ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কী আছে সালাহর ভাগ্যে!

প্রকাশিত: ০৪:২২, ২৮ মে ২০১৮

কী আছে সালাহর ভাগ্যে!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ মোহাম্মদ সালাহ, তার পায়ের জাদুতেই ২৮ বছর পর বিশ্বকাপের টিকেট কেটেছে মিসর। রাশিয়া বিশ্বকাপেও তার কাঁধেই ছিল অধিনায়কের ভার। এখন সেই অধিনায়কের কাঁধই হতে পারে মিসরের ফুটবলভক্তের সম্ভাব্য দুঃখের কারণ। উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনালে পাওয়া কাঁধের চোটে শঙ্কা জেগেছে মিসরীয় ফরোয়ার্ডের বিশ্বকাপে খেলা নিয়েই। শনিবার উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ফাইনাল ম্যাচের ২৫তম মিনিটে রিয়াল মাদ্রিদ অধিনায়ক সার্জিও রামোসের ট্যাকলে চোট পান লিভারপুল ফরোয়ার্ড সালাহ। ব্যথায় কাতরে মাঠেই শুয়ে পড়েন মিসরীয় ফরোয়ার্ড। ফিজিও এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে মাঠের বাইরে নিয়ে যান। আর ম্যাচে ফেরা হয়নি তার। পরবর্তী সময়ে লিভারপুল মেডিক্যাল টিমের করা এক্সরে প্রতিবেদনে জানা যায়, কাঁধের জোড়াই নড়ে গেছে সালাহর। কাঁধের এই চোট থেকে পরিপূর্ণভাবে সেরে উঠতে সালাহকে ১২-১৬ সপ্তাহ বিশ্রামে থাকতে হবে। এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট পাওয়া না গেলেও লিভারপুল দলের চিকিৎসকদের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের সূত্র ধরেই আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে, সালাহর বিশ্বকাপ স্বপ্নই শেষ। রাশিয়া বিশ্বকাপের পর্দা উঠতে আর মাত্র ১৭ দিন বাকি। ১৫ জুন নিজেদের প্রথম ম্যাচে উরুগুয়ের মুখোমুখি হবে সালাহর মিসর। এর মাঝে সুস্থ হয়ে মাঠে ফেরাটা রীতিমত অসম্ভব বলেই মনে করছে ফুটবল বোদ্ধারা। লিভারপুল কোচ জার্গেন ক্লপও ম্যাচ পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বললেন, ‘এটা আসলেই গুরুতর ইনজুরি। দেখে-শুনে ভাল মনে হচ্ছে না।’ তবে কাঁধে আঘাত পেলেও আসন্ন বিশ্বকাপ ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে সালাহ খেলতে পারবেন বলে জানালেন মিসরের জাতীয় দলের চিকিৎসক মোহাম্মদ আবুল এলা। তিনি জানান, সালাহ ইনজুরিতে পড়লেও নির্দিষ্ট সময়েই সুস্থ হয়ে উঠবেন এবং বিশ্বকাপে খেলতে সক্ষম হবেন। তার মতে বেশ লম্বা সময় সালাহকে বিশ্রাম ও চিকিৎসা নিতে হবে। মিসরের জাতীয় দলের চিকিৎসক মোহাম্মদ আবুল এলা বলেন, ‘লিভারপুলের কর্মকর্তারা সালাহর এক্স-রে করিয়েছেন। তারা যে রিপোর্ট দিয়েছেন তাতে মনে হচ্ছে বিশ্বকাপে খেলতে সালাহর কোন সমস্যা হবে না।’ মিসরীয় ফুটবল এ্যাসোসিয়েশন এক টুইটবার্তায় জানিয়েছে, তারা লিভারপুলের মেডিক্যাল টিমের সঙ্গে সালাহর বিষয়ে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। এদিকে ফাইনাল শেষে সালাহ’র জন্য শুভকামনা জানিয়েছেন রামোস। লিভারপুলের মিসরীয় তারকার জন্য সমবেদনা জানিয়ে রামোস টুইট করেছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘অনেক সময় ফুটবল তোমাকে ভাল দিক দেখাবে, আবার কোন সময় খারাপ দিক। সর্বোপরি আমরা সবাই সতীর্থ। দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠো সালাহ, ভবিষ্যত তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।’ তবে রামোসের ওপর ভীষণ ক্ষেপেছেন মিসরীয় সাবেক ফুটবল তারকা আহমেদ হোসাম মিদো। ঘটনার পর পরই এক টুইটে মিদো বলেন, ‘যারা ফুটবল খেলা বোঝে তাদের সবার কাছে পরিষ্কারÑ রামোস এটি ইচ্ছা করেই করেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এমন পরিস্থিতিতে যে কোন খেলোয়াড় তার হাত সরিয়ে নিতে সক্ষম। কিন্তু রামোস সালাহর হাতকে ধরে রেখেছিল।’ তবে অনেকে আবার বলছেন, ওই ফাউলে রামোসের কোন দোষ নেই। এর পেছনে তাদের যুক্তি বল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সময় সালাহই আগে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে পাওয়া বিভিন্ন এ্যাঙ্গেলের ভিডিও ফুটেজকে তারা প্রমাণ হিসেবে হাজির করছেন। যুক্তি হিসেবে বলছেন, বল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার পথে সালাহই আগে হাত বাড়ান। পরবর্তী সময়ে চলমান অবস্থায় রিয়াল অধিনায়ক পড়ে গেলে তার শরীরের মাঝে সালাহর হাত আটকে যায়। এ কারণে গুরুতর চোট পান সালাহ। এই ইস্যুতে শুধু রিয়াল মাদ্রিদ সমর্থকদেরই নন, রামোস তার পক্ষে পাচ্ছেন সাবেক দুই ইংলিশ ফুটবলার ফ্র্যাঙ্ক ল্যাম্পার্ড ও রিও ফার্ডিনান্ডকেও। তারা দাবি করছেন, সালাহকে করা ওই ট্যাকলে রিয়াল অধিনায়ক রামোসের কোন দোষ নেই; বরং ওই ট্যাকলিংয়ের জন্য রামোসকে দোষী সাব্যস্ত করে অবিচারই করা হচ্ছে তার সঙ্গে। রামোসের করা ফাউলটি অন্য সাধারণ ফাউলের মতো বলেই মনে করেন ল্যাম্পার্ড। তবে ফাউলের পরিণতিটা দুর্ভাগ্যজনক ছিল বলে মন্তব্য করেন তিনি। এ নিয়ে ল্যাম্পার্ডের ভাষ্য, ‘আমার মনে হয় না, এতে রামোসের কোন দোষ ছিল। সে অন্য সাধারণ ট্যাকলের মতোই সালাহর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে যায়। অন্যান্য সাধারণ ফাউলে এমনটাই হয়। তবে এটা দুর্ভাগ্য যে, ফাউলের পরিণতিটা এমন হলো।’ ফার্ডিনান্ডের ভাষ্য, ‘এই দুটি ঘটনাকে এক করে দেখার কিছু নেই, বিচ্ছিন্ন দুটি ঘটনা। আমি মনে এটি খুবই ভাল মানের ডিফেন্ডিং ছিল। আমার মনে হয় না, সালাহকে আঘাত দেয়ার জন্য ফাউল করেছে র‌্যামোস।’
×