ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

টেকনাফ উখিয়া মহেশখালীতে ৯০ গডফাদার ইয়াবা পাচারের নেটওয়ার্ক

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ২৮ মে ২০১৮

টেকনাফ উখিয়া মহেশখালীতে ৯০ গডফাদার ইয়াবা পাচারের নেটওয়ার্ক

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ মিয়ানমারে উৎপাদিত মরণনেশা ইয়াবা বাংলাদেশে আসার গেটওয়ে কক্সবাজারের টেকনাফ। এ জেলার টেকনাফ, উখিয়া ও মহেশখালীতে ইয়াবা চোরাকারবারিদের গডফাদারের সংখ্যা ৯০। এর মধ্যে টেকনাফ-উখিয়ায় ৬০ ও মহেশখালীতে রয়েছে ৩০। এসব গডফাদারদের আইনের আওতায় এনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি স্থানীয় জনমনে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকবিরোধী সরকারের পক্ষে র‌্যাবের অভিযান শুরু হওয়ার পর ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্থানে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের সঙ্গে র‌্যাব-পুলিশের বন্দুকযুদ্ধ হচ্ছে। এতে মাদক চোরাকারবারিরা যেমন প্রাণ হারাচ্ছে, তেমনি পুলিশ সদস্যদেরও অনেকেও আহত হচ্ছেন। মাদকবিরোধী অভিযান ইতোমধ্যে সকল মহলে সাধুবাদ কুড়িয়েছে। এ অভিযান যেন জোরাল ভাবে অব্যাহত থাকেÑ এমন আশা সকলের মাঝে রয়েছে। ইয়াবার আগ্রাসন বাংলাদেশের যুব সমাজকে ধ্বংসের শেষ প্রান্তে নিয়ে যায়। কক্সবাজার অঞ্চলের উখিয়া-টেকনাফ ও মহেখালী চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের গডফাদাররা নিজেদের বিত্ত বৈভব গড়ে তোলার বিপরীতে দেশকে ঘোর অমানিশায় নিপতিত করেছে। বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, উখিয়া-টেকনাফ ও কক্সবাজারের চিহ্নিত গডফাদার আইনী প্রক্রিয়ায় সমূলে উৎখাত করতেই হবে। এদের সম্পৃক্ততায় দেশ পরিণত হয়েছে ইয়াবার গোডাউনে। সরকার পক্ষে ইতোমধ্যেই ঘোষণা দেয়া হয়েছে মাদক পাচারকারীরা যে দলেরই হোক না কেন ছাড় পাবে না। এ নিয়ে সরকার জিরো টলারেন্সের অবস্থানে। সরকারের পক্ষে এমন ঘোষণার কার্যকারিতা লক্ষ্য করা গেলেও শনিবার গভীর রাত। টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়কে নোয়াখালিয়া পাড়ায় বন্দুকযুদ্ধে একরামুল হক নামে যিনি বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছেন তিনি সরকার দলীয়। তিনি টেকনাফ উপজেলার যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও টেকনাফ বাস স্টেশন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এবং টেকনাফ মাইক্রো শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক আহ্বায়ক। তার বিরুদ্ধে ইয়াবা সংক্রান্ত মামলা রয়েছে। এ ছাড়া তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা পাচারকারী। উখিয়া-টেকনাফে এবং মহেশখালীতে যে ৬০ ইয়াবা গডফাদারদের তালিকা রয়েছে একরামুল হক তার অন্যতম বলে র‌্যাব সূত্রে জানানো হয়েছে। অবশিষ্টদের খোঁজা হচ্ছে বলেও র‌্যাব জানিয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সূত্রের মতে, সরকারী নির্দেশ র‌্যাবের অভিযানে টার্গেট যারা লিস্টেড। কিন্তু লিস্টে নাম নেই এমন সংখ্যাও কম নয়। দীর্ঘদিন ধরে এ অবৈধ ইয়াবা ব্যবসার সুযোগ পেয়ে নব্য গডফাদার সৃষ্টিও হয়েছে। ইয়াবা পাচারের ব্যবসার বিপরীতে কাড়ি কাড়ি অর্থ পুরো টেকনাফে গড়ে উঠেছে সুরম্য প্রাসাদ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রণীত ইয়াবা চোরাকারবারিদের গডফাদারসহ ক্যারিয়ারদের লিস্টও রয়েছে। শীর্ষ স্থানীয়দের অনেকে ইতোমধ্যে গাঢাকা দিলেও টেকনাফে এখনও অনেকে সরকার