ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

মানবিক সমাজ গঠনে পাথেয় নজরুলের বাণী

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ২৮ মে ২০১৮

 মানবিক সমাজ গঠনে পাথেয় নজরুলের  বাণী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় জাগরণের কবি কাজী নজরুল। মানবিক সমাজ গঠনে পাথেয় হয়ে থাকবে নজরুলের অসাম্প্রদায়িক বাণী। সেই সঙ্গে নজরুলের কবিতা, গদ্য এবং বৈচিত্র্যময় সুর-ঐশ্বর্যের সম্মোহন বাঙালীর হৃদয় থেকে কখনই হারিয়ে যাবে না। বরং তা নব নব ভাবনায় উদ্ভাসিত হবে। রবিবার নজরুল ইনস্টিটিউট আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এভাবেই তুলে ধরেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে। সাম্য, প্রেম ও দ্রোহের কবির ১১৯তম জন্মবার্ষিকী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জন্মদিন উদ্যাপনের এ অনুষ্ঠানে নজরুলের বক্তার কথনে উঠে আসে নজরুলের সৃষ্টির আলোয় তার জীবনবোধ। সেই সঙ্গে গানের সুরে ও কবিতার ছন্দে ছিল নজরুল বন্দনা। রবিবার সকালে ধানমন্ডির কবি ভবনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সিমিন হোসেন রিমি। বিশেষ অতিথি ছিলেন কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা, ছায়ানট কলকাতার সভাপতি সোমঋতা মল্লিক। নজরুলকে নিয়ে আলোচনা করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক সৌমিত্র শেখর। সভাপতিত্ব করেন ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মোঃ আব্দুর রাজ্জাক ভূঞা। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইনস্টিটিউটের সচিব মোঃ আব্দুর রহিম। এছাড়া, অনুষ্ঠানে সোমঋতা মল্লিকের তত্ত্বাবধানে ‘নজরুলের সাতান্নটি পত্র: শ্রুতিভাষ্য’ এর অডিও এলবামের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। এ অডিও এলবামে বাংলাদেশ ও ভারতের ৪১ জন আবৃত্তিকার অংশ নিয়েছেন। নজরুলের চিঠি নিয়ে নজরুল ইনস্টিটিউট থেকে প্রকাশিত গ্রন্থের শ্রুতিরূপ এই অডিও এ্যালবামটি। বক্তৃতায় সিমিন হোসেন রিমি বলেন, নজরুল প্রচলিত পথে হাঁটেননি। তিনি নতুন পথ সৃষ্টি করেছেন। আর তা হলো মানবতার পথ। ধর্মীয় গোঁড়ামি, পরাধীনতা থেকে মানুষের মুক্তি, মানুষের স্বাধীনতার পথ। কবি মুহম্মদ নুরুল হুদা বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল মানবসাম্যের কবি, গণজাগরণের কবি। নজরুল একইসঙ্গে সমকালের শ্রেষ্ঠ নির্মাতা, শ্রেষ্ঠ শিল্পী। নতুন পথের অগ্রপথিক। ‘শুভ্র সমুজ্জ্বল’ সমবেত কণ্ঠে এ গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। পরে শিল্পীরা সমবেত কণ্ঠে গেয়ে শোনায় ‘মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম’। ছন্দা চক্রবর্তী গেয়ে শোনান ‘নিশি ভোর হলো জাগিয়ে পরাণ পিয়া’। এছাড়াও একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সোমঋতা মল্লিক, শিল্পী নাহিদ মোমেন, শিল্পী পাল। নজরুলের চিঠি পাঠ করেন জিনিয়া ফেরদৌস। অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন। বর্ণনামূলক নিদর্শন তালিকাবিষয়ক গ্রন্থের প্রকাশনা ॥ অধ্যাপক ও গবেষক মোহাম্মদ ইউসুফ রচিত ‘এ্যারাবিক এ্যান্ড পার্সিয়ান ইন্সক্রিপশন্স ইন দ্য বাংলাদেশ ন্যাশনাল মিউজিয়াম’ শীর্ষক বর্ণনামূলক নিদর্শন তালিকাবিষয়ক গ্রন্থের প্রকাশনা অনুষ্ঠিত হলো রবিবার। দুপুরে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে গ্রন্থটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় জাদুঘরের সাবেক মহাপরিচালক ও বঙ্গীয় শিল্পকলা চর্চার আন্তর্জাতিক কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ড. এনামুল হক। আলোচনায় অংশ নেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. শরীফ উদ্দিন আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জাদুঘরের সচিব মো. শওকত নবী। অনুভূতি ব্যক্ত করে অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউসুফ সিদ্দিক বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংরক্ষিত সকল ইসলামিক শিলালিপি, এমনকি যেসব শিলালিপির পাঠোদ্ধার পূর্বে করা হয়নি সেগুলোসহ তৈরি করা হয়েছে এই বর্ণনামূলক নিদর্শন তালিকা। এই শিলালিপি থেকে বাংলায় মুসলিম শাসনের ইতিবৃত্ত পাওয়া যায়। এ বইটিতে শুধু শিলালিপির লেখাগুলো অনুবাদই করা হয়নি পাশাপাশি সে সময়ের মুসলিম সমাজ ও সময়ের সঙ্গে তাদের পরিবর্তন ও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। অধ্যাপক ড. শরীফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, মূলত শিলালিপি হচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনার গায়ে সাঁটা পাথরে উৎকীর্ণ লিপি। সুলতানি আমলে প্রধানত ধর্মীয় স্থাপনা, যেমন মসজিদ-মাদ্রাসা, সমাধি প্রভৃতির গায়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিলালিপি উৎকীর্ণ হয়েছিল। মুগল আমলে ধর্মীয় স্থাপনায় সংযুক্ত শিলালিপি ছাডাও লৌকিক ইমারতে কিছু সংখ্যক শিলালিপি পাওয়া যায়। সুলতানি বাংলায় প্রাপ্ত শিলালিপি ছিল সাধারণত আরবিতে উৎকীর্ণ। ফারসি লিপির সংখ্যা ছিল খুবই কম। শিলালিপিতে সাধারণত কোরআনের আয়াত, হাদিস, সুলতানের পরিচয়, উৎকীর্ণকারী কর্মকর্তার পরিচয় এবং তারিখ খোদিত থাকত। শিলালিপিসমূহের সিংহভাগই মসজিদ-মাদ্রাসা, খানকাহ, প্রাসাদ, সেতু, ঈদগাহ, ফটক ইত্যাদি নির্মাণ বা পুকুর, কূপ খননের সময় উৎকীর্ণ করা হতো। মধ্যযুগের বাংলার শিলালিপি মুসলিম ক্যালিগ্রাফি বা হস্তলিখন শিল্পানুসারে লেখা হতো। ইসলাম ধর্মে প্রাণীদেহ অঙ্কনে নিষেধাজ্ঞা থাকায় লিপি, ফুল, পত্র, বৃক্ষাদি ও নক্সা অলঙ্করণের দিকে শিল্পিরা মনোযোগী হয়েছিলেন। আরবি ক্যালিগ্রাফির ক্রমবিকাশের ধারাক্রম মধ্যযুগের বাংলার শিলালিপিতেও দৃশ্যমান। এই বইয়ে জাদুঘরে সংরক্ষিত সকল শিলালিপির বর্ণনা দেয়া হয়েছে। পাঠক সাবলীলভাবে উপলব্ধি করতে পারবে এর অর্থসমূহ। ড. এনামুল হক বলেন, মধ্যযুগের লিপিসাক্ষ্য প্রধানত স্থাপনার গায়েই পাওয়া গিয়েছে। এসব স্থাপনার সিংহভাগ ছিল মসজিদ। ইংরেজীতে যাকে ফাউন্ডেশন স্টোন বলা হয়। এসব স্থাপনার বেশিরভাগ সরকারীভাবে নির্মিত হতো বলে শিলালিপিতে বক্তব্য প্রকাশের ধরনও ছিল প্রায় অভিন্ন। অধিকাংশ লিপি ছিল আরবি ও ফারসি ভাষায় লেখা। বাংলা লিপি ছিল হাতেগোনা। সমকালীন ইতিহাস গ্রন্থ না থাকায় মধ্যযুগের ইতিহাস পুনর্গঠনে এসব লিপিসাক্ষ্যের বিশ্লেষণ অপরিহার্য। তবে এ ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক যুগের চরিত্র ছিল আলাদা। ইউরোপীয়দের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে ভাষা শিক্ষা ও সংস্কৃতির রূপান্তর ঘটেছে। দেশের নানা অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা জমিদার বাড়ি ও মসজিদে অনেক সময় পরিচয় জ্ঞাপক কয়েক ছত্র বা নির্মাতার নাম ও নির্মাণ তারিখ বাংলা লিপিতে লেখা হয়েছে। এই বইয়ে এই বিষয়গুলো বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। মো. শওকত নবী বলেন, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জাদুঘর ও সংগ্রহশালা। এটি বাংলাদেশের ঐতিহাসিক, প্রতœতাত্ত্বিক, নৃ-তাত্ত্বিক, শিল্পকলা ও প্রাকৃতিক ইতিহাস সম্পর্কিত নিদর্শনাদি সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রদর্শন ও গবেষণার উদ্দেশে প্রতিষ্ঠিত একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান। কাঠমান্ডুতে মঞ্চস্থ মুক্তিযুদ্ধের নাটক মৃত্তিকার ফুল ॥ স্টাফ রিপোর্টার মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুতে জমকালো নাট্যোৎসবে মঞ্চস্থ হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের নাটক ‘মৃত্তিকার ফুল’। মুন্সীগঞ্জের ‘অন্বেষণ বিক্রমপুরর’ এই নাটকের মধ্য দিয়ে ফুটে উঠেছে বাঙালীর বীরত্বগাঁথা। এই নাটক এতটাই মুগ্ধ করেছে যে উপস্থিত দর্শক দাঁড়িয়ে সম্মান প্রদর্শন করে। ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী সুস্মিতা মল্লিক নিপুন অভিনয়ে ফুটিয়ে তোলে মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্যাগ, প্রতিরোধ এবং বীরত্বগাথার কাহিনী। আর এই নাটকটি মঞ্চস্থ হওয়ার পর বাঙালীর মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘটনা দর্শক হৃদয়ে দাগ কাটে। চোখের জল সংবরণ করতে পেরেছেন এমন দর্শক নেই বললেই চলে। নাটকটি উৎসবে ভিন্ন মাত্রাযুক্ত করে। চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক এই নাট্যোৎসবের উদ্বোধনীতে শনিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় মঞ্চস্থ হয় সারা জাগানো এই নাটক। এতে বাংলাদেশসহ ১২টি দেশ অংশগ্রহণ করছে। এর আগে নাট্যোৎসবের পর্দা উঠে আকর্ষণীয় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে। সকাল ৯টায় বর্ণাঢ্যর‌্যালি নেপালের রাজপথ প্রদক্ষিণ করে। পরে আকশারা স্কুল মিলনাতায়নে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। বাংলাদেশসহ অংশগ্রহণকারী সকল দেশের আনুষ্ঠানিক পতাকা উত্তোলেনের মধ্য দিয়ে একে একে বেজে সব দেশের জাতীয় সঙ্গীত। অংশগ্রহণকারী দেশগুলো থেকে আনা হয়েছে মাটি। এই সকল মাটি একত্রিত করে সেখানে রোপণ করা হয় বৃক্ষ। উদ্বোধনীতে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষাবীদ প্রফেসর ড.অভি সুবেদীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন। এই উৎসবে বাংলাদেশ থেকে অংশ নিচ্ছে মুন্সীগঞ্জের ‘অন্বেষণ বিক্রমপুর।’ বাংলাদেশ মহান মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক নাটক “মৃত্তিকার ফুল (ফ্লাওয়ার অফ দ্যা সয়েল)” মঞ্চস্থ হওয়ার পর মিলনায়তন ভর্তি শতশত দর্শকের উচ্ছাসিত প্রশংসা ছিল মুখে মুখে। ৯ম শ্রেণীর ছাত্রী সুস্মিতা মল্লিকের অনবদ্য অভিনয়ে ফুটে উঠে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ। ৩০ মিনিটের এই নাটকের কয়েকটি দৃশ্যে ছিল তার বোন শ্রাবণী মল্লিক। নাটকটির রচনা ও নির্দেশনায় রয়েছেন নাট্যকার জাহাঙ্গীর আলম ঢালী। নাটকটির নেপথ্য কণ্ঠও ছিল তার। আর আবহ সংগীতে ছিলেন মাহামুদুল হাসান অপু। দ্বিতীয় কাঠমান্ডু অকসারা ইন্টারনেশনাল চিল্ড্রেন্স থিয়েটার ফেস্টিবেলে বাংলাদেশ ছাড়াও অংশ নিচ্ছে- ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, ডেনমার্ক, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, রাশিয়া, স্লোভেকিয়া, সুইজারল্যান্ড, ভেনেজুয়েলা ও স্বাগতিক নেপাল।
×