ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ধোঁয়াশায় ব্যবসায়ীরা

বাংলাবান্ধায় লোড আনলোড চার্জ আরোপ

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২৮ মে ২০১৮

বাংলাবান্ধায় লোড আনলোড চার্জ আরোপ

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ॥ পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ নতুন করে বন্দর ও লোড আনলোডিং চার্জ বাবদ টন প্রতি ১০৪ টাকা নির্ধারণ করা এবং লোড আনলোডিংয়ের জন্য ইজারাদার নিয়োগ করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে বন্দর ম্যানেজার দৃশ্যত কোন কাগজপত্র দেখাতে না পারায় ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বাংলাবান্ধায় আমদানি রফতানিকারক ব্যবসায়ীরা জানান, ১৯৯৭ সালে চালু হয় পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। ক্রমান্বয়ে এই স্থলবন্দর দিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণ হয়েছে। বন্দর চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত ব্যবসায়ীরা শুধু বন্দরের অভ্যন্তরে পণ্য আনলোডিংয়ের জন্য শ্রমিকদের টন প্রতি ৩২ টাকা করে দিয়ে আসছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই গত ৯ মে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ব্যবস্থাপকের স্বাক্ষরিত এক চিঠির মাধ্যমে জানানো হয় আমদানি ও রফতানিকৃত সকল পণ্য বাংলাবান্ধার অভ্যন্তরে প্রবেশের পর কাস্টমস ছাড়পত্র ইস্যুর প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ট্যারিফ সিডিউল অনুযায়ী লোড আনলোড চার্জসহ যাবতীয় বন্দর চার্জ পরিশোধের পর পণ্যের গেট/আউট পাস ইস্যু করা হবে। এছাড়া হঠাৎ করেই বন্দরের লোড আনলোডের জন্য এটিআই লিমিটেড নামের এক প্রতিষ্ঠানকে ইজারাদার নিয়োগ করা হয়। ইজারাদারের পরিচয়ধারী শ্রমিক ছাড়া কেউ লোড আনলোডিং পরিচালনা করতে পারবে না বলেও ওই আদেশে বলা হয়। সেখানে লোড আনলোডসহ বন্দর চার্জ নির্ধারণ করা হয় পণ্যের টন প্রতি ১০৪ টাকা (ভ্যাট বাদে)। ১৫ মে থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ লোড আনলোডিং ও বন্দর চার্জ ছাড়া পণ্যের গেট/পাস দেয়া বন্ধ রাখে। নতুন করে এই আদেশ জারি করায় ব্যবসায়ী ও শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়। লোড আনলোডিং ও বন্দর চার্জ ১০৪ টাকা করায় ব্যবসায়ীদের পণ্যের টন প্রতি বাড়তি আরও ৭০ টাকা গুণতে হবে। ব্যবসায়ীদের কাছে বিষয়টি স্পষ্ট না হওয়ায় তারাও আমদানি রফতানি কার্যক্রম বন্ধ করে এর প্রতিবাদ জানান। ১৫, ১৬, ১৭ মে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে সকল আমদানি রফতানি কার্যক্রম বন্ধ রাখেন ব্যবসায়ীরা। এতে বন্দরে কয়েক শ’ পণ্যবাহী যানবাহন আটকা পড়ে। এ সময় ব্যবসায়ীরা বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে সংশ্লিষ্ট আদেশের কাগজপত্র দেখতে চাইলে তারা তাৎক্ষণিক কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এ নিয়ে ধোঁয়াশায় পড়েন ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে ইজারাদারের পরিচয়পত্রধারী না হওয়ায় প্রায় দুই দশক ধরে কাজ করে আসা শ্রমিকরা তাদের কাজ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন। শ্রমিকদের মাঝে অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। সবশেষ গত ১৭ মে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বন্দর কর্তৃপক্ষের জরুরী সভা হয়। সভায় বন্দর ব্যবস্থাপককে ব্যবসায়ীরা সাফ জানিয়ে দেয় স্পষ্ট কোন কাগজ না দেখা পর্যন্ত তারা নতুন আদেশ মানবেন না। আমদানিকারক মোকলেছুর রহমান জানান, যতদিন কর্তৃপক্ষ কাগজ দেখাতে না পারবে ততদিন আমরা পূর্বের ন্যায় আমদানি রফতানি করব। তারা আগামী ২০ মে পর্যন্ত সময় দাবি করেছে। আমরা সরকারের নির্দেশনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। সরকার যদি সত্যিই এমন কোন নিয়ম করে থাকে তবে আমরা তা অবশ্যই মেনে নেব। আমদানিকারক আলমগীর হোসেন জানান, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর নিয়ে চক্রান্ত চলছে। যে প্রতিষ্ঠানকে লোড আনলোডিংয়ের ইজারা দেয়া হয়েছে তাদের কাউকে এ পর্যন্ত আমরা দেখতে পাইনি। কর্তৃপক্ষ সুনজর না দিলে এই বন্দর স্থবির হয়ে পড়বে। সিএ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী মোঃ নাসিম জানান, বন্দর কর্তৃপক্ষ আমাদের সহযোগিতা করছে না। আমাদের কাছে তারা এখনও লোড আনলোডিং ও বন্দর চার্জের বিষয়টি স্পষ্ট করতে পারেনি। কোন কাগজও দেখাতে পারেনি। তারা শুধু তাদের মুনাফার কথা ভাবছে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের কুলি শ্রমিক আহসান হাবিব জানান, ২০ বছর ধরে বাংলাবান্ধায় কাজ করে আসছি। এখন শুনছি আমাদের নাকি আর কাজ করতে দেয়া হবে না। ইজারাদারের পরিচয়ধারী শ্রমিকরা কাজ করবে। আমরা এত দিন কাজ করে আসলাম, আমাদের কি কোন মূল্য নেই। বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদা মিলন জানান, বন্দর চার্জের টাকা কোথায় যাবে, সরকার পাবে কি না এ বিষয়টি বন্দর কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট করতে না পারায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। তারা বিষয়টি স্পষ্ট করলে আমি মনে করি ব্যবসায়ীরা তা মেনে নেবে। এ বিষয়ে বাংলাবান্ধা ল্যান্ডপোর্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপক মামুন সোবহানের কাছে জানতে চাইলে তিনি উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (ট্রাফিক) ও যুগ্ম সচিব হাবিবুর রহমান জানান, সব বন্দরের জন্য যা নিয়ম বাংলাবান্ধার জন্যও তাই করা হয়েছে। কোন ব্যবসায়ী যদি বন্দরে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
×