ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ধরা পড়েনি ডনরা ॥ আত্মগোপনে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২৮ মে ২০১৮

ধরা পড়েনি ডনরা ॥ আত্মগোপনে শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা

শংকর কুমার দে ॥ দেশের শতাধিক মাদক সিন্ডিকেট দলের সদস্য মাদক মাফিয়া ডন বলে পরিচিত শীর্ষ মাদক কারবারির মোবাইল ফোন ট্র্যাক করেছে র‌্যাব ও পুলিশ। মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে দেখা গেছে অনেকেই আত্মগোপনে গিয়ে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিয়েছে আবার কেউ কেউ নতুন মোবাইলের সিম কিনে যোগাযোগ রাখছে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। মাদকের গডফাদার বলে পরিচিত অনেকেই সীমান্তের চোরাই কারবারি। শীর্ষ মাদক কারবারিদের কেউ কেউ গেছেন ওমরাহ পালনে আর ছিঁচকে খুচরো মাদক কারবারিরা চলে গেছে তাবলিগ জামাতে। দেশে আত্মগোপন করে আছে তারা যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সেই জন্য বিমান বন্দর ও সীমান্তে মাদক সিন্ডিকেটের শীর্ষ মাদক কারবারির তালিকা পাঠানো হচ্ছে। বন্দুকযুদ্ধের ভয়ে কারাগারে আটক মাদক কারবারিরা এখন আর জামিনে বের হচ্ছে না। মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরুর পর বন্দুকযুদ্ধের ভয়ে মাদক সিন্ডিকেটের সদস্যদের বর্তমান এই অবস্থার কারণে রাঘব বোয়ালরা ধরা পড়ছে না, অভিযানের জালে আটকা পড়ছে চুনোপুটি শ্রেণীর মাদক কারবারি। মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু পর গত ২৩ দিনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে অন্তত ৯০ জন নিহত এবং প্রায় ১০ হাজার জন গ্রেফতার হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার জনের। এর মধ্যে মাদক সিন্ডিকেটের মাফিয়া ডন বলে পরিচিত এমন মাদকের পৃষ্ঠপোষক বা গডফাদার এমন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী নেই। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশব্যাপী মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে কক্সবাজারের সাংসদ আবদুর রহমান বদির বেয়াই ও এক পৌর কাউন্সিলর ছাড়া এখন পর্যন্ত কোন মাদক সিন্ডিকেটের গডফাদার বন্দুকযুদ্ধে নিহত বা গ্রেফতারের তালিকায় নেই। তবে তাদের অধিকাংশই ছোট বা মাঝারি শ্রেণীর মাদক ব্যবসায়ী বা বাহক অথবা সেবক চুনোপুটি শ্রেণীর বলে জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, মাদক ব্যবসায়ী যত প্রভাশালী হোক না কেন, তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। আইনের আওতায় সবাইকে আসতেই হবে। সরকারের ছয়টি সংস্থার সমন্বয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে যাতে প্রায় ১৪ হাজার জনের নাম রয়েছে। এই তালিকায় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য রয়েছে যারা এখনও ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে। এর মধ্যে মাদকের গডফাদার, প্রভাবশালী আশ্রয়দাতা, বিনিয়োগকারীদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জালে আটকানো হবে। দেশ থেকে মাদকের মূলোৎপাটনের স্বার্থেই সরকারী সংস্থার তদন্তে যেসব গডফাদার বা পৃষ্ঠপোষকের নাম এসেছে তাদের আইনের আওতায় আনার কৌশল নেয়া হচ্ছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি অব্যাহত রেখে অভিযান শতভাগ কার্যকর করার জন্য কৌশল পরিবর্তনের কথা চিন্তাভাবনা করছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্তৃপক্ষ। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, মাদক বিরোধী বিশেষ অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে যারা মারা গেছে তারা বাহক। যারা মাদক আমদানি করছে, যারা বিনিয়োগ করছে তারা ধরা পড়ছে না। দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানে অনেক মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়েছে। বন্দুকযুদ্ধে অনেক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সব পর্যায়ের মাদক ব্যবসায়ীই জালে আসবে। চলমান মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের ফলে মাদকের রুট বন্ধ করা