ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গাছ মানুষের সবচেয়ে উপকারী বন্ধু। মানব জীবনে গাছের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। কথায় আছে, আপন থেকে পর ভাল পরের থেকে জঙ্গল ভাল। আমরা আপনকেও ভালবাসি। পরকেও ভালবাসি শেষ আশ্রয় বনকেও ভালবেসে তার যত্ন করি। বর্ষার অঝোর ধারায় সবুজে আর ফুলে-ফলে নব যৌবন পেয়ে য

গাছ লাগান গাছ উপহার দিন

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৮ মে ২০১৮

গাছ লাগান গাছ উপহার দিন

শাহনাজ খান ॥ বৃক্ষের বিভিন্নমুখী অবদানকে বাদ দিয়ে মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তন বা উত্তরণের কথা কল্পনা করা যায় না। বৃক্ষ খাদ্যের উৎস ও শক্তির উৎস। শিক্ষা বিস্তারেও তার কথা অনস্বীকার্য। অনেক রোগের পথ্য আসে এই গাছ থেকে। জীবন বাঁচানোর জন্য অক্সিজেন তৈরি করে গাছ। ঘর সাঁজাতে বিশেষ ভূমিকা রাখে গাছ। মন ভুলানো বাহারি ফুলের কথা না বললেই না। প্রিয় বা প্রিয়াকে ভালবেসে কত বকুল বা বেলির মালা উপহার দেয় একে অপরকে। আবার সমাধিতেও ভালবেসে হরেক ফুল দেয় প্রিয়জন। এলো বর্ষা, এখনই গাছ লাগানোর একটা উপযুক্ত সময়। কবিগুরু অথবা নজরুলকে ভালবেসে কিছু গাছ লাগাই, দুজনের জন্ম তারিখটা পড়েছে বর্ষায় তাঁদের প্রতি সম্মান জানিয়ে আসুন আমরা সকলে নিজের ঘরের আঙ্গিনা, ঘরের চারপাশে, ছাঁদে, করিডোরে কিছু গাছ লাগাই। ফুল না দিয়ে গাছ লাগাই শ্রদ্ধাভরে। ফুল বা ফল যাই হোক গাছের গায়ে প্রিয় ব্যক্তিটির নাম হোক। প্রতিবছর আমাদের কত প্রিয় মানুষের জন্মদিন, মৃত্যুদিন হয়, এই দিনগুলোতে আমরা একটি করে গাছ লাগাই। গাছ লাগালে কেটে ফেলার পর আর লাগানো হয় না, তাহলে ভারসাম্য কিভাবে রক্ষা হবে? এর ফল গরিব-ধনী সকলেই খাবে, খেয়ে দোয়া করবে। প্রকৃতিও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বৃক্ষ রোপণের ভূমিকা সুদূরপ্রসারী তেমনি সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়নে এর গুরুত্ব অপরিসীম। আদিম যুগে মানুষ ছিল সম্পূর্ণরূপে প্রকৃতি নির্ভর, তখন থেকেই অস্তিত্ব রক্ষার পাশাপাশি বৃক্ষ মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণের অন্যতম বড় নিয়ামক ছিল। মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বৃক্ষ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন- আমরা যেমন স্নান করি সূচিবস্ত্র পরি, তেমনি বাড়ির চারদিকে যত্ন পূর্বক একটি বাগান করে রাখা ভদ্র প্রথার অবশ্য কর্তব্য হওয়া উচিত। সরকার বৃক্ষ রোপণের তাৎপর্য তুলে ধরে একটি স্লোগান নির্দিষ্ট করেছেন ‘গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান’ অথচ সড়ক, মহাসড়ক ও রেললাইনের পাশে প্রচুর ফাঁকা জায়গা পড়ে আছে। এগুলোতে যদি আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, পেয়ারা, আমলকি, হরতকি, সেগুন, মেহগনি, গর্জন, আকাশী ইত্যাদি গাছ লাগানো হয় তাহলে এগুলো আমাদের ফলের আর কাঠের চাহিদা পূরণে বিরাট ভূমিকা রাখবে। এ ছাড়াও দেশের আনাচে-কানাচে, চর ও নদীর পাড় সহ প্রচুর খালি অনাবাদি জমি পড়ে রয়েছে। খালি জমিগুলোতে গাছ লাগিয়ে দেশটা সবুজের প্রশান্তিতে ভরে উঠতে সাহায্য করতে পারি। গাছপালাকে সন্তানের মতো লালন-পালন করলে, সেও ঠিক তেমনি আমাদের যত্ন নেবে। প্রয়োজনের সময় গাছ কেটে আমরা প্রয়োজন মেটাই। কিন্তু গাছের বংশ বৃদ্ধি বিষয়ে তেমন একটা ভাবি না। তাই বলছি গাছকেও সন্তানের মতো যত্ন করলে এর সুফল আমরা পাব। সন্তানরা অনেক সময় কুপথে যায়, গাছ আপনাকে ছেঁড়ে যাবে না। মরার পরেও আপনার সন্তানের যত্ন সে নেবে, ফল কাঠ অক্সিজেন দিয়ে। দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে গাছের বংশ বৃদ্ধি দূরের কথা নির্বিচারে ধ্বংস করছি সবুজ বনানী। সবুজ বনানীকে টিকিয়ে রাখতে হলে বনায়নের’ কোন বিকল্প নেই। নিজের বাড়ির আশপাশের খালি জায়গায় বনায়ন করা যায়। এতে নিজের মানসিকতাই যথেষ্ট। সন্তান ভূমিষ্ঠের পর শুরু করি তাকে লালান-পালন, দেই উপযুক্ত পরিবেশ, গাছ রোপণের পরে বিশেষ তদারকি করতে হবে। মানুষের সঙ্গে গাছেরও নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। গাছ মানুষের সবচেয়ে উপকারী বন্ধু। মানব জীবনে গাছের উপকারিতার কথা বলে শেষ করা যাবে না। কথায় আছে, আপন থেকে পর ভাল পরের থেকে জঙ্গল ভাল। আমরা আপনকেও ভালবাসি। পরকেও ভালবাসি শেষ আশ্রয় বনকেও ভালবেসে তার যতœ করি। বর্ষার অঝোর ধারায় সবুজে আর ফুলে-ফলে নব যৌবন পেয়ে যাক পরিবেশ আমার আপনার একান্ত চেষ্টায়। শুধু কিছু দিবস যেমন পরিবেশ দিবস, ধরিত্রী দিবস, জন্ম দিবস না, বৃক্ষ রোপণের ধারা বাহিকতা ১২ মাসই যেন থাকে আমাদের মাঝে। আসুন গাছ লাগাই মানব আর পশু পাখির জীবন আর পরিবেশ সুন্দর করি।
×