাকি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেয়া হবে। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (আরএডিপি) বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির সুবিধার্থে বরাদ্দহীন অননুমোদিত প্রকল্প তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এটি। অর্থাৎ ইডিসিএফ বা অন্য কোন উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোন চুক্তি এখনও হয়নি। এদিকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, চূড়ান্ত ঋণচুক্তি না হলেও প্রকল্পে সহযোগিতার বিষয়ে ইডিসিএফ নীতিগত সম্মতি জানিয়েছে। চুক্তির বিষয়টি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। প্রকল্প বাস্তবায়নে ইআরডির তরফে ইডিসিএফের কাছে আর্থিক সহায়তা চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে কোরিয়ান কোম্পানি এসএমইসির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের ভিত্তিতে ২০১৬ সালে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক চূড়ান্ত সম্ভাব্যতা যাচাই করে এবং প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে গত বছরের ২৭ এপ্রিল ঢাকায় ইআরডি-ইডিসিএফ বৈঠক হয়। ওই সভায় প্রকল্পের প্রাক্কলিত মোট ব্যয় ও ইডিসিএফের সহযোগিতার অংশ নির্ধারণ করা হয়। সূত্র জানায়, সব প্রক্রিয়া শেষে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী অর্থবছরের কোন একটি সভায় তোলার প্রস্তুতি পরিকল্পনা কমিশনের রয়েছে। সভায় অনুমোদন পেলে ২০২৩ সালের আগস্টের মধ্যে প্রকল্পের কাজ বাংলাদেশ রেলওয়ে সম্পন্ন করবে। পিইসি সভার জন্য তৈরি কার্যপত্রে বলা হয়েছে, কক্সবাজারসহ চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য কর্ণফুলী নদীর ওপর দুটি সড়ক সেতু ও একটি পুরনো এবং দুর্বল রেল সেতু বিদ্যমান রয়েছে। এ রেল সেতুটি কালুরঘাটে অবস্থিত। মিটারগেজ লাইনে সেতুটি ১৯৩১ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে ১৯৬২ সালে এর সঙ্গে সড়ক সেতু যুক্ত করে রেল কাম সড়ক সেতুতে রূপান্তর করা হয়। বর্তমানে সেতুটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এর কার্যক্ষমতাও কমেছে। সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেনগুলো ঘণ্টায় মাত্র ১০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে পারে এবং অন্যান্য যানবাহন ২০ মিনিট পরপর সেটি অতিক্রম করে। তাছাড়া ট্রেন চলার সময় সড়ক সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে সেতুর উভয় পাশে ব্যাপক যানজট লেগে যায়। বাস্তবতা বিবেচনায় সংস্কার না করে নতুনভাবে ওই রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
×