হচ্ছে, মাদকের স্পটগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে, যে এলাকায় বেশি মাদকের প্রাদুর্ভাব সেখানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং সাধারণ মানুষকে নিয়ে এর বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরি করা হচ্ছে। র‌্যাবের একজন কর্মকর্তা বলেন, যাদের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা আছে, যাদের সঙ্গে মাদক পাচ্ছি, তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, প্রমাণ পেলে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। যাদের বিরুদ্ধে মাদক সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে তাদের কোন দলীয় পরিচয় দেখা হচ্ছে না। চলমান মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে কাউকে ছাড় দেয়া হচ্ছে না। সারাদেশে মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন রোধে পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ অভিযান শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা সারাদেশে মাদকের গডফাদার, শীর্ষপর্যায়ের ব্যবসায়ী, পাইকারি ব্যবসায়ী এবং খুচরা বিক্রেতাদের তালিকা করেছি। সেই তালিকা অনুযায়ী অভিযান চলছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, তবে যারা ইয়াবার মতো মাদক ব্যবাসায়ীর সঙ্গে এখনও লুকিয়ে ছাপিয়ে মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা অন্যত্র আত্মগোপনে থেকে মাদকের দাম কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মাদক কারবারির নিহত হওয়ার সংখ্যার একেক অভিযানে মাদক ব্যবসায়ী বন্দুকযুদ্ধে নিহতের ঘটনায় মাদক স¤্রাটরা দেশ ছাড়ছে। আর ছিঁচকেরা গ্রেফতার এড়াতে যাচ্ছে তাবলিগ জামাতে। মাদক ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত একটি অংশ ইতোমধ্যে সীমান্তরক্ষীদের চোখে ধুলো দিয়ে সীমান্তের চোরাই পথে পার্শ্ববর্তী দেশে চলে গেছে। অপর অংশটি নিজেদের অবস্থান বদল করে দেশের ভেতরেই আত্মগোপন করেছে। তবে এদের কেউ কেউও মোবাইলে মাদক নেটওয়ার্ক অব্যাহত রেখেছে। আবার অনেকেই পুরাতন মোবাইল ফোন বন্ধ করে নতুন নম্বর দিয়ে যোগাযোগসহ মাদকের কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় পুলিশ শতাধিক মাদক ব্যবসায়ী গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরুর পর গা ঢাকা দিয়েছে ঢাকাসহ সারাদেশের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা। কেবল রাজধানীর তালিকাভুক্ত শীর্ষ ১০০ মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে ৩৭ গডফাদারও থেকে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। রাজধানীর বাইরে বেশিরভাগ গডফাদারই গা ঢাকা দিয়েছে। অনেকেই পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী ২ ডজন মামলার আসামি ইউসুফ গ্রেফতার এড়াতে ভারতে পাড়ি দিয়েছে বলে তথ্য পেয়েছে। পাচার হয়, সে সব জেলার গডফাদাররা ইতোমধ্যে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সীমান্তবর্তী জেলা রাজশাহী, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, যশোর, কুমিল্লা, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দিনাজপুর, জয়পুরহাটের মাদক সম্রাটরা গত কয়েক দিনে উধাও। রাজশাহী অঞ্চলের এক মাদক ব্যবসায়ী জানান, হেরোইনের আন্তর্জাতিক রুট রাজশাহীর গোদাগাড়ির মাদক সম্রাটদের কেউ পদ্মার চরে, কেউবা বরেন্দ্র অঞ্চলে আবার কেউ কেউ সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে রাজধানীর ১০০ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীর তালিকা তৈরি করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনতে ডিএমপির আটটি অঞ্চলে (ক্রাইম) কর্তব্যরত উপ-কমিশনারদের (ডিসি) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ডিএমপির উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে উপ-কমিশনারদের এক বৈঠকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়। ডিএমপির আট অঞ্চলের অপরাধের তথ্য নিয়ে যে তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এতে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের