ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মন্ত্রিপরিষদ সভায় জাতীয় পাটনীতি ’১৮-র খসড়া অনুমোদন

ছাত্র রাজনীতি বাতিল সংক্রান্ত বিল নিয়ে বিব্রত শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২৯ মে ২০১৮

ছাত্র রাজনীতি বাতিল সংক্রান্ত বিল নিয়ে বিব্রত শিক্ষামন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ পাঁচটি অগ্রাধিকার তালিকা নির্ধারণ করে নতুন ‘জাতীয় পাটনীতি-২০১৮’ এর খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এছাড়া মন্ত্রিসভা শাস্তি বাড়াতে ‘বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন আইন-২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। সোমবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয়। পাশাপাশি ভারতের কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি. লিট ডিগ্রী পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। বৈঠক শেষে সচিবালয় মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের একথা বলেন। এছাড়া শিক্ষাঙ্গণে ছাত্র রাজনীতি বাতিল সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হলে তা নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ। ইতোপূর্বে আদালতে বাতিল হওয়া আইনটি আবারও কেন উত্থাপন করা হয় প্রধানমন্ত্রী জানতে চাইলে তার কোন সদুত্তোর দিতে পারেননি তিনি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, প্রস্তাবটি উত্থাপিত হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন এটিতো আদালত আগেই বাতিল করে দিয়েছে। এ বিষয়ে তিনি আইনমন্ত্রীকে বলেন, আদালতে বাতিল করার পর তা মন্ত্রিসভায় বাতিলের কোন প্রয়োজন আছে কি না? আইনমন্ত্রী বলেন, এটি আগেই আদালত বাতিল করে দিয়েছে। আদালত বাতিল করলে তা মন্ত্রিসভায় বাতিলের আর কোন প্রয়োজন নেই। তখন শিক্ষামন্ত্রীকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তা হলে কেন এনেছেন? জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমি এটি প্রত্যাহার করে নিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী আবারও বলেন, আপনি যে এটি উত্থাপন করেছেন, এমন কোন নজিরকি আছে, কোন আইন আদালত বাতিল করে দিলে তা আবার মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়েছে? তখন আইনমন্ত্রী বলেন, না এরকম কোন নজির নেই। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, জাতীয় পাটনীতি মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করা হয়েছে। ২০১১ সালের পাটনীতি যুগোপযোগী ও পরিমার্জন করে নতুন পাটনীতি নিয়ে আসা হয়েছে। আগের ও নতুনটায় বড় কোন পার্থক্য নেই। এখানে কিছু নতুন সংযোজন আছে। একটা বড় সংযোজন হল সংজ্ঞা। নতুন নীতিতে ১২ ধরনের সংজ্ঞা যোগ করা হয়েছে। আগের নীতিতে ভিশন-মিশন অনেক বড় ছিল জানিয়ে শফিউল আলম বলেন, নতুন নীতিতে ভিশন ছোট করে বলা হয়েছে দেশে-বিদেশে প্রতিযোগিতা সক্ষম শক্তিশালী পাটখাত প্রতিষ্ঠা। আর মিশনে বলা হয়েছে উৎপানশীলতা, কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব বহুমুখী পাটপণ্য সৃজন করা। তিনি বলেন, নতুন পাটনীতিতে পাঁচটি অগ্রাধিকার তালিকা করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে মানসম্মত পাট উৎপাদন, পাটের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ, পাট পণ্যের বহুমুখীকরণ, পাটকলসমূহের আধুনিকায়ন, পাটপণ্যের বাজার সম্প্রসারণ। এগুলো নতুন কৌশলগত অগ্রাধিকার হিসেবে আনা হয়েছে। আগে এগুলো ছিল না। তিনি আরও বলেন, জাতীয় পাটখাত সমন্বয় কমিটি নীতির মধ্যে আনা হয়েছে। এটা আগে পরিশিষ্টে ছিল। শাস্তি বাড়িয়ে বিএসটিআই আইনের খসড়ায় অনুমোদন বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) আইনের বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি বাড়ছে। এজন্য ‘বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন আইন-২০১৮’ এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বিএসটিআই পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের কাজ করে থাকে। ১৯৮৫ সালের বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন অর্ডিন্যান্স সংশোধন করে নতুন আইনটি আনা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এখানে বড় কোন পরিবর্তন নেই, শাস্তিগুলো একটু বাড়ানো হয়েছে। আগের আইনে লাইসেন্স ছাড়া কেউ স্ট্যান্ডার্ড মার্ক ব্যবহার করলে ৬ মাসের কারাদ- বা ১৫ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ- ছিল। প্রস্তাবিত আইনে সেটাকে বাড়িয়ে কারাদ- সর্বোচ্চ ২ বছর বা জরিমানা এক লাখ টাকা রাখা হয়েছে। অর্থদ- ২৫ হাজার টাকার নিচে হবে না। নিবন্ধন নিষিদ্ধ পণ্য বিক্রি করলে তা বাজেয়াপ্ত করার বিধান প্রস্তাবিত আইনে রাখা হয়েছে। শফিউল আলম বলেন, রফতানি নিষিদ্ধ পণ্য সংক্রান্ত লাইসেন্সের শর্ত লঙ্ঘন করার শাস্তি আগে ছিল জরিমানা বা এক বছরের কারাদ- বা উভয় দ-। নতুন আইনে প্রস্তাব করা হয়েছে এক বছরের কারাদ- বা ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দ-। আগের আইনে জরিমানা সুনির্দিষ্ট করা ছিল না। কতিপয় পণ্য বিক্রয়, বিতরণ, বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন লঙ্ঘনের শাস্তি ৪ বছরের কারাদ- বা ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-। আগে এই শাস্তি ছিল ৪ বছরের কারাদ-, জরিমানা ছিল ৭ হাজার থেকে এক লাখ টাকা বা উভয় দ-। প্রস্তাবিত আইনে অন্যান্য অপরাধের দ- নামে একটি ধারা রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কোন বিষয় আইনে সুনির্দিষ্টভাবে যদি না আসে তবে সেই বিষয়ে এই ধারার আলোকে বিচার করা যাবে। এই ধারায় অপরাধের জন্য শাস্তি ২৫ হাজার থেকে এক লাখ টাকা জরিমানা। আগেও এই ধারা ছিল, সেখানে ৫ হাজার টাকা জরিমানা ছিল। এই আইনের অধীনে কেউ একই অপরাধ দ্বিতীয়বার করলে দ্বিগুণ শাস্তি পেতে হবে। তিনি বলেন, আইনের সাধারণ অপরাধগুলোর বিচার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে হবে, দ্বিতীয়বারের অপরাধের বিচার হবে দায়রা আদালতে। খসড়া আইনে আপীলের বিধান রয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘যদি কেউ সংক্ষুব্ধ হয় তবে আদেশ পাওয়ার ৩ মাসের মধ্যে বা সরকারের দেয়া অতিরিক্ত সময়ের মধ্যে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে সরকারের কাছে আপীল করা যাবে। ডি. লিট পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রিসভার অভিনন্দন ভারতের কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি. লিট ডিগ্রী পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠকের শুরুতে এই অভিনন্দন জানানো হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ভারতের নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রধানমন্ত্রীকে সম্মানসূচক ডি. লিট ডিগ্রী দিয়েছে। এজন্য মন্ত্রিসভা প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছে। গত শনিবার ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আসানসোলের কবি নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক ডি. লিট ডিগ্রী দেয়া হয়।
×