ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২৮ মে ২০১৮

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ সরকারের আর্থিক অনুদানে প্রতিষ্ঠিত সুদৃশ্য বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি ছিল অত্যন্ত উষ্ণ ও আন্তরিকতাপূর্ণ। উল্লেখ্য, ভবনটি দুই বাংলা তথা দুই প্রতিবেশী দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, গবেষণা ও পারস্পরিক বুদ্ধিবৃত্তিক জ্ঞানচর্চার সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করবে। জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে ভবনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি উপস্থিত ছিলেন। এ রকম একটি সুন্দর ও সুচারু অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দুই প্রতিবেশী দেশের আদি ও অকৃত্রিম বন্ধুপ্রতিম সম্পর্কের পুনরুক্তি করে বলেন, মাঝে মাঝে উদ্ভূত কিছু সমস্যা ও টানাপোড়েন থাকলেও বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবেই সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। উল্লেখ্য, ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিন বিরাজমান সীমান্ত ও ছিটমহল সমস্যার সুষ্ঠু সমাধানের পর তিস্তা ও মনু নদীর জলবন্টন সমস্যাটি ঝুলে আছে। অন্যদিকে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা দশ লক্ষাধিক ছিন্নমূল রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার সমাধানে ভারতের সাহায্য-সহযোগিতাও কামনা করেন প্রধানমন্ত্রী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী এ সময়ে বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে তার দেশ সর্বদাই পাশে থাকবে বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। অন্যদিকে পশ্চিবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্ক পদ্মা-মেঘনা-যমুনার মতো। তিনি যদি এর সঙ্গে তিস্তা নদীর প্রসঙ্গটি জুড়ে দিতেন, তাহলে সর্বাঙ্গসুন্দর হতো অবশ্যই। তবে সার্বিক বিচারে বাংলাদেশ ভবনের আনুষ্ঠানিক ও আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনের বাইরে যে আনন্দমুখর ও অকৃতিম বন্ধুতার ছাপ ফুটে উঠেছে, তাতে সঙ্গত কারণেই আশা করা যেতে পারে যে, অচিরেই তিস্তা ও মনু নদীর ন্যায্য পানি বণ্টন সমস্যার সমাধান হবে। পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসনেও ভারত সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসবে। ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকার তিস্তার উজানে বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ নির্মাণ করে পানির প্রবাহ অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার ফলে একদার প্রমত্তা নদীটির বর্তমানে করুণ দশা। বাংলাদেশ অংশে তিস্তার যে মুমূর্ষু অবস্থা প্রত্যক্ষ করা যায়, তাতে একে ‘মৃৎবত’ নদী ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। সে অবস্থায় তিস্তা নদী রক্ষার লক্ষ্যে এবং সেচ প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে ভারতকে ন্যায়সঙ্গত পরিমাণ পানি ছাড়তে দিল্লীকে দীর্ঘদিন থেকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে ঢাকা। সত্যি বলতে কী, তিস্তা চুক্তি এখন বাংলাদেশের এক বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষের জীবন-মরণের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশ ভারতের শুধু নিকট প্রতিবেশীই নয়; বরং দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত অকৃত্রিম বন্ধু ও সুহৃদ। দিল্লী বাংলাদেশের কাছে করিডর, ট্রান্সশিপমেন্ট, শুল্কমুক্ত পণ্য পরিবহন ও বাণিজ্য সুবিধাসহ যখন যা চেয়েছে, তখনই তা পেয়েছে সহজে। ১৯৭১-এর মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে ভারতের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন ও সহযোগিতা সর্বদাই স্মরণ করা হয়ে থাকে। সে তুলনায় বাংলাদেশের চাহিদা ও প্রাপ্তি অনেক কম। উদাহরণত বলা যায়, উজানে পানির প্রবাহ ও প্রাপ্তির কথা। ভারত কোন অবস্থাতেই আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও আইনকানুন ভঙ্গ করে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তাসহ অভিন্ন নদ-নদীর পানির স্বাভাবিক প্রবাহ অবরুদ্ধ করতে পারে না। অথচ ভারত তাই করেছে প্রথমে গঙ্গা এবং পরে তিস্তা ও অন্যান্য নদ-নদীতে বাঁধ ও ব্যারাজ নির্মাণ করে। সর্বশেষ ব্রহ্মপুত্রেও বাঁধ নির্মাণের কথা শোনা গেছে। বাংলাদেশ এসব ক্ষেত্রেই ন্যায়ানুগ ও যুক্তিসঙ্গত প্রতিবাদ জানিয়েছে। তবে দুঃখজনক হলো গঙ্গার পানি নিয়ে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও অন্যান্য ক্ষেত্রে তা হয়নি; বরং ঝুলে আছে দীর্ঘদিন থেকে। বর্তমান সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার প্রথম দিকে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে তিস্তা চুক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। তবে শেষ মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সফর বাতিল করায় তা আর হয়ে ওঠেনি। অভিযোগ রয়েছে তিনি তিস্তা চুক্তির ব্যাপারে আদৌ আগ্রহী নন। তদুপরি বর্তমানে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের সঙ্গে তার খারাপ সময় যাচ্ছে। সে অবস্থায় ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ‘গুজরাল ডকট্রিনের’ মতো প্রয়োজনে পশ্চিমবঙ্গকে পাশ কাটিয়ে তিস্তা চুক্তি সম্পাদন করতে পারে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়। পাশাপাশি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক পুনর্বাসনে ভারতের সর্বাত্মক সহযোগিতা একান্তভাবে কাম্য।
×