ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ-আফগানিস্তান টি২০ সিরিজ ॥ মঙ্গলবার দেরাদুন যাবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

মাহমুদুল্লাহর ভাবনায় শুধুই জয়

প্রকাশিত: ০৪:২১, ২৮ মে ২০১৮

মাহমুদুল্লাহর ভাবনায় শুধুই জয়

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি২০ সিরিজে লক্ষ্য কী? সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের সহঅধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের কাছে প্রশ্নটি ছুড়ে যেতেই বলে দিলেন, ‘অবশ্যই সিরিজ জেতা। আমাদের ওয়ান এ্যান্ড অনলি টার্গেট।’ ভারতের দেরাদুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। ৩, ৫ ও ৭ জুন যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় টি২০ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। সিরিজের জন্য এরই মধ্যে বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা দেশে প্রস্তুতি সেরে নিয়েছেন। মঙ্গলবার দেরাদুনে যাবে দল। সেখানে চারদিন প্রস্তুতি নিয়ে সিরিজে খেলতে নামবে বাংলাদেশ দল। দেশ ছাড়ার আগে রবিবার ছিল সিরিজপূর্ব সংবাদ সম্মেলন। কিন্তু এ সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক সাকিব আল হাসান উপস্থিত থাকতে পারেননি। তিনি যে আইপিএলের ফাইনালে খেলবেন। তাই সহঅধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন। হাজির হয়েই সিরিজ জয়ের লক্ষ্যের কথা স্পষ্টই জানিয়ে দেন তিনি। শুরুতেই অবশ্য দলে যে ব্যাটিং কোচ নেই, তা নিয়েই উঠল প্রশ্ন। চন্দিকা হাতুরাসিংহে নবেম্বরে প্রধান কোচের পদ ছাড়ার পর থেকে ব্যাটিং কোচের পদও শূন্য। ব্যাটসম্যানরা কী ঠিকমতো নিজেদের প্রস্তুতিটা সারতে পারছেন? মাহমুদুল্লাহ জানান, ‘যেদিন আমাদের ক্যাম্প শুরু হয় মাশরাফি ভাই ছিল, তামিম, মুশফিক ছিল। এমনকি ব্যাটসম্যানদের গ্রুপে যারা ছিল আমরা প্রত্যেকেই কথা বলেছি। আমরা মনে করি এটা আমাদের জন্য বড় একটা সুযোগ। কতটুকু নিজেরা নিজেদের দায়িত্ব নিয়ে সামনে এগোতে পারি। যদিও ওয়ালশ আছে, সুজন ভাই আছে। উনারা সাহায্য করছেন।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমি গত পরশু যখন নেটে ব্যাটিং করছিলাম অনেক বেশি তাড়াহুড়া করছিলাম। তখন ওয়ালশ এসে আমাকে সাজেশন দিল, তুমি তোমার টাইমিংটার ওপর আরও একটু রিলাই কর। ছোটখাটো এমন উপদেশও দিচ্ছেন। ওটা আমার কাজেও লেগেছিল। সবাই সাহায্য করছে। এখন এটা আমাদের দায়িত্ব, এই দায়িত্ব নিয়ে আমরা যেন সেরা পারফর্মেন্সটা করতে পারি।’ সিরিজটি টি২০। মাশরাফি বিন মর্তুজাও নেই। পেস বোলিং অলরাউন্ডারের অভাব আছে। এ অভাব মাহমুদুল্লাহও বোধ করছেন। তবে সৌম্য ও আরিফুলের ওপর ভরসাও করছেন, ‘অলরাউন্ডারদের ভূমিকা তো আসলে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে পেস বোলিং অলরাউন্ডারটা দলের ব্যালেন্সটা আরও ভাল করে দেয়। আমাদের আরিফ আছে, সৌম্য আছে। তাদের এখানে ভাল সুযোগ। নিদাহাস ট্রফিতেও সৌম্য খুব ভাল বোলিং করেছে। সৌম্যর ওই স্পেলটা অনেক ভাল ছিল। এর বাইরে আরিফুলও এই পর্যায়ের জন্য যথেষ্ট ক্যাপাবল। তাদের দুইজনের ওপর আমরা আস্থা রাখতে পারি।’ টি২০তে কেমন চ্যালেঞ্জ থাকে? প্রশ্নটি উঠতেই মাহমুদুল্লাহর জবাব, ‘আমি এই জিনিসটা খুব সিম্পলভাবে নেই। র‌্যাঙ্কিংয়ের কথাই ধরি, র‌্যাঙ্কিংয়ে ওরা আট নম্বর, আমরা দশ নম্বর। আমি চ্যালেঞ্জটা যেভাবে দেখি, প্রতিটি টি২০ ম্যাচ আমরা যখন খেলি, ওটা আমাদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। কিছুদিন আগেও আমাদের সামনে প্রশ্নবোধক একটা চিহ্ন ছিল। এখন ওটা আমাদের সামনে থেকে সরে গেছে। ডে বাই ডে আমরা ইমপ্রুভ করছি। এই সিরিজটি আরও একটা সুযোগ, প্রতিটি ম্যাচ জেতার। এই সিরিজটা জিততে পারলে পরবর্তী সবসিরিজের জন্য দারুণ সুযোগ তৈরি হবে।’ দেরাদুনে স্পিনাররা বড় ভূমিকা রাখতে পারেন। মাহমুদুল্লাহ এ নিয়ে বলেন, ‘যখন আমরা অনুশীলন করি কিংবা নেটে ব্যাটিং করে আসি তখন আমার সঙ্গে মুশফিক কিংবা তামিম বসে আছে। ইভেন সাব্বিরসহ যারাই আছে আমরা যখন বসে থাকি তখন বিষয়টা নিয়ে কথা বলি। আলোচনা করি রশিদকে নিয়ে। কারণ আমরা সবাই জানি টি২০ ক্রিকেটে রশিদ (খান) বিশ্বের সেরা বোলার। অবশ্যই তাকে সমীহ করতে হবে। আমার মনে হয় আমাদের শক্তির জায়গাটা বোঝা দরকার, আমরা কে কিভাবে ক্রিকেট খেলি। প্রতিপক্ষের শক্তির জায়গার ব্যাপারেও ধারণা থাকা উচিত। ওই বেসিস করে ক্যালকুলেটিভ রিস্ক নিয়ে যার যার শক্তি অনুযায়ী আমাদের ক্রিকেট খেলতে হবে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘আবার জিনিসটা যদি এভাবে দেখি রশিদ অনেক ভাল বোলার। তাকে খেলাই যাবে না। এটা ভাবা যাবে না। আমরা বল দেখব, বল যদি আমাদের জোনে থাকে তাহলে অবশ্য স্কোরিং শট খেলব। তারপরও বলব ওদের বোলিং আক্রমণটা অনেক ভাল। আমাদের ব্যাটসম্যনাদের অনেক বেশি সচেতন থাকতে হবে। ব্যাটসম্যানরা যদি নিজেদের সেরা খেলাটা খেলতে পারে তাহলে ইতিবাচক রেজাল্ট আশা করতে পারি।’ লেগস্পিনার রশিদ খান যেন আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইপিএলে এমন চমকই দেখিয়েছেন, ব্যাটসম্যানরা কাঁপছেন। মাহমুদুল্লাহ রশিদকে এত বেশি আমলে নিতে রাজি নন, ‘অবশ্যই উনি ভাল বোলার। ভাল ক্রিকেট খেলছেন উনি। আমাদেরও সেভাবেই প্রস্তুতি নিতে হবে। জিনিসগুলো অনেক বেশি সিম্পল রাখা দরকার। আমরা নিজেরা কি করতে পারি, ওটার দিকে যদি আমরা বেশি ফোকাস রাখতে পারি, তাহলে আমাদের জন্যই ভাল হবে।’ সাকিব আল হাসান ও রশিদ খান আইপিএলে একই দলে খেলেছেন। সানরাইজার্স হায়দরাবাদে। তবে রশিদ সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ কুড়িয়েছেন। রশিদকে যেহেতু একেবারে কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে সাকিবের, তাই সাকিবের পরামর্শ বিশেষ কাজে লাগবে বলেই মনে করছেন মাহমুদুল্লাহ, ‘সাকিব নেটে রশিদকে খেলেছে। খুব কাছ থেকে রশিদের বলও দেখেছে। ওর কাছ থেকে হয়তো আমরা সাজেশন পাব। ওর সঙ্গে কথা বললে ওর চিন্তাটা সম্পর্কেও আমরা জানতে পারব। রশিদের ব্যাপারে সাকিবের কাছ থেকে অবশ্যই ছোটখাটো বিষয়গুলো নেয়ার চেষ্টা করব। আমার মনে হয় ওই তথ্যগুলো আমাদের অনেক সাহায্য করবে দল হিসেবে।’ সেই সঙ্গে আফগানিস্তান দলটি নিয়ে মাহমুদুল্লাহ জানান, ‘আপনি যদি নতুন দলগুলোর দিকে তাকান, সেক্ষেত্রে সবার চেয়ে এগিয়ে আফগানিস্তান। তারা খুব ভাল করছে। ক্রিকেটের জন্য নতুন দলের উন্নতি ভাল লক্ষণ। আমাদের জন্য এটা অন্যরকম চ্যালেঞ্জের। আমাদের রেপুটেশন ধরে রাখতে জয়ের বিকল্প নেই। আশাকরি ভাল ক্রিকেট খেলে আমরা সিরিজ জিতে আসতে পারব।’ ব্যাটিং শক্তিতে কী আফগানিস্তান থেকে এগিয়ে থাকছে বাংলাদেশ? মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘এটা বলা খুব কঠিন। আমাদের ব্যাটিং শক্তি একরকম। অবশ্যই আমাদের ব্যাটিং গভীরতা এবং অভিজ্ঞতা ওদের চেয়ে এগিয়ে। ওদেরও টি২০ পারফর্মেন্স খুব ভাল। বোলিং খুবই ভাল। তারকা ক্রিকেটারও আছে। দুইটা টিমের শক্তির জায়গা দুইরকম। যেটা আগে বললাম, খুব ভাল ক্রিকেট খেলতে হবে। এর বাইরে সহজ কোন অপশন নেই।’ বাংলাদেশ না আফগানিস্তান, কাদের এগিয়ে রাখবেন? মাহমুদুল্লাহ বলেন, ‘আগেও বললাম, দুইটা দলের শক্তির জায়গা দুইরকম। যদি পেস আক্রমণ দেখেন, ওদের চেয়ে আমাদের পেস আক্রমণ বেশি সমৃদ্ধ। রুবেল, মুস্তাফিজ অনেকদিন ধরে ক্রিকেট খেলছে। তারা জানে কিভাবে চাপ নিতে হয়। এছাড়া তরুণদের মধ্যে রনি, রাহি খুব ভাল বোলার। যদি স্পিনের কথা বলেন, সাকিব বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলার। বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে সেরা। অপু ভাল করছে। ওদের স্পিন যদি দেখেন, রশিদ আছে, মুজিব আছে। দুইটা তুলনা করা কঠিন। তারপরও আমি বলব আমাদের বোলিং আক্রমণটা অনেক সমৃদ্ধ, যদি অভিজ্ঞতার কথা চিন্তা করেন।’
×