নিয়ে তালিকাটি করা হয়েছে যাদের বিরুদ্ধে চার বা ততোধিক মাদক সংশ্লিষ্ট মামলা রয়েছে। তালিকা নিয়ে ইতোমধ্যে পুলিশ মাঠে নেমেছে। তবে ঢাকার বাইরে আগেভাগে অভিযান শুরু হওয়ায় ঢাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। কেউ কেউ বিদেশ চলে গেছেন। আবার কেউ গেছেন ভারতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকার বাইরে অভিযান শুরুর পর ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার মাদকের গডফাদার ইশতিয়াক ওরফে কামরুল হাসান এবং নাদিম গা ঢাকা দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে ধরাছোঁয়ার বাইরে। উত্তরা এলাকার মাদক স¤্রাট ফজলুল করিম, বাড্ডার রিয়াদ, সাব্বির, এনায়েত, শরিফ, বনানীর আনোয়ার, কদমতলীর বিল্লালর ভাই ইমরানসহ অনেক গডফাদারই গা ঢাকা দিয়েছে। এদিকে, কুমিল্লা সিন্ডিকেটের অধীনে ঢাকায় অন্তত ৫০ জন ইয়াবা ডিলারখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী রয়েছে। এই ৫০ ডিলারের আওতায় তিন শতাধিক সেলসম্যান প্রতিদিন খুচরা হিসেবে ৫০ সহস্রাধিক ইয়াবা বিক্রি করে থাকে। এই গ্রুপের অন্যতম ডিলার হচ্ছেন মতিঝিল ফকিরাপুলের গরমপানি গলির জাপানী বাবু। তার হাত গলিয়ে প্রতিদিন ১০ হাজার ইয়াবা বাজারজাত হয়। সিন্ডিকেটের আরেক ডিলার হচ্ছেন- শাহজাহানপুরের খোড়া মানিক ওরফে দয়াল মানিক। কমলাপুর বিআরটিসি বাস ডিপো ও আশপাশ এলাকার মাদক বাজার নিয়ন্ত্রণ করে কেরফা বিল্লাল নামের এক সন্ত্রাসী। রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকায় ইয়াবা বাজার নিয়ন্ত্রণ করে হালিম ও তার সহযোগীরা। খিলগাঁও তিলপাপাড়া কালভার্ট এলাকায় নকল হিজড়া সিন্ডিকেট এখন মাদক কেনাবেচার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে। সেখানে ময়নার নেতৃত্বে শাহআলম, রুবি, সনেকা, নাচনেওয়ালী, মিতু, সাবের, ছালামসহ ১৫/১৬ জন নকল হিজড়ার সমন্বয়ে সংঘবদ্ধ একটি চক্র রয়েছে। তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছে খিলগাঁও ঈদগা মসজিদ এলাকার ডাকসাইটে মাদক ব্যবসায়ী রেখা আক্তার ফাতেমা ও গোড়ান ঝিলপাড়ের মাদক সন্ত্রাসী হান্নান। শান্তিবাগ ঝিল মসজিদ এলাকায় লিটন, সোহেল, আমতলায় উজ্জ্বল, নূরা, শাহজাহানপুর রেলগেট বাজারে মুরগি মাসুম, ইকবাল, শহীদবাগে হোন্ডা মিলন গা ঢাকা কুমিল্লার মাদক সিন্ডিকেটের অন্যতম এজেন্ট হিসেবে বাড্ডা-রামপুরা এলাকায় ইয়াবা ও ফেন্সিডিল বিক্রি দেখভাল করেন জয়নাল আবেদীন। রাজনৈতিক প্রভাবকে পুঁজি করে জয়নাল শতাধিক সেলসম্যান দ্বারা দুটি থানার মাদক বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। বাড্ডার ডিআইটি রোড এলাকায় রিয়াজ পরিচালনা করে ইয়াবার খুচরা বাজার। ডিবির সোর্স পরিচয়দানকারী সুমনের নিয়ন্ত্রণে চলছে বাড্ডা-শাহজাদপুরের ফেন্সিডিল বাজার। ইয়াবার আরেক ডিলার দক্ষিণ বাড্ডার ‘বাবা রহমত’ মাদক বাজার গড়ে তুলেছে বনানী থানার মহাখালী এলাকায়। বন ভবন সংলগ্ন সিঙ্গার গলির আস্তানা থেকে সে ও তার সহযোগীরা প্রতিদিন অন্তত পাঁচ হাজার ইয়াবা বিক্রি করে থাকেন। মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর পর বন্দুকযুদ্ধে নিহত এবং গ্রেফতারের সংখ্যা বেড়ে চলার ঘটনায় যারা এখনও মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তারা মোবইল ফোনে কারবার করে যাচ্ছে। তবে তারা মাদকের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজধানীর অন্যতম স্পট কাওরান বাজার রেললাইন বস্তি এলাকা। মাদকাসক্ত এমন ব্যক্তিরা কাওরান বাজারের মাদক স্পটে গিয়ে মাদক কিনতে গিয়ে মাদক কারবারিদের না পেয়ে নিরাশ হন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তালিকা আছে এমন কাওরান বাজারের ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজা এমন মাদক কারবারিদের কাউকেই এখন আর দেখা যাচ্ছে না, অনেকেই ইতোমধ্যে তাবলিগ জামাতে গেছে বলে আইনশৃঙাখলা বাহিনীর কাছে তথ্য রয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের তালিকা ধরে রাজধানী ও তার উপকণ্ঠ এলাকায় মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে শতাধিক চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী সন্ধানে যান। কিন্তু মাদক কারবারিদের ঠিকানায় গিয়ে দেখে তারা আত্মগোপনে চলে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তালিকায় যারা রাঘব বোয়াল, মাদক মাফিয়া ডন তাদের কাউকে ওই ঠিকানায় পায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। মাদকবিরোধী অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাদক ব্যবসায়ীদের পরিবার পরিজন, এলাকার লোকজন ও তাদের সোর্স মারফত মাদক ব্যবসায়ীদের অবস্থান নির্ণয়ের চেষ্টা করছে। মাদক ব্যবসায়ীরা আত্মগোপনে থেকেও যারা মোবাইল মাদক নেটওয়ার্ক চালিয়ে যাচ্ছে তাদের বিষয়ে কৌশল অবলম্বন করে পাকড়াও করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর কমলাপুর, খিলগাঁও ও শাহজাহানপুরসহ বিভিন্ন এলাকাজুড়েই রয়েছে একাধিক মাদক সিন্ডিকেটের নেটওয়ার্ক। এর মধ্যে প্রায় ২ ডজন সদস্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেটওয়ার্কের আওতায় রয়েছে। এরা অধিকাংশই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ও আশপাশে এলাকায় নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের খোঁজে ঠিকানায় গিয়ে দেখতে পায় এখন কেউই এলাকায় নেই। মাদক কারবারিরা এলাকা ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে লুকিয়ে আত্মগোপনে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের খোঁজ নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা তাদের সোর্স মারফত জানতে পেরেছেন, দিন মজুর শ্রেণীর লোকজন ছদ্মবেশে ক্যারিয়ার সেজে পরিচিত ঘনিষ্টজন মাদকসাক্তদের ইয়াবাসহ মাদক এনে দেয়। মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের আগেও যেই ইয়াবা পিস সাধারণত ২ থেকে ৩শ’ টাকায় বিক্রি করা হতো তা এখন ৫/৭’শ টাকায় পাওয়াও দুর্লভ। মাদক কারবারিরা বিদেশে, আত্মগোপনে, তাবলিগ জামাতে, আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে চলে যাওয়ায় ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিলের মতো মাদকের দাম বেড়ে গেছে, যা মাদকাসক্তদের কাছে এখন আকাশে চাঁদের মতোই। ডিএমপি সূত্র জানান, এক সময়ে রাজধানীর ৪৯ থানা এলাকার পুরো নগরজুড়েই ছিল মাদকের নেটওয়ার্ক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসৎ, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের সহায়তায় মাদকের এই নেটওয়ার্ক কাজ করেছে। এর মধ্যে রাজধানীর মিরপুর, কাফরুল আগারগাঁও এলাকা থেকেই আত্মগোপনের গেছে কমপক্ষে অর্ধশত মাদক কারবারি। রাজধানীর পুরান ঢাকা ইসলামবাগ, আগামাসীলেন, বাংলাদেশ মাঠ, হাজারীবাগ, আমলীগোলা বালুর ঘাট, আমিন বাজার, গাবতলী ও কেরানীগঞ্জ এলাকা থেকে আত্মগোপনে গেছেন আরও অর্ধশতাধিক চিহ্নিত মাদক কারবারি। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হলেও এতদিন রাজধানীতে আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিযান শুরু করা হয়নি। রাজধানীকে মাদকমুক্ত নগরী গড়ে তোলা হবে। জঙ্গীবাদ যেমন রাজধানী থেকে দমন করেছি তেমনিভাবে মাদককেও নির্বাসনে পাঠানো হবে। মাদক কারবারি যারাই আত্মগোপনে গেছে তাদের তালিকা রয়েছে। মাদক কারবার বাদ দিয়ে যদি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের সহায়তা দেবে। তবে মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে একটি মানুষকে রাজধানী ঢাকা নগরীতে মাদক ব্যবসা করতে দেয়া হবে না, রাজধানী হবে মাদকমুক্ত নগরী। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, সর্বনাশা নীল নেশার মাদক নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। এর কোন বিকল্প নেই। তিনি বলেন, মাদক শুধু ব্যক্তিকে ধ্বংস করে না। ক্ষেত্র বিশেষে পরিবার ও সমাজকেও ধ্বংস করে দেয়। আইনের ফাঁকফোকরের মাদক কারবারিরা সহজেই জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও একই কারবারের যুক্ত হয় বলেই দিনে দিনে মাদকের কারবারের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। দেশব্যাপী মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার পর জনসচেতনার মাধ্যমে দেশ-বিদেশে ভাবমূর্তি উজ্জ্বলসহ ব্যাপক প্রশংসা অর্জন করেছে।
×