ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাঠ্যপুস্তকে তামাকের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হবে ॥ নাহিদ

৯০% শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে সিগারেটের দোকান

প্রকাশিত: ০৪:২৬, ২৮ মে ২০১৮

৯০% শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে সিগারেটের দোকান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তামাকের কুফল সম্পর্কে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি এবং শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে পাঠ্যপুস্তকে তামাকের ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। স্কুলের আশপাশের দোকানে সিগারেটসহ তামাক ও তামাকজাত পণ্য বিক্রি বন্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে বলেও জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী। রবিবার ঢাকায় সিরডাপ মিলনায়তনে ‘প্রজ্ঞা তামাক নিয়ন্ত্রণ সাংবাদিকতা পুরস্কার’ প্রদান এবং বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় শিক্ষামন্ত্রী একথা বলেন। বেসরকারী গবেষণা সংস্থা প্রজ্ঞা এবং এ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলাদেশে ৩১ মে বিশ^ তামাকমুক্ত দিবস উদযাপন করা হবে। এবারের প্রতিপাদ্য ‘তামাক ও হৃদরোগ’। তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা জানায়, বাংলাদেশের স্কুলের আশপাশের ৯০ শতাংশ দোকানে সিগারেটসহ বিভিন্ন তামাক ও তামাকজাত পণ্য বিক্রি করা হয়। তাই তামাকের ব্যবহার কমাতে পাবলিক প্লেসে ধূমপান বন্ধে কঠোর আইনের সঠিক বাস্তবায়নের পাশাপাশি সিগারেটের দাম বাড়ানোর দাবি জানায় সংগঠনটি। অনুষ্ঠানে ‘তামাক ও হৃদরোগ’ বিষয়ক এক উপস্থাপনায় প্রজ্ঞার কো-অর্ডিনেটর হাসান শাহরিয়ার নানা তথ্য তুলে ধরেন। ‘তামাক ও হৃদরোগ’ বিষয়ক উপস্থাপনায় বলা হয়, তামাকজনিত মহামারী প্রতি বছর বিশ্বের ৭০ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়। পরোক্ষ ধূমপানে মারা যায় ৯ লাখ মানুষ। বিশ্বের এক নম্বর মরণব্যাধি হৃদরোগ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে প্রতিবছর সারা বিশ্বে ২০ লাখ মানুষ তামাক ব্যবহারের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আর বাংলাদেশে যত মানুষ হৃদরোগে মারা যান তার ৩০ শতাংশ তামাক ব্যবহারের কারণে। এ সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। গবেষণার তথ্য-উপাত্ত দেখিয়ে বলা হয়, অধূমপায়ীদের তুলনায় ধূমপায়ীদের হার্ট এ্যাটাকের ঝুঁকি দ্বিগুণ, স্ট্রোকের ঝুঁকি তিনগুণ, বুকে ব্যথা ঝুঁকি ২০ গুণ। দিনে একটি করে সিগেরেট খেলেও হৃদরোগের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, বাংলাদেশে হৃদরোগজনিত মৃত্যুর ৩০ শতাংশের দায়ী ধূমপান তথা তামাক ব্যবহার। বাংলাদেশে তামাকের উচ্চ ব্যবহার ঝুঁকির মাত্রা আরও বাড়িয়েছে বলে আশঙ্কা করেন বক্তারা। দেশের মোট প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার প্রায় ৪৩.৩ শতাংশ (৪ কোটি ১৩ লাখ) তামাক ব্যবহার করেন। টোব্যাকো এ্যাটলাসের ২০১৬ তথ্যানুযায়ী, মধ্যম সারির মানব উন্নয়ন সূচকে অবস্থানকারী অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে তামাক ব্যবহারজনিত রোগে মৃত্যুর হার ২৫.৫৪ শতাংশ বেশি। অনুষ্ঠানে একাধিক বক্তা সচেতনতার জন্য পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় কিনা সে বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পাঠ্যপুস্তকে মাদকের কুফল সম্পর্কে উল্লেখ আছে। তামাকের বিষয়টি আলাদাভাবে উল্লেখ নেই। এই বছরের পাঠ্যপুস্তক ছাপানো শেষ। আগামীর পাঠ্যপুস্তকে তামাক ব্যবহারের ক্ষতিকর বিষয়গুলো স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীদের হাতে যে সব পাঠ্যপুস্তক যাবে তাতে সিগারেটসহ তামাকের ক্ষতিকর দিক নিয়ে আলাদাভাবে লেখা থাকবে। তামাক নিয়ে সরকারের কার্যক্রম বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, সরকার এই নিয়ে কাজ করছে। এখন অনেক জায়গায় ইচ্ছা করলেই ধূমপান করা যায় না। আমি মনে করি তামাক নিয়ে দেশে একটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে। তবে আমাদের আরও পদক্ষেপ নিতে হবে। কঠোর হতে হবে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী। এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা অর্থমন্ত্রীর কাছে দেয়ার জন্য আয়োজকদের আহ্বান জানান। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাঁচানোর জন্য, দেশকে রক্ষার জন্য তামাককে ত্যাগ করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে কোন তামাক পণ্যের দোকান যাতে বসতে না পারে সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক বলেন, জাতিকে সুস্থ রাখতে হবে এবং সচেতন থাকতে হবে। যুব সমাজকে বোঝাতে হবে যাতে তারা এই তামাক সেবন না করে। এ পথে পা না বাড়ায়। ২০৪০ সালে তামাকমুক্ত করার যে ঘোষণা প্রধানমন্ত্রী দিয়েছেন তার বাস্তবায়নে এখন থেকেই নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হবে বলেও জানান তিনি। বিশিষ্ট সাংবাদিক মোজাম্মেল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব খায়রুল আলম শেখ, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় যক্ষ্মা নিরোধ সমিতির সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টু, এন্টি-টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্সের আহ্বায়ক মর্তুজা হায়দার লিটন এবং প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন এন্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স আত্মার কো-কনভেনর নাদিরা কিরন। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত পাঁচ সাংবাদিকের হাতে পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, সার্টিফিকেট ও ৫০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন। বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ‘প্রজ্ঞা তামাক নিয়ন্ত্রণ সাংবাদিকতা পুরস্কার’ ২০১৮ বিজয়ীরা হলেন : সেরা জাতীয় প্রিন্ট/অনলাইন মিডিয়া বিভাগে যুগ্মভাবে দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের বিশেষ প্রতিনিধি দৌলত আক্তার মালা ও কালের কণ্ঠের সিনিয়র রিপোর্টার আবুল কাশেম, সেরা টিভি রিপোর্টে এনটিভির এস এম আতিক, সেরা স্থানীয় পত্রিকা রিপোর্টে দৈনিক সিলেটের ডাক-এর চীফ রিপোর্টার সিরাজুল ইসলাম এবং জুরি বোর্ডের মনোনয়নে বিশেষ বিভাগে পুরস্কার পেয়েছেন বরিশাল থেকে প্রকাশিত দৈনিক কীর্তনখোলার গোলাম মর্তুজা জুয়েল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের পূর্বেই বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার যে ঘোষণা দিয়েছেন তা বাস্তবায়নের জন্য কিছু সুপারিশও করেছেন সংগঠনটি। এর মধ্যে, তামাকপণ্যের বিজ্ঞাপন প্রচারে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারাসমূহ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা।
×