ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সড়ক প্রশস্তকরণে এলজিইডির পরিকল্পনা

১০ হাজার কিমি রাস্তা সিঙ্গেল লেন থেকে ডবল লেনে রূপান্তর করা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৮ মে ২০১৮

১০ হাজার কিমি রাস্তা সিঙ্গেল লেন থেকে ডবল লেনে রূপান্তর করা হচ্ছে

মশিউর রহমান খান ॥ গ্রামীণ অর্থনৈতিক কর্মকা- সম্প্রসারণের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে ১০ হাজার কিলোমিটার রাস্তাকে সিঙ্গেল লেন থেকে ডবল লেনে রূপান্তর করতে চায় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। পূর্বের ১২ ফুট চওড়া সিঙ্গেল লেন রাস্তার পরিবর্তে ১৮ ফুট চওড়া করে এসব রাস্তা নির্মাণ করা হবে। তবে এসব রাস্তার নক্সায় কিছুটা পরিবর্তন করা হবে। দুর্ঘটনা কমাতে ও যান চলাচল নির্বিঘœ করতে এসব রাস্তায় ঝুঁকিপূর্ণ ও অপ্রয়োজনীয় বাঁক কমানো হবে। প্রতি কিলোমিটার রাস্তা তৈরিতে ব্যয় করা হবে এক কোটি টাকা। প্রাথমিকভাবে রাজধানী ও আশপাশের জেলা ও উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোকে প্রশস্ত করা হবে। এলজিইডির তৈরি রাস্তাগুলোর ওপর ক্রমবর্ধমান নগরায়ণের যথেষ্ট প্রভাব পড়ায় এসব রাস্তাকে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ প্রশস্তকরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে। এলজিইডি সূত্র জানায়, দেশের ‘গুরুত্বপূর্ণ সড়ক মানোন্নয়ন প্রকল্প’র আওতায় এসব রাস্তা প্রশস্তকরণের কাজ বাস্তবায়িত করা হবে। কয়েকটি পর্যায়ে এই উদ্যোগটি বাস্তবায়িত করা হবে। প্রথম পর্যায়ে শুধু ক্রমবর্ধমান নগরায়ণের ফলে কয়েক বছরের মধ্যেই অতি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পরিণত হওয়া এমন রাস্তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত সড়কগুলো ডাবল লেনে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে সংস্থাটি। পরবর্তীতে বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সড়কগুলোকে ডবল লেনে রূপান্তর করা হবে। সূত্র জানায়, বর্তমানে এলজিইডির সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রামের মতো নগর অঞ্চলের পার্শ্ববর্তী এলাকার সড়কগুলো। জানা গেছে, সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা ঢাকার পার্শ্ববর্তী ৪ উপজেলার ৩শ’ ২০ কিমি সিঙ্গেল লেন সড়ক এরই মধ্যে ডবল লেনে রূপান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকার সাভার উপজেলার ১শ’ ২৩ কিলোমিটার, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ৭৪ কিলোমিটার, আড়াইহাজার উপজেলার ৮৫ কিলোমিটার ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৩৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করা হবে। এসব রাস্তায় ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ যানবাহন চলাফেরা করে। এ ছাড়া এসব যানের ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি ওজন নিয়ে চলাফেরা করায় সরু রাস্তা অতি কম সময়ের মধ্যেই ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। ফলে এলজিইডি কর্তৃপক্ষ এসব সড়ক সময়ের আগেই নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ না থাকায় বারবার সংস্কার করাও কঠিন হয়ে পরে। যার ফলে অনেক রাস্তাই ভাঙ্গাচোরা অবস্থায় নষ্ট হয়ে পরে থাকতে দেখা যায়। গ্রামীণ সড়ক নির্মাণের বিদ্যমান ডিজাইন স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী বর্তমানে ১২ ফুট চওড়া পিচঢালা সড়ক নির্মাণ করেছে এলজিইডি। রাস্তা সংলগ্ন এলাকার মানুষের দান করা জমিতে স্থানীয় এলাকায় যোগাযোগ রক্ষায় এসব সড়ক নির্মাণ হয়। এসব এলাকায় দ্রুত নগরায়ণের ফলে বিভিন্ন কল কারখানা তৈরি হওয়ায় যানবাহন ও চলাচলের চাপ অধিক হারে বেড়ে যাওয়ায় এমন অনেক রাস্তার আয়ুষ্কাল হারিয়ে অনেকটা চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এতে গ্রামীণ অর্থনৈতিক কর্মকা- বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি প্রতিনিয়তই বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা যার ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন উক্ত এলাকায় চলাচলকারী ও সাধারণ জনগণ। এসব বিবেচনায় নিয়ে এলজিইডি নিজেদের আওতাধীন ১০ হাজার কিলোমিটার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সিঙ্গেল লেন থেকে ডবল লেনে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছে। এলজিইডি সূত্র জানায়, রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য সড়কের গুরুত্ব বিবেচনা হিসেবে ট্রাফিক সংক্রান্ত নানা তথ্যকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এসব রাস্তায় প্রতিদিন কী পরিমাণ যানবাহন চলাচল করে, যানবাহনের ধরন, পথচারীর সংখ্যা, আগামী ২০ বছরে ট্রাফিক ভলিউম কেমন দাঁড়াবে তা আমলে নেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে সড়কের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রয়োজনীয়তা অনুযায়ী স্কুল, হাসপাতাল বা হাটবাজারের সংযোগ বিবেচনায় নিয়ে জরিপ করা হয়েছে। চাহিদার প্রেক্ষিতে প্রতিদিন গ্রামীণ সড়কগুলোয় মালবাহী যানবাহন ও গণপরিবহন চলাচল প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। একইসঙ্গে এসব রাস্তায় বিগত বছরগুলোর তুলনায় অতি দ্রুততার সঙ্গে যানবাহনের ধরনও বদলে গেছে । আগে ভারী কোন যানবাহনই যেখানে চলত না সেসব রাস্তায় প্রতিদিনই অসংখ্য ভারী যানবাহন চলাচল করছে। এতে এলজিইডির অধিকাংশ সড়কগুলো ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত চাপে বেহাল হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগীও হয়ে পড়েছে। সূত্র জানায়, এলজিইডির অধীনে সারা দেশে পাকা সড়ক ১ লাখ ৮০৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৭০ হাজার কিলোমিটার সড়ক আয়ুষ্কাল হারিয়েছে। বাকি ৩০ হাজার ৮০৫ কিলোমিটার পাকা সড়কের অবস্থাও খুব ভাল অবস্থায় নেই। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও সক্ষমতা বিবেচনায় ভারী যান চলাচলের জন্য অনেকটা অযোগ্য হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ অর্থনৈতিক কার্যক্রম সম্প্রসারণের ফলে সরকার রাস্তা নির্মাণে ২০০৫ সালে ডিজাইন গাইডলাইন পরিবর্তনের প্রয়োজন হওয়ায় ২০১৪ সালে একনেকের সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্রামীণ সড়কের ডিজাইন পুনর্গঠনের পরামর্শ দেন। দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে। ২০০৫ সাল থেকে এলজিইডি গ্রামীণ সড়ক নির্মাণ ও পুননির্মাণে পরিকল্পনা কমিশনের ডিজাইন স্ট্যান্ডার্ড অনুসরণ করছে। এসব রাস্তা তৈরি করা গেলে নগর সংশ্লিষ্ট এলাকায় চলাচলকারী নাগরিকগণ ও যাতায়াতকারী যানবাহন সহজে চলাচল করতে সক্ষম হবে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে যার প্রভাব পড়বে। ফলে অর্থনীতি বিকাশে ও নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।
×