দলীয়দের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক থাকার কারণে আইনের আওতায় আনা হবে কী না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। টেকনাফে এমন একজন নব্য সরকার দলীয় সমর্থক হয়েছেন যিনি পূর্বে ছিলেন সরকার বিরোধী দলীয় একটি সংগঠনের নেতা। স্থানীয় এমপির প্রভাবে তার হাত ধরে তিনি বনে গেছেন এখন সরকার দলীয় প্রভাবশালী নেতা। কক্সবাজার অঞ্চলে কারা ইয়াবা চোরকারবারের নেপথ্যের নায়ক তা স্থানীয় মানুষ যেমন জানে, তেমনি প্রশাসনের কাছেও অজানা নয়। সঙ্গত কারণে চলমান অভিযান থেকে লিস্টেড এসব চোরাকারবারিরা যাতে কোনভাবেই বাদ পড়ে না যায় এমন কামনা সকলের। এরা এ দেশের যুব সমাজকে ধ্বংস করার জন্য যে অপব্যবসার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে তার খেসারত যেন তাদের পেতে হয় এমন কথাও আলোচিত হচ্ছে। গত ৪ মে থেকে দেশব্যাপী মাদকের বিরুদ্ধে র‌্যাবের যুদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পর ইয়াবা পাচারের মূল গেটওয়ে টেকনাফ-উখিয়া ও কক্সবাজারের গডফাদারদের অধিকাংশ এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। সঙ্গত কারণে আলোচিত হচ্ছে এরা পার পেয়ে যাবে কী না। অর্থ-বিত্ত, প্রভাব কোনটাই এদের কমতি নেই। কিন্তু সরকারী ঘোষণা অনুযায়ী এরা কোনভাবে পার পেতে পারে না। বর্তমানে দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযান ব্যাপকভাবে আলোচিত। ব্যতিক্রমী আলোচনাও চলছে। এমপি হওয়ার সুবাদে সরকার দলীয় কেউ যদি আইনের হাত থেকে বাদ পড়ে যায় তা হবে দুর্ভাগ্যজনক। সংসদেও যে ইয়াবা স¤্রাট রয়েছে এমন বক্তব্য দিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। তাঁর বক্তব্য শতভাগ সত্য। ইয়াবা চোরাচালানের ক্ষেত্রে আলোচিত এমপির পৃষ্ঠপোষকতা একেবারে শীর্ষ বলে প্রমাণিত সত্য। প্রচার মাধ্যমে দিনের পর দিন ইয়াবা সংক্রান্ত অসংখ্য রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। এসব রিপোর্টের সূত্র ধরেও তদন্ত সাপেক্ষে রাঘব-বোয়ালদের আইনের আওতায় আনা যায়। এবারের অভিযানে গডফাদাররা বাদ থাকলে এ নিয়ে খোদ সরকারকেই চরম সমালোচনার মুখে পড়তে হবে বলে আলোচিত হচ্ছে। তবে ক্রসফায়ার বা বন্দুকযুদ্ধে প্রতিদিন মাদক চোরাকারবারি চক্রের সদস্যদের মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে কারও মনে নেতিবাচক প্রভাব নেই। উল্টো ইতিবাচক বলেই প্রতিভাত হচ্ছে। সূত্রমতে, এ অভিযান বহু আগে শুরু হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। বিলম্বে হলেও শুরু হয়েছে। তাই শান্তিকামী মানুষ চরম আশায় বুক বেঁধেছে। দেশে যত উন্নয়ন কর্মকা- হোক না কেন মাদকের ভয়াল আগ্রাসন, সন্ত্রাসীদের হিংস্র ছোবল, জনগণকে দিন দিন ক্ষুব্ধ করে তুলছিল। বর্তমান সরকার মেয়াদের শেষ পর্যায়ে এসে মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার বিষয়টি নিয়ে শান্তিকামী মানুষ আশায় বুক বেঁধেছে। এ অভিযানে বিচ্ছিন্ন বিভিন্ন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা যে নেই, তা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না বলেও আলোচিত হচ্ছে। তারপরও মানুষ শান্তি চাই। যা সরকারের ভাবমূর্তিকেই বহুদূর এগিয়ে নেবে বলে বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন সূত্রের অভিমত। আলোচিত হচ্ছে মাদকবিরোধী চলমান যুদ্ধে সফলতা অর্জন ছাড়া বিকল্প কোন পথ খোলা নেই। গডফাদারদের সমূলে উৎখাত করে এদের সহযোগীদেরও আইনের আওতায় আনা যে অপরিহার্য তা নিয়ে কোন মহলে ভিন্নতর কোন বক্তব্য নেই